ঢাকা কলেজের মেডিকেল সেন্টার থেকে স্বাস্থ্যসেবা, চিকিৎসার জন্য ব্যবস্থাপত্র, প্রাথমিক প্রতিবিধানসহ সম্পূর্ণ বিনামূল্যে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত নানান পরামর্শ পাচ্ছেন কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা আর দীর্ঘ সময়ের স্থবিরতার পর গত বছর মেডিকেল সেন্টারটির কার্যক্রম পুনরায় শুরু হয়। করোনার দীর্ঘ বন্ধ শেষে প্রতিষ্ঠান খোলার সময় তৎকালীন অধ্যক্ষ অধ্যাপক আই কে সেলিম উল্লাহ খোন্দকারের উদ্যোগে নতুন ভবনে অস্থায়ীভাবে এর কার্যক্রম শুরু হয়। পরে বর্তমান অধ্যক্ষ অধ্যাপক মোহাম্মদ ইউসুফ প্রশাসনিক ভবনে মেডিকেল সেন্টারের জন্য স্থায়ী কক্ষ বরাদ্দ দেন। 

রোববার (১৫ জানুয়ারি) সরেজমিনে দেখা যায়,  ঢাকা কলেজের প্রশাসনিক ভবনের দশ নম্বর গ্যালারি সংলগ্ন ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের বিপরীত পাশে মেডিকেল সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে। সেন্টারে প্রাথমিক প্রতিবিধান সামগ্রী, অক্সিজেন সিলিন্ডার ও পর্যবেক্ষণ বেড রয়েছে। সপ্তাহে তিনদিন (রোববার, মঙ্গলবার, বৃহস্পতিবার) একজন এমবিবিএস ডাক্তারের তত্ত্বাবধানে সকাল ১০টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা এই মেডিকেল সেন্টার থেকে নিয়মিত চিকিৎসা সেবা পাচ্ছেন।

মেডিকেল সেন্টারটিতে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. তাহমিনা সুলতানা বলেন, আমি গত এক বছর ধরে এখানে চিকিৎসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। চেষ্টা করছি শিক্ষার্থীদের সুচিকিৎসা দেওয়ার। শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি এখান থেকে কলেজের শিক্ষক, কর্মচারী ও তাদের পরিবারের সদস্যরাও বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা পেয়ে থাকেন। যারা চিকিৎসা নিতে আসেন তাদের বেশির ভাগই ঠান্ডা-জ্বর, পেটের পীড়া, ডায়াবেটিস, উচ্চ ও নিম্ন রক্তচাপ, মাথাব্যথা, শারীরিক দুর্বলতাসহ সাধারণ সমস্যায় ভোগেন।

এখন পর্যন্ত সবমিলিয়ে প্রায় এক হাজার জন ঢাকা কলেজ মেডিকেল সেন্টার থেকে ব্যবস্থাপত্র গ্রহণ করেছেন উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, রোগ অনুযায়ী তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থাপত্র দেওয়াসহ রিপোর্ট পর্যালোচনা করে উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজন হলে পরামর্শ দিচ্ছি। তবে জরুরি বিভাগের রোগীদের জন্য এখানে যে ওষুধ রয়েছে সেগুলো আরও বাড়ানো গেলে বিস্তৃত পরিসরে চিকিৎসা দিতে পারব।

মেডিকেল সেন্টারের চিকিৎসা সেবায়  খুশি শিক্ষার্থীরাও। বেলাল হোসেন নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, আগে সামান্য অসুস্থতা নিয়ে ডাক্তার দেখানো প্রয়োজন হলেও ঢাকা মেডিকেল না হয় অন্যান্য হাসপাতালে যেতে হতো। সেখানে গিয়ে আবার লম্বা লাইন দিয়ে ডাক্তার দেখাতে হতো। এতে যেমন করে ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে তেমনি সময়ও নষ্ট হয়েছে। এখন নিজ ক্যাম্পাসে মেডিকেল সেন্টার চালু থাকায় খুব সহজেই ডাক্তারের চিকিৎসা নিতে পারি। তবে সপ্তাহে তিনদিনের জায়গায় পাঁচদিন যদি চিকিৎসা সেবা দেওয়া যায় তাহলে শিক্ষার্থীরা আরও বেশি উপকৃত হবেন। 

কলেজের অফিস সহকারী নজরুল ইসলাম বলেন, আমার হাই প্রেশারের সমস্যা আছে। আগে চেকআপ করতে বাইরের হাসপাতালে কিংবা ফার্মেসিতে যেতে হতো। এখন কলেজের মেডিকেল সেন্টারেই এই সুযোগ পাচ্ছি। আমাদের অনেক উপকার হয়েছে। পাশাপাশি পরিবারের সদস্য যারা রয়েছে শিশু যারা রয়েছে তাদের জন্যও চিকিৎসা সেবা সহজ হয়েছে। যেকোনো পরামর্শের প্রয়োজন হলেই মেডিকেল সেন্টার থেকে তা পাচ্ছি। 

এছাড়াও ভবিষ্যতে মেডিকেল সেন্টারের কার্যক্রম আরও বিস্তৃত করার চিন্তা কলেজ প্রশাসনের রয়েছে বলে জানান
ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক মোহাম্মদ ইউসুফ। তিনি বলেন, আমাদের অনেক সীমাবদ্ধতা রয়েছে। তারপরও সাধারণ শিক্ষার্থীদের কল্যাণের কথা চিন্তা করেই মেডিকেল সেন্টার চালানো হচ্ছে। চেষ্টা করছি যেন তিন দিনের জায়গায় পাঁচদিন চিকিৎসাসেবা দেওয়া যায়। কলেজ প্রশাসনের আন্তরিকতা রয়েছে। সবাই মিলেই শিক্ষার্থীদের কল্যাণে কাজ করার চেষ্টা করা হচ্ছে। 

আরএইচটি/এমএ