এখন বসন্ত। হাড় কাঁপানো শীত আর হিমেল হাওয়ার পাশাপাশি বিদায় নিয়েছে প্রকৃতিতে বিরাজ করা রুক্ষতা। শীতে ঝরা পাতা যে শূন্যতার জন্ম দিয়েছিল, বসন্তের আগমনে তা অনেকটাই দূর হয়ে গেছে। ভালোবাসা আর সৌন্দর্যের মায়ায় প্রকৃতিকে সতেজ করে তুলেছে গাছের নতুন পাতা। সেই সঙ্গে যোগ হয়েছে লাল, নীল, হলুদ, গোলাপিসহ বাহারি রংয়ের সব ফুলও।

শহুরে প্রকৃতিতে এমন সুন্দর রূপ খুব বেশি চোখে পড়ে না। সেই সৌন্দর্যের দেখা মিলেছে ইতিহাস ঐতিহ্যের বিদ্যাপীঠ রাজধানীর ঢাকা কলেজের উদ্যানে। এ যেন এক স্বপ্নপুরী! পুরো বাগান জুড়ে রয়েছে নানা ধরনের দেশি-বিদেশি ফুল। সেগুলোর মধ্যে রঙিলা প্রজাপতি, মৌমাছি আর ভ্রমরের গুঞ্জন। কলেজের প্রশাসনিক ভবনের সামনে রয়েছে ফুলের বাগান। সেখানে গাঁদা, ডালিয়া, গোলাপ, সেলভিয়া, ডেন্টাস, শিউলিসহ চেনা-অচেনা অসংখ্য ফুল ফুটে আছে সারি সারি।

ফুল পছন্দ করেন না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দায়! তাই তো এসব ফুলের সৌন্দর্যে বিমোহিত শিক্ষক, শিক্ষার্থী কিংবা দর্শনার্থীরা। বাগানের সামনে দিয়ে যাদের চলাচল, ক্ষণিকের জন্য হলেও থমকে দাঁড়াচ্ছেন ফুলের সৌন্দর্যের দিকে তাকিয়ে।

শীতকালীন মৌসুমি ফুলের মধ্যে ডালিয়াই সর্ববৃহৎ আকার ও আকর্ষণীয় রঙের

ফুলের ভালোবাসা আরেকটু কাছে থেকে উপভোগ করতে হলে প্রবেশ করতে হবে এই ফুলের বাগানে। যেখানে শুরুতেই দেখা মিলবে ফুলের রাণী গোলাপের সঙ্গে। সাদা, লাল আর গোলাপি রঙের গোলাপ সমৃদ্ধ বাগান দেখে মনে হতেই পারে, ফুটন্ত গোলাপেরা যেন মুখ টিপে হাসছে! মৃদু বাতাসের তোড়ে কাণ্ডটি নড়ে উঠতেই মনে হবে, মুচকি হাসি এবার অট্টহাসিতে পরিণত হয়েছে!

নিঃশব্দ হাসির ঢেউ হৃদয়ে আঘাত হানতেই চোখ পড়বে লাল, নীল, হলুদ আর সবুজ রঙের ফুটন্ত ডালিয়ার দিকে। শীতকালীন মৌসুমি ফুলের মধ্যে ডালিয়াই সর্ববৃহৎ আকার ও আকর্ষণীয় রঙের। এটি সবার কাছেই বেশ সমাদৃত। বাহারি রঙ, বড় বড় পাপড়ি, দৃষ্টিনন্দন বিন্যাসের জন্য এটি সহজেই দর্শনার্থীদের দৃষ্টি কাড়ে।

ডালিয়ার পাশেই হেসে কুটিকুটি হলুদ গাঁদা ফুলেরা। ফুটন্ত ফুলের সঙ্গে রোদের লুকোচুরি খেলা দেখতে দেখতে চোখ চলে যাবে শীতকালীন আরেক ফুর রেড সেলভিয়ার দিকে। টকটকে লাল রঙের জন্যই এ নামকরণ।

বাগানে আরও দেখা মিলবে ডেন্টাস ফুলের বৃত্তাকার বেদী

এখানেই শেষ নয়। ঢাকা কলেজর বাগানে আরও দেখা মিলবে ডেন্টাস ফুলের বৃত্তাকার বেদী। রয়েছে শিউলি, বকুলসহ দেশি নানা ফুলের সমাহার। এসব ফুটন্ত ফুলের বুকে হুল ডুবিয়ে নিশ্চিন্তে মধু সংগ্রহ করছে মৌমাছির দল। যা এক স্বর্গীয় আনন্দের বার্তা এনে দেয়। শহুরে সভ্যতায় প্রকৃতির এমন সৌন্দর্যের দেখা পাওয়াও যে বেশ কঠিন!

খুব মনোযোগ দিয়ে এক ফুল থেকে অন্য ফুলে ঘুরে ঘুরে মৌমাছির মধু সংগ্রহের দৃশ্য উপভোগ করছিলো উচ্চমাধ্যমিক শ্রেণির শিক্ষার্থী তানভীর আহমেদ। তিনি বললেন, যখনই মন খারাপ থাকে, বাগানে চলে আসি। এত ফুল আর এত সৌরভের মাঝে নিমিষেই মন ভালো হয়ে যায়।

দীর্ঘ প্রায় ২৩ বছর ধরে ফুল বাগানের পরিচর্যা করেন মুন্না দাস। জানিয়েছেন এ বাগানের প্রতি তার ভালোবাসার কথা। তিনি বলেন, ১৯৯৭ সালে ঢাকা কলেজে মালি হিসেবে যোগ দেই। ছুটির দিন ছাড়া প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত বাগানেই সময় কাটে। ঋতু বদলের সঙ্গে সঙ্গে মানানসই ফুলের চারা উৎপাদন, যত্ন নেওয়া, ফুল ফোটানো, বীজ সংরক্ষণে বেশ ব্যস্ত সময় কাটে। লকডাউনের সময়ও কয়েকদিন পরপর ক্যাম্পাসে এসে বাগানের যত্ন নিয়েছি।

শিক্ষক এবং শিক্ষার্থী সবার জন্যই বাগানটি উন্মুক্ত

মুন্না আরও বলেন, এমনিতে সারাবছরই বিভিন্ন ফুলের দেখা মেলে। তবে অক্টোবর, নভেম্বর এবং ফেব্রুয়ারি, মার্চ মাসে বাগানে ফুলের পরিমাণ অন্যান্য সময়ের চেয়ে বেশি থাকে।

ঢাকা কলেজ শিক্ষক পরিষদের সম্পাদক ড. আব্দুল কুদ্দুস সিকদার বলেন, অব্যাহতভাবে আমাদের বাগানে ঋতুভিত্তিক ফুলের চাষ করা হয়। বাগানের সামনে আসলেই ফুলের সৌন্দর্যে মন ভালো হয়ে যায়। শিক্ষক এবং শিক্ষার্থী সবার জন্যই বাগানটি উন্মুক্ত।

প্রাকৃতিক এই অপরূপ সৌন্দর্যের বন্ধন ঢাকা কলেজের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী, দর্শনার্থীসহ সবাইকে বিমোহিত করে। অনেক হতাশা কিংবা অস্থিরতাকে পাশ কাটিয়ে মনে হতে পারে, এই বেশ ভালো আছি!

এইচটি/এমএইচএস