বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক নারী দিবস। বুধবার (৮ মার্চ) ‘ডিজিটাল প্রযুক্তি ও উদ্ভাবন, জেন্ডার বৈষম্য করবে নিরসন’— এই প্রতিপাদ্য নিয়ে বাংলাদেশে দিবসটি উদযাপিত হচ্ছে। 

১৯৯১ সাল থেকে দেশে দিবসটি উদযাপিত হয়ে আসছে। সমাজের বিভিন্ন স্তরে নারীর অবদান, তাদের ভূমিকার প্রতি সম্মান জানাতেই মূলত এই দিনটি উদযাপন করা হয়। 

এবারের আন্তর্জাতিক নারী দিবসে বিভিন্ন স্তরে ও বিভিন্ন ধাপে নারীদের ভাবনাচিন্তা সম্পর্কে জানা ও পাঠকদের জানানোর চেষ্টা করেছে ঢাকা পোস্ট। তারই ধারাবাহিকতায় নারী দিবসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষার্থীদের ভাবনা তুলে ধরেছেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক-

ঢাবির ম্যানেজমেন্ট বিভাগের শিক্ষার্থী তামান্না আক্তার বলেন, আমাদের পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা এখনো মনে করে নারীর কাজ শুধু সন্তান উৎপাদন ও লালনপালন। আজ একুশ শতকে এসে চারদিকে নারীর ক্ষমতায়নের পর এমন ভাবনার সুযোগ নেই। কর্মক্ষেত্রে কিংবা পরিবার- সবখানেই পরস্পরকে পরস্পরের সহযোগী হতে হবে, প্রতিযোগী নয়। পুরুষকে নারীর প্রতি সংবেদনশীল ও শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। নারীকে পুরুষের চেয়ে 'দুর্বল' কিংবা অধম' ভাবার যে চর্চা পুরুষতান্ত্রিক সমাজে রয়েছে এরও আশু পরিবর্তন প্রয়োজন। পুরুষ কেবল প্রেমেই নারীর কাছে আত্মসমর্পণ করে, এ ছাড়া অন্যকিছুতে নয়। পুরুষকে বুঝতে হবে নারী শুধু প্রেম চায় না, নারী চায় সম্মান, নারী চায় শ্রদ্ধা। এই দৃষ্টিভঙ্গি যখন পাল্টাবে সমাজ তথা একটি রাষ্ট্র আপনা-আপনি উন্নতির শিখরে অবস্থান করবে।

নারী দিবসে তামান্নার মতো নিজের ভাবনা জানিয়েছেন তথ্যবিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষার্থী সানজানা হোসেন অন্তরা।

নিজের অভিমত নিয়ে তিনি বলেন, নারী আজ নিজেকে শুধু চার দেওয়ালেই সীমাবদ্ধ রাখেনি। মুক্ত বিহঙ্গের মতোই রাষ্ট্রের প্রতিটা স্তরে নিজেকে করেছে সংযুক্ত। কিন্তু আজও এই পুরুষতান্ত্রিক সমাজে মেয়েদের সেই উড়তে পারার ক্ষমতা অনেকাংশেই নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হয়। আজ মেয়েরা ঘরে ও বাইরে সমানভাবে নিজের যোগ্যতা ও দক্ষতা কাজে লাগিয়ে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এই একবিংশ শতাব্দীতে এসেও এখনো অনেক পরিবারে মেয়েরা নিজেদের অধিকার থেকে বঞ্চিত, তারা তাদের যোগ্য সম্মান থেকে বঞ্চিত, অনেক ক্ষেত্রে নির্যাতনেরও শিকার হয়। এর থেকে পরিত্রাণ জরুরি।

ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী সুমাইয়া জান্নাত বলেন, প্রতি বছর নারী দিবস পালিত হলেও আমাদের দেশের নারীদের অবস্থানের ঠিক কতটা পরিবর্তন হয়েছে? পরিবর্তনের জোরদার চেষ্টা সত্ত্বেও পরিবর্তন তেমনভাবে সম্ভব হয়নি। নারী তার সেই চিরাচরিত গণ্ডি থেকে বের হয়ে সামনে এগোতে পারেনি। কিন্তু এভাবে আর কত? এই নারী দিবসে আমি চাই নারীরা সব বাধা অতিক্রম করে সামনে এগিয়ে যাক। তাদের উপর সহিংসতার তীব্র প্রতিবাদ করতে শিখুক। গুড়িয়ে দিতে শিখুক ধর্ষক নিপীড়কদের কালো হাত। সমাজে পুরুষের পাশাপাশি প্রতিষ্ঠিত হয়ে উঠুক প্রতিটি নারী যেন কেউ আর কখনো দাবিয়ে রাখার সাহস না পায়।

নারী দিবস নিয়ে ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী উম্মে সাদিয়া প্রাপ্তি বলেন, নারী দিবস মনে করিয়ে দেয় নারীকে সংরক্ষণ এবং সম্মান দেওয়াটা সাংবিধানিক। মানুষ হিসেবে যে সে তার সম্মান পাবে, এটা কোথাও যেন উহ্য। বিলুপ্তপ্রায় প্রাণীর মতো নারীকেও টিকিয়ে রাখতে দিবস প্রয়োজন। তাদের অধিকার দিতে হবে এই শব্দটিই নেতিবাচক। কে দিবে? প্রশ্নটি স্বাভাবিকভাবেই বেমানান, অযৌক্তিক কিংবা ভ্রান্ত মনে হলেও এটাই সত্যি। এর মানে আমাদের খুঁজতে হবে।

প্রসঙ্গত, ১৯১০ সালের ৮ মার্চ কোপেনহেগেন শহরে এক আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সেদিন জার্মানির নারী নেত্রী কারা জেটকিন দিনটিকে ‘আন্তর্জাতিক নারী দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করেন। এরপর ১৯১১ সালের ৮ মার্চ ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্যদিয়ে প্রথম আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালন করা হয়। ১৯৮৫ সালে ৮ মার্চকে জাতিসংঘও আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। বাংলাদেশে ১৯৯১ সালে প্রথম দিবসটি পালন করে।

এইচআর/এমজে