ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) নবীন এক ছাত্রীকে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের ঘটনায় আদালতের নির্দেশে অভিযুক্তদের সাময়িক বহিষ্কার ও তাদের কারণ দর্শানোর নোটিশকে ত্রুটিপূর্ণ উল্লেখ করে অকার্যকর ঘোষণা করেছে উচ্চ আদালত। একই সঙ্গে নতুন করে নোটিশ সংযোজিত করে পরবর্তী কার্যক্রম পরিচালনা করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ত্রুটিযুক্ত নোটিশের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারকে আদালত মৌখিকভাবে ভর্ৎসনা করেছে বলে জানা গেছে।

অভিযুক্তদের বহিষ্কারাদেশ স্থগিতের আবেদন শুনানিকালে বিচারপতি জেবিএম হাসান ও রাজিক আল জলিলের দ্বৈত বেঞ্চ এসব সিদ্ধান্ত দেন। বৃহস্পতিবার (৬ এপ্রিল) রিটকারী আইনজীবী গাজী মো. মহসিন এসব তথ্য জানান।

আইনজীবী গাজী মো. মহসিন বলেন, অভিযুক্তদের বহিষ্কার ও কারণ দর্শানোর জন্য দেওয়া নোটিশে প্রয়োজনীয় তথ্য না থাকায় এই সুযোগ নিয়ে অভিযুক্তরা আইনজীবীর মাধ্যমে আদালতে বহিষ্কারাদেশ স্থগিতের জন্য আবেদন করেন। আদালত সেই আবেদন নাকচ করে দিয়েছেন এবং ত্রুটিযুক্ত সেই নোটিশ অকার্যকর ঘোষণা করেছেন। আমি আদালতকে বলেছিলাম বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ত্রুটিযুক্ত প্রক্রিয়া অনুসরণ করছে যেন আইনের ফাঁক দিয়ে অভিযুক্তরা বাঁচতে পারেন। এ বিষয়ে জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারকে ডেকে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি করেছিলাম।

পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে আইনজীবী বিষয়টি নিয়ে ক্ষমা প্রার্থনা করলে আদালত ত্রুটিপূর্ণ সেই নোটিশের পরিবর্তে দ্রুত সময়ের মধ্যে নতুন করে সাপ্লিমেন্টারি নোটিশ দিয়ে কার্যক্রম পরিচালনার আদেশ দিয়েছেন। এক্ষেত্রে নির্দেশনা দেওয়া হয় নতুন নোটিশে যেন আইনের ব্যত্যয় না ঘটে, ঘটলে তাদেরকে জবাবদিহি করা হবে। এ সময় দায়িত্বে অবহেলার জন্য আদালত বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারকে মৌখিকভাবে ভর্ৎসনা করেছেন। এছাড়া দুই অভিযুক্তের পক্ষ থেকে পরীক্ষায় বসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত না দিয়ে আদালত নথিভুক্ত করেছেন।

জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দেওয়া বহিষ্কার ও কারণ দর্শানো নোটিশে সাময়িক বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত জানানো হলেও কোন অপরাধে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন বিধি অনুযায়ী বহিষ্কার করা হয়েছে তা উল্লেখ করা হয়নি। সেখানে শুধু উচ্চ আদালতে রিট পিটিশনের নম্বর প্রদান করা হয় ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা বিধির সিদ্ধান্ত জানানো হয়।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনজীবী ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিএম রাফেল বলেন, আদালত পূর্বের নোটিশটি অকার্যকর করেননি। তবে ওই নোটিশের সঙ্গে সংযোজিত নোটিশ দিতে বলেছেন। বর্তমানে সকল কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। পরবর্তী কার্যক্রম সংযোজিত নোটিশের আলোকে হবে। পূর্বের নোটিশ অনুযায়ী অভিযুক্তরা লিখিত জবাব দাখিল করে থাকলে তা গ্রহণযোগ্য হবে না। নোটিশের পর নতুন করে জবাব দিতে হবে। আদালত বিষয়টি আমলে নিলে আমরা ক্ষমা চেয়ে নেওয়ায় ভর্ৎসনা বা এমন কিছু করা হয়নি। তবে আদালত বলেছেন পরবর্তী সকল নোটিশ আমাদেরকে লিখে দিতে যেখানে রেজিস্ট্রার শুধু স্বাক্ষর করবেন।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এইচ এম আলী হাসানের বক্তব্য জানতে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

পূর্বের নোটিশের আলোকে সময় বাড়িয়ে বুধবারের মধ্যে কারণ দর্শানো নোটিশের জবাব দিতে বলা হয়। নির্ধারিত সময়ে বহিষ্কার হওয়া ছাত্রলীগ নেত্রী সানজিদা চৌধুরী অন্তরা ও অন্য দুই অভিযুক্ত জবাব দাখিল করেছেন। এর আগে সময় বৃদ্ধির আবেদনের প্রেক্ষিতে গত ২৯ মার্চ এক সপ্তাহ সময় দেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

রাকিব হোসেন/এমজেইউ