বাংলাদেশ এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বিরাজ করছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রয়াত মার্কিন সিনেটর এডওয়ার্ড এম কেনেডির ছেলে এবং যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিবিদ এডওয়ার্ড (টেড) এম কেনেডি জুনিয়র।

সোমবার (৩১ অক্টোবর) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে এক বিশেষ বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মি. পিটার ডি হাস এবং কালচারাল অ্যাফেয়ার্স অ্যাটাচি মিস শার্লিনা মরগান-হুসেন বক্তব্য রাখেন।

এডওয়ার্ড এম কেনেডি জুনিয়র বলেন, বাংলাদেশ এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে গত ৫০ বছর যাবত বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বিরাজ করছে। পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও সহযোগিতার মাধ্যমে বন্ধুত্বপূর্ণ এই দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আগামী ৫০ বছরে আরও শক্তিশালী হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

তিনি বাংলাদেশ এবং যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের দীর্ঘ ইতিহাস তুলে ধরে বলেন, আমার বাবা বাংলাদেশের মানুষ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং ১৯৭১ সালের গণহত্যা সম্পর্কে আমাদের অনেক গল্প শুনিয়েছিলেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে তিনি বিশেষ ভূমিকা পালন করেছিলেন। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বর্বর গণহত্যার বিরুদ্ধে তিনি সাহসী অবস্থান গ্রহণ করেছিলেন। সেসময় মার্কিন পররাষ্ট্রনীতি তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানের পক্ষে ছিল। তবে যুক্তরাষ্ট্রের অধিকাংশ মানুষ বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন। আমার বাবা ১৯৭১ সালে ভারতে শরণার্থী শিবির পরিদর্শনের পর বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বর্বরতার চিত্র তুলে ধরেছিলেন।

যে গণতন্ত্র এবং মানবাধিকারের জন্য বাংলাদেশ রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম করেছে তা অব্যাহত রাখা উচিত বলে মন্তব্য করেন এডওয়ার্ড এম কেনেডি জুনিয়র। মিয়ানমারের শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য তিনি বাংলাদেশ সরকারকেও ধন্যবাদ জানান।

কেনেডি জুনিয়র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে বিশ্বের অন্যতম সেরা বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, আমার বাবা ১৯৭২ সালে এই বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে একটি বটগাছের চারা রোপণ করেছিলেন। বটগাছটি দুই দেশের মানুষের বন্ধুত্বের প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আগামী দিনেও এই গাছ ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মধ্যে বন্ধুত্বের বন্ধন বহন করবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান পিতার মূল্যবোধ সমুন্নত রাখার জন্য এডওয়ার্ড (টেড) এম কেনেডি জুনিয়রকে ধন্যবাদ জানান। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে প্রয়াত মার্কিন সিনেটর এডওয়ার্ড এম কেনেডির অসামান্য অবদানের কথা স্মরণ করে উপাচার্য বলেন, সেসময় বাংলাদেশের পক্ষে তিনি আন্তর্জাতিক জনমত গড়ে তুলেছিলেন।

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেলে পরিণত হয়েছে। 

এডওয়ার্ড (টেড) এম কেনেডির বাংলাদেশ সফরের মাধ্যমে দুই দেশের জনগণের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আরও জোরদার হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

এর আগে এডওয়ার্ড (টেড) এম কেনেডি জুনিয়র তার পিতার রোপণ করা ঐতিহাসিক বটগাছটি সপরিবারে পরিদর্শন করেন। এ সময় তার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন তার স্ত্রী ডক্টর ক্যাথরিন ‌‘কিকি’ কেনেডি, মেয়ে ডা. কেলি কেনেডি, তার ছেলে টেডি কেনেডি, ভাগ্নি গ্রেস কেনেডি অ্যালেন ও ভাগ্নে ম্যাক্স অ্যালেন।

এইচআর/এমএ