ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের ওপর হামলার প্রতিবাদ জানিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনপিপন্থি শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দল। রোববার (২ অক্টোবর) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষকরা এ প্রতিবাদ জানান। 

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাদা দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক লুৎফর রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. এবিএম ওবায়দুল ইসলাম, সাদা দলের যুগ্ম-আহবায়ক অধ্যাপক সিদ্দিকুর রহমান খান প্রমুখ।

অধ্যাপক ড. মো. লুৎফর রহমান বলেন, ২৭ সেপ্টেম্বর জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা কমিটির নেতাকর্মীদের উপাচার্যের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতের পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি ছিল। উপাচার্যের সঙ্গে দেখা করতে এলে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ছাত্রদল নেতাকর্মীদের ওপর সশস্ত্র হামলা চালান। 

তিনি বলেন, হামলায় ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি খোরশেদ আলম সোহেল, সাধারণ সম্পাদক আরিফুল ইসলামসহ অন্তত ১৫ জন নেতাকর্মী গুরুতর আহত হন। আহত নেতাকর্মীরা রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

তিনি আরও বলেন, আমরা প্রত্যাশা করেছিলাম যে, উপাচার্যের সঙ্গে ছাত্রদলের সাক্ষাৎ কর্মসূচি নিরাপদ ও নির্বিঘ্ন করার লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন প্রয়োজনীয় ও যথাযথ ব্যবস্থা নেবে। এটি প্রশাসনের দায়িত্ব ছিল বলেই আমরা মনে করি। কিন্তু আমরা অত্যন্ত পরিতাপের সঙ্গে দেখলাম যে, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাদের সেই দায়িত্ব পালন করেনি। 

অধ্যাপক ড. মো. লুৎফর রহমান বলেন, আমরা মনে করি, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডি সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ হয়েছে। তাদের এ ব্যর্থতার কারণে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা ছাত্রলীগের দুষ্কৃতকারীদের হামলার শিকার হয়ে রক্তাক্ত ও আহত হয়েছেন এবং হাসপাতালে আছেন। আমরা এ হামলার প্রতিবাদ, নিন্দা এবং জড়িতদের বিচারের দাবি জানাচ্ছি।

সাধারণ শিক্ষার্থীরা ছাত্রলীগের নির্যাতনের শিকার হচ্ছে উল্লেখ্য করে তিনি বলেন, কেবল রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী নয়, সাধারণ শিক্ষার্থীরাও আজ প্রতিনিয়ত তাদের (ছাত্রলীগের) নির্মম নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। গেস্টরুম নামক এক অপসংস্কৃতির মাধ্যমে আবাসিক হলগুলোতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের যে নির্যাতন নিপীড়ন করা হচ্ছে, গণমাধ্যমে প্রকাশিত সে সংবাদ আমাদের মর্মাহত করছে। 

তিনি আরও বলেন, আমাদের পক্ষ থেকে বারবার গেস্টরুম নামক মিনি টর্চার সেল বন্ধের দাবি জানানো হলেও এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা আমরা দেখিনি। বিশ্ববিদ্যালয় ও হল প্রশাসনের নির্বিকার ভূমিকার সুযোগে ছাত্রলীগ হল ও ক্যাম্পাসকে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অভয়ারণ্যে পরিণত করে ফেলেছে। 

সাদা দলের এ শিক্ষক বলেন, হলসমূহে তারা (ছাত্রলীগ) ছায়া প্রশাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এক ধরনের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে। কিছুদিন আগে বাংলাদেশের একটি শীর্ষস্থানীয় বাংলা সংবাদপত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলসমূহের বাস্তব চিত্র তুলে ধরেছে। সাধারণ শিক্ষার্থীরা যেখানে হলে একটু মাথা গোঁজার ঠাঁই পান না, সেখানে ছাত্রনেতা নামধারী অছাত্র কীভাবে একটি হলে ফ্রিজ ও এসি লাগিয়ে বাস করছেন? 

লুৎফর রহমান বলেন, দুঃখজনক হলেও সত্য যে, আজ পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো দায়িত্বশীল ব্যক্তি ছাত্রদলের আহত নেতাকর্মীদের দেখতে হাসপাতালে যাননি। এ পরিস্থিতিতে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উত্থাপনের সুযোগ রয়েছে যে, ছাত্রদল নেতাকর্মীদের ওপর ন্যক্কারজনক এ হামলার পরিকল্পনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কি প্রচ্ছন্ন সায় বা মদদ ছিল? গত ২৭ তারিখে যে ঘটনা ঘটেছে, তার পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কী প্রশ্নবিদ্ধ ভূমিকা আড়াল করতে পারবে?

সংবাদ সম্মেলনে সাদা দলের শিক্ষকরা চার দফা দাবি জানান। চার দফা দাবির মধ্যে রয়েছে- ক্যাম্পাসে সব ধরনের সন্ত্রাসী কার্যক্রম বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া, ২৭ সেপ্টেম্বরের হামলায় ছাত্রদলের আহত নেতাকর্মীদের সুচিকিৎসার ব্যবস্থা নেওয়া, ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের ওপর হামলায় জড়িত চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনানুগ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া এবং ক্যাম্পাস ও হলে ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠনসহ সব দল-মতের সহাবস্থান ও নির্বিঘ্নে কর্মসূচি পালনের নিশ্চয়তা বিধান করা।

এইচআর/আরএইচ