দেশে বর্তমানে প্রায় দুই কোটি মানুষ শারীরিক বা মানসিকভাবে বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন। তবে এই বিশাল সংখ্যক মানুষের মধ্যে মাত্র পাঁচ শতাংশ পুনর্বাসনের সুযোগ পায় বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। এর জন্য প্রয়োজনের তুলনায় ফিজিওলজিস্টের সংকটকে দায়ী করেছেন তারা।

শনিবার (৩ ডিসেম্বর) বিকেলে রাজধানীর স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজে ও মিটফোর্ড হাসপাতালে আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবস উপলক্ষে ফিজিক্যাল মেডিসিন অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন বিভাগ আয়োজিত আলোচনা সভায় তারা এসব কথা জানান।

বক্তারা জানান, পুনর্বাসন প্রক্রিয়া মূলত ফিজিওলজিস্টের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়। অথচ আমাদের দেশে ফিজিওলজিস্টের সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে কম। তবে দেশে এ পুনর্বাসনকেন্দ্রের সংখ্যা বাড়ছে জানিয়ে তারা বলেন, দেশে প্রতিবন্ধী ও শারীরিকভাবে অক্ষম ব্যক্তিদের সেবার পরিধি বাড়ছে।

জানা গেছে, সরকারি ব্যবস্থাপনায় ২০০ এর অধিক এবং বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে ১০৩ সেবা ও সাহায্য কেন্দ্র চালু রয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে সব স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে তাদের সেবা দেওয়া হয়। সারা দেশের ৩০ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মধ্যে ১৪টিতে রিহেবিলিটেশন বিভাগ রয়েছে। এছাড়া ছয়টি স্পেশালাইজড হাসপাতাল, আটটি বেসরকারি বেসরকারি হাসপাতাল, ৪০ জেলা সদর হাসপাতাল এবং ৬৪ উপজেলায় রিহেবিলিটেশন সার্ভিস চালু রয়েছে।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. নুরুল হুদা লেনিন বলেন, দেশে ক্রমবর্ধমান হারে প্রতিবন্ধী ও শারীরিকভাবে অক্ষম ব্যক্তির সংখ্যা বাড়ছে। আমরা তাদের প্রতিবন্ধী বা অক্ষম না বলে সাহায্য প্রয়োজন এমন মানুষ বলি। অক্ষম শব্দটি তাদের মানসিকভাবে দুর্বল করে দেয়।

তিনি বলেন, সারাদেশ দেশ থেকে এসব রোগী রাজধানী ঢাকায় আসে। ফলে এত বেশি রোগী হয় যে সামাল দিতে আমাদের হিমশিম খেতে হয়। এ অবস্থায় আমাদের কর্তা ব্যক্তিদের বুঝাতে হবে ফিজিক্যাল মেডিসিনের চিকিৎসা জেলা-উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত ছড়িয়ে দিতে হবে। এতে ঢাকার হাসপাতালগুলোতে চাপ কমবে। রোগীও ভালো সেবা পাবে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে হাসপাতালের পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল কাজী রশিদুজ্জামান বলেন, যেকোনো সময় যেকোনো মানুষ ডিজেবল হতে পারে। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের চলাচলের ক্ষমতা ও চোখের দৃষ্টি কমে আসতে পারে। প্রতিবন্ধী মানেই অটিস্টিক নয়, যেকোনো ডিজেবল ব্যক্তিই প্রতিবন্ধী। যেটা আমি আপনি সবাই হতে পারি। তাই এ বিষয়ে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করতে হবে। তাদের প্রতি সদয় হতে হবে এবং সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে।

দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন জরুরি জানিয়ে অধ্যাপক ডা. মনিরুজ্জামান খান বলেন, বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন ও শারীরিকভাবে অক্ষম মানুষদের ব্যাপারে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন প্রয়োজন। এখন এটি আর শুধু প্রতিবন্ধী দিবস না, শারীরিকভাবে অক্ষম সবাইকে নিয়ে এই দিবস। ইউরোপ, আমেরিকা ও আমাদের তৃতীয় বিশ্বের দেশের চিন্তাধারায় বিরাট পার্থক্য রয়েছে। এটি দূর করতে হবে। সমতা নিশ্চিতে আমাদের সবাইকে আন্তরিক ও সদয় হতে হবে।

স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিডফোর্ট হাসপাতালের ফিজিক্যাল মেডিসিন অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা. মো. রুহুল আমিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্যানেল অব এক্সপার্ট হিসেবে বক্তব্য রাখেন স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের অধ্যাপক ডা. আহমেদ হোসেন, অধ্যাপক ডা. হাসান মাসুদ, ঢাকা মেডিকেল কলেজের অধ্যাপক ডা. জাহিদুল ইসলাম, নিউরোসায়েন্স ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের অধ্যাপক ডা. মনিরুল ইসলাম, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের অধ্যাপক ডা. এহসানুল হক খান এবং অধ্যাপক ডা. খুরশীদ মাহবুব। এতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (এমআইএস) ও বাংলাদেশ সোসাইটি ফর ফিজিক্যাল মেডিসিন অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশনের মহাসচিব অধ্যাপক ডা. মো. শাহাদাত হোসেন মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।

টিআই/এসএসএইচ/