জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) শাখা ছাত্রলীগের ৯ কর্মীর বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের এক শিক্ষার্থীকে শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। শুক্রবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) দিবাগত রাত ২টার দিকে হলের ভেতরে এ ঘটনা ঘটে।

এ ঘটনায় ঘটনায় অভিযুক্তদের শাস্তি দাবি করে গতকাল রোববার (২৬ ফেব্রুয়ারি) বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের প্রাধ্যক্ষ নাজমুল হাসান তালুকদারের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ওই শিক্ষার্থী।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর নাম সাকিবুল ইসলাম ফারাব্বি। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের ৪৯তম ব্যাচের শিক্ষার্থী। 

অভিযুক্তরা হলেন- বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী জুনায়েদ হাসান রানা, ফার্মেসি বিভাগের  নাইমুল ইসলাম সাগর, ইতিহাস বিভাগের আতিক শাহরিয়ার, চারুকলা বিভাগের মোহতাছিম বিল্লাহ, সরকার ও রাজনীতি বিভাগের উৎস ও কাব্য, গণিত বিভাগের জুনায়েদ ইভান, প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের ইমরান মির্জা ও পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের সৈকত ইসলাম। তারা সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৮তম ব্যাচের শিক্ষার্থী। তারা ছাত্রলীগের কর্মী ও জাবি ছাত্রলীগের সভাপতি আকতারুজ্জামান সোহেলের অনুসারী বলে পরিচিত।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, গত ২৪ ফেব্রুয়ারি রাত ২টার দিকে জাবি ছাত্রলীগের কয়েকজন কর্মী বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের ২১৬ নম্বর কক্ষের ৪৯তম ব্যাচের শিক্ষার্থী সাকিবুল ইসলাম ফারাব্বিকে ২১৯ নম্বর কক্ষে ডেকে নিয়ে যান। এ সময় তাকে নানাভাবে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করেন ছাত্রলীগের কর্মীরা। পরে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর রুমে তালা ঝুলিয়ে দেন। ফলে সারারাত তিনি গেস্ট রুমে রাত্রিযাপন করে। 

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী সাকিবুল ইসলাম ফারাব্বি ঢাকা পোস্টকে বলেন, গত ২৪ ফেব্রুয়ারি আমি ও আমার বন্ধুরা ২১৬ নম্বর রুমে ঘুমিয়ে ছিলাম। রাত ২টার দিকে আমাদের ডেকে ২১৯ নম্বর রুমে নিয়ে যান ভাইয়েরা। নিয়ে বিভিন্ন বিষয়ে প্রশ্ন করতে থাকেন। বলেন- আমি পলিটিক্যাল প্রোগ্রামে কেন থাকতে পারিনি? গেস্ট রুমে কেন থাকতে পারিনি? আমি বলি- আমার পরীক্ষা চলছে ও সম্প্রতি ডিপার্টমেন্টের একটি ট্যুরে গিয়েছিলাম এজন্য থাকতে পারিনি। এই কথা বলায় তারা আমাকে হল ছাড়তে বলেন। এটা আমার অ্যালোটেড হল হওয়ার আমি হল ছাড়তে অস্বীকার করি। তখন তারা আমাকে পোশাক খুলতে বলেন। আমি পোশাক খুলতে অস্বীকার করলে তারা ক্ষেপে যান ও মারধর শুরু করেন। মারধরের সময় চিৎকার শুনে আমার বন্ধুরা পাশের রুম থেকে আসে ও আমাকে নিয়ে যায়। তারপর আমরা সারারাত হলের গেস্ট রুমে থাকি। 

তবে অভিযুক্তরা মারধরের ঘটনা অস্বীকার করেছেন। মারধরের ঘটনা অস্বীকার করে আতিক শাহরিয়ার বলেন, মারধরের কোনো ঘটনাই ঘটেনি। অভিযোগ যিনি দিয়েছেন তিনি আমার বন্ধুদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেছিলেন। আমার এক বন্ধুকে রুম থেকে বের করে দিয়েছিলেন। তাই আমরা তাকে বোঝাতে গিয়েছিলাম।

আরেক অভিযুক্ত ইমরান মির্জা বলেন, তাকে রুমে ডাকা হয়েছিল। কিন্তু তাকে মারধরের অভিযোগ ভিত্তিহীন।

তবে ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী সাকিব মারধরের ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, চড়-থাপ্পড়ের আওয়াজ শুনে আমি রুম থেকে এগিয়ে যাই। তখন দেখি ৪৮তম ব্যাচের সিনিয়র ভাইয়েরা ফারাব্বিকে মারধর করছেন। পরে ফারাবিকে আমি রুম থেকে বের করে নিয়ে আসি।

এ বিষয়ে জাবি ছাত্রলীগের সভাপতি আকতারুজ্জামান সোহেল বলেন, ছাত্রলীগ র‍্যাগিংয়ের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছে। কিন্তু এ ধরনের ঘটনা গ্রহণযোগ্য নয়। ঘটনার সত্যতা প্রমাণিত হলে জড়িতদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান বলেন, ঘটনা সম্পর্কে এখনো অবগত নই। ঘটনা জেনে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেব।

এ বিষয়ে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক নাজমুল হোসেন তালুকদার বলেন, ঘটনা সম্পর্কে লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। এ বিষয়ে তদন্ত করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচলিত আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে আমার কাছে কেউ অভিযোগ করেনি। হলের প্রভোস্ট সংক্ষেপে জানিয়েছেন যে সিনিয়র-জুনিয়রদের কিছু একটা ঝামেলা হয়েছিল, যেটা সমাধান হয়ে গেছে। হল প্রশাসন যদি আমাকে অফিশিয়ালি জানায় তাহলে আমরা যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করব। 

আলকামা/আরএআর