হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

অনার্স শেষ না করেই মাস্টার্সের প্রথম সেমিস্টারের পরীক্ষা দিয়েছেন দিনাজপুর হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী। 

বর্তমানে ওই শিক্ষার্থী মাস্টার্স দ্বিতীয় বর্ষে অধ্যয়নরত। বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লেখালেখি করছেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। সেই সঙ্গে বিষয়টি স্বীকার করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পোস্ট গ্র্যাজুয়েট স্টাডিজ অনুষদের ডিন অধ্যাপক ফাহিমা খানম।

ক্যাম্পাস সূত্র জানায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৫তম ব্যাচের ফিশারিজ অনুষদের শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের একাংশের নেতৃত্ব দেওয়া আলমগীর হোসেন আকাশ অনার্সের নম্বরপত্র ও সাময়িক সনদ জমা না দিয়ে মাস্টার্সে ভর্তি হন। মাস্টার্সে ভর্তির বিষয়ে ২০১৯ সালের ১১ জুলাই পোস্ট গ্র্যাজুয়েট স্টাডিজ অনুষদের ডিন বরাবর একটি দরখাস্ত দেন তিনি।

দরখাস্তে তিনি উল্লেখ করেন, অনার্সের শেষ সেমিস্টার পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছেন তিনি। ফলাফল এখনো প্রকাশ হয়নি। এরই মধ্যে মাস্টার্সের প্রথম সেমিস্টারে ভর্তি হতে চান। অনার্সের নম্বরপত্র ও সাময়িক সনদপত্র জমাদানের জন্য দুই মাসের সময় চান তিনি। দরখাস্তে তার সুপারভাইজার ও ফিশারিজ টেকনোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান ফেরদৌস মেহবুবের সুপারিশ রয়েছে। ফলে তাকে মাস্টার্সে ভর্তির অনুমতি দেন অনুষদের ডিন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অনার্সের নম্বরপত্র ও সাময়িক সনদপত্র জমাদানের সময় নেওয়ার পর বিভাগের কারও সঙ্গে যোগাযোগ করেননি। এখন পর্যন্ত নম্বরপত্র ও সাময়িক সনদ জমা দেননি।

ফিশারিজ অনুষদ সূত্র জানায়, অনার্সের শেষ সেমিস্টার পরীক্ষায় এক বিষয়ে অকৃতকার্য হয়েছেন আকাশ। বিষয়টি এতদিন গোপন ছিল। এক বিষয়ে অকৃতকার্য হওয়ার পর বিষয়টি প্রকাশ করেন ছাত্রলীগের আরেকটি অংশের নেতাকর্মীরা।

অভিযোগের বিষয়ে আলমগীর হোসেন আকাশ বলেন, অনার্সের শেষ সেমিস্টারে এক বিষয়ে অকৃতকার্য হয়েছি। দ্রুত সময়ের মধ্যে মাস্টার্সের ভর্তি বাতিলের আবেদন জমা দেব। এ নিয়ে আমার আর কিছু বলার নেই।

এ বিষয়ে হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শেখ রাসেল হল শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোরশেদুল আলম রনি বলেন, আমি যতটুকু জানি একসঙ্গে অনার্স এবং মাস্টার্স করা যায় না। এটি বড় ধরনের জালিয়াতি। আকাশের ঘটনার সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের যারা যারা জড়িত; তাদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে।

১৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী মো. তুষার আহমেদ বলেন, এটি ন্যক্কারজনক ঘটনা। বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক সুনাম অক্ষুণ্ন রাখতে এবং এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে না ঘটে; সেজন্য দ্রুত সময়ের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচলিত ধারায় প্রশাসনকে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাই।

জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের পোস্ট গ্র্যাজুয়েট স্টাডিজ অনুষদের ডিন অধ্যাপক ফাহিমা খানম বলেন, বিষয়টি জানার পর সোমবার (১৫ মার্চ) বিকেল ৫টার মধ্যে ওই শিক্ষার্থীকে অনার্সের নম্বরপত্র এবং সনদ জমা দেওয়ার সময় দিয়েছিলাম। মঙ্গলবার বিকেলে ওই শিক্ষার্থী আমাকে ফোন করে জানায় মন্ত্রীর প্রোগ্রামে আছে। তাই অনার্সের নম্বরপত্র ও সনদ জমা দিতে পারবে না। এরপরও গতকাল ৫টা পর্যন্ত তার অপেক্ষায় ছিলাম। কিন্তু ওই শিক্ষার্থী আসেনি। ফরে ফোন দিলে তাকে জানিয়ে দিয়েছি, নম্বরপত্র এবং সনদ জমা না দেওয়া পর্যন্ত তোমার সঙ্গে কোনো কথা নেই।

এ ঘটনায় তার বিরুদ্ধে কি পদক্ষেপ নেওয়া হবে জানতে চাইলে ফাহিমা খানম বলেন, যেহেতু সে এখন পর্যন্ত অনার্স শেষ করতে পারেনি; সেহেতু মাস্টার্সের ভর্তি বাতিল করা হবে। 

অনুষদের ডিন হিসেবে এ ঘটনায় আপনার দায়ভার আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এর দায়ভার আমি নেব না। আপনি ওই বিভাগের চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলুন।

এ বিষয়ে কথা বলার জন্য ফিশারিজ টেকনোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান ড. ফেরদৌস মেহবুবের মোবাইলে একাধিকবার কল দিলেও ধরেননি। খুদেবার্তা পাঠালেও রিপ্লে দেননি তিনি।

এএম