কষ্ট অনেক আছে। এক বেলা খেয়ে না খেয়ে মেয়েকে বড় করেছি। ওর চাহিদার কথা মাথায় রেখে অনেক শখ-আহ্লাদকে মাটিচাপা দিয়েছি। ওর বাবা মারা যাওয়ার পর কত দুর্বিষহ সময় গেছে বলে বোঝানো যাবে না। এ মেয়েকে ঘিরেই আমার সবকিছু। আজ আমার জন্য সবচেয়ে আনন্দের দিন। আমার মেয়ে এখন গ্র্যাজুয়েট হয়েছে, সব কষ্ট আজ ভুলে গেছি।

এভাবেই স্মৃতিচারণ করছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৩তম সমাবর্তনে অংশ নেওয়া এক ইঞ্জিনিয়ারিং গ্র্যাজুয়েটের মা।

করোনায় দীর্ঘ বিরতির পর ৫৩তম সমাবর্তনের আসরে সেজেছে প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। সমাবর্তনে অংশ নেওয়া গ্রাজুয়েটদের কারও সঙ্গে এসেছেন মা-বাবা, কারও সঙ্গে জীবনসঙ্গী বা সন্তানও এসেছে। সমাবর্তনে অংশ নেওয়া গ্র্যাজুয়েটরা নির্ধারিত স্থানে আসন পেলেও তাদের সঙ্গে আসা অনেকেই বাইরে অপেক্ষা করছেন।

শনিবার (১৯ নভেম্বর) দোয়েল চত্বর, টিএসসি ও কার্জন হলের বাইরে গ্র্যাজুয়েটদের সঙ্গে আসা অভিভাবকদের সঙ্গে কথা হয় ঢাকা পোস্টের।

সমাবর্তনে অংশ নেওয়া আরেক গ্র্যাজুয়েটের অভিভাবক ঢাকা পোস্টকে বলেন, আজ আমার কাছে অনুভূতিটা দুই ভাগে বিভক্ত। একটি আমার মেয়ে সমাবর্তনে অংশ নিচ্ছে এ কারণে, আরেকটি আমরা অনেক বন্ধু আজ একত্রিত হয়েছি। আমি নিজেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলাম। রোকেয়া হলে থাকতাম। এই টিএসসি, দোয়েল চত্বর, কার্জন হল আমার বড় পরিচিত। বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সময়ের শিক্ষার্থী থেকে আজ অভিভাবক। এ অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়। আমার ঘর-বাড়ি সব ফেলে চেনা এই ঠিকানায় ফিরে এসেছি। স্মৃতির বাঁকে বাঁকে উঁকি দিচ্ছে অজস্র প্রিয় মুহূর্ত।

তিনি বলেন, এই লম্বা সময় পাড়ি দিতে গিয়ে অনেক কিছুই পেয়েছি, বিনিময়ে কম কিছু হারাইনি। অনেক হারানোর গল্প আছে, না পাওয়ার স্মৃতি আছে। থাকুক না সেসব আজ। আমাদের চারপাশে তো কতকিছুই ঘটে। তার সবকিছু কি আমরা জানি? কি লাভ বিষাদ বাড়িয়ে।

সমাবর্তনে অংশ নেওয়া আরেক গ্র্যাজুয়েটের বাবা কৃষক আজমত আলীর সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, ছেলেকে মানুষ করতে সব কষ্ট করেছে তার মা। আমি মানুষের জমিতে কাজ করে অর্থ এনেছি কিন্তু সন্তানকে মানুষের মতো মানুষ করেছে তার মা। ওর মা না থাকলে সন্তান এত দূর কখনোই আসতে পারত না। অনেক কষ্ট করে বাচ্চাটাকে মানুষ করেছি। এখন সে ভালো একটা চাকরি পেলে সব দুঃখ শেষ হবে। 

এমএম/এসএসএইচ