মরুভূমির দেশ কাতারে রোববার (২০ নভেম্বর) থেকে শুরু হতে যাচ্ছে ফুটবল বিশ্বকাপ। এই জমকালো আসরকে ঘিরে বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনায় কাটছে ফুটবল ভক্তদের। সেই সঙ্গে বিশ্বকাপ ফুটবল জ্বরে আক্রান্ত গোটা দুনিয়া। সারাবিশ্বের মতো বাংলাদেশেও এখন চলছে বিশ্বকাপের উন্মাদনা। ব্যতিক্রম নয় দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপিঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ক্যাম্পাসও।

ঢাবির বিভিন্ন হলগুলো সেজেছে প্রিয় দলের পতাকায়।  প্রিয় দলের পতাকা টানাতে সমর্থকদের মধ্যে চলছে প্রতিযোগিতা। বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোতে শোভা পাচ্ছে আর্জেন্টিনার আকাশী-নীল, ব্রাজিলের হলুদ-সবুজ পতাকা। এর বাইরে জার্মানি ও পর্তুগালের পতাকাও চোখে পড়ে। শুধু পতাকা টানানোতেই থেমে নেই সমর্থকরা। প্রায়ই রাতে ক্যাম্পাসে ও হলে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা সমর্থকদের মিছিল-স্লোগান শোনা যায়।

এছাড়া দেওয়া হচ্ছে সমর্থক গোষ্ঠীর কমিটি, বিতর্ক আয়োজন ও প্রীতি ম্যাচ ইত্যাদি। দল বেঁধে নিজ নিজ দলের জার্সি পরে অনুরাগীদের ফটোসেশন আর আড্ডা চলে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত। টিএসসি ও হলগুলোতে বড় পর্দায় খেলা দেখার প্রস্তুতিও নেওয়া হচ্ছে। হল পাড়া ও কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে প্রতিদিন বসছে জার্সির দোকান। এছাড়াও অনলাইনেও জার্সি বিক্রি করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। চলছে প্রিয় দলের জার্সি কেনার ধুম, কে কত ভালো মানের জার্সি কিনবেন চলছে সেই প্রতিযোগিতা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলে প্রবেশ করলেই মনে হবে যেন ফুটবল বিশ্বকাপের কোনো ভেন্যু। পুরো হল ছেয়ে গেছে আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিলের পতাকায়। সেই সঙ্গে রয়েছে প্রিয় খেলোয়াড়ের ছবি। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষী সলিমুল্লাহ মুসলিম হলেও একই চিত্র দেখা যায়। এছাড়াও কবি জসিমউদ্দীন হল, স্যার এ এফ রহমান হল ও বিজয় একাত্তরসহ ঢাবির প্রায় সব হলেই ফুটবলের উন্মাদনা দেখা যাচ্ছে। 

কোচ লিওনেল স্ক্যালোনি ও অধিনায়ক লিওনেল মেসির নেতৃত্বেই এবার আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ খরা কাটাবে বলে বিশ্বাস সমর্থকদের। টানা ৩৬ ম্যাচ না হারার রেকর্ডও স্বপ্ন দেখাচ্ছে তাদের। অন্যদিকে ২০০২ সালের পর আর কোন বিশ্বকাপ না জিতলেও এবার নেইমারের নেতৃত্বে ব্রাজিলের ‘হেক্সা মিশন’ পূর্ণ হবে বলে মনে করেন সমর্থকরা। 

মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের শিক্ষার্থী হাবিব রহমান বলেন, ফুটবল বোঝার পর থেকে আমি আর্জেন্টিনার সমর্থক। ২০১৪ সালে বিশ্বকাপ জয়ের খুব কাছে গিয়েও জার্মানির কাছে হেরে ফিরে আসতে হয়েছে। এরপর কোপা আমেরিকা ও ফিনালিসিমায় আর্জেন্টিনা চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। এছাড়া টানা ৩৬ ম্যাচ নেই হারার রেকর্ড। তাই কাতার বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনাকে নিয়ে আমি স্বপ্ন দেখছি। আশা করি চ্যাম্পিয়ন হয়েই বিশ্বকাপের মাঠ ছাড়বেন আমাদের প্রিয় মেসির আর্জেন্টিনা।

সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের শিক্ষার্থী রইস উদ্দিন বলেন, ফুটবল আমাদের আবেগের জায়গা। আমরা ব্রাজিলিয়ান ভক্তরা ফুটবলের এই উন্মাদনা আজ পুরো ক্যাম্পাসের ছড়িয়ে দিয়েছি। আমরা প্রথমে হলে পতাকা টানিয়েছি। আমরা আশাবাদী, এবার চ্যাম্পিয়ন হয়ে হেক্সা মিশন পূর্ণ করবে ব্রাজিল।

শামসুন্নাহার হলের শিক্ষার্থী নুসরাত তাবাসসুম বলেন, ছাত্রীদের হলগুলোতেও ফুটবল বিশ্বকাপের আমেজ পাওয়া যাচ্ছে। খুব বেশি পতাকা টানানো না হলেও সারাক্ষণ আড্ডায় মেতে থাকি আমরা। কমিটিও করার পরিকল্পনা করছি আমরা। আমি ব্যক্তিগতভাবে আর্জেন্টিনা সমর্থক। আশা করি শিরোপা হাতেই বিশ্বকাপ অধ্যায় শেষ করবে মেসি।

গত বিশ্বকাপেও বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে বড় পর্দায় খেলার আয়োজন করে থাকে ছাত্রলীগ। এবারও এমন আয়োজন থাকবে বলে জানিয়েছেন ঢাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন। তিনি বলেন, আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিলের ম্যাচগুলোতে ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে বড় পর্দায় খেলা দেখার সুযোগ পাবেন শিক্ষার্থীরা। আমি ব্রাজিল সমর্থক। ব্রাজিলের এবারের দলটাও খুব শক্তিশালী। আশা করি নেইমারের নেতৃত্বে এবার চ্যাম্পিয়ন হবেন সেলেসাওরা।

এইচআর/কেএ