দেয়ালজুড়ে আঁকা দৃষ্টিনন্দন গ্রাফিতি। একপাশে বাঁশের বেঞ্চ, সামনের খালি জায়গাজুড়ে ইটের তৈরি টুল। নেই ছাদ কিংবা কংক্রিটের পিচঢালা মেঝে। টিনের ছোট্ট দোকান। যেখানে বিক্রি হয় শুধুই চা। বিকেল হলেই প্রতিদিন ভিড় জমে অসংখ্য মানুষের। মধ্যরাত পর্যন্ত সরগরম থাকা এই জায়গাটির নাম ‘স্টেশনতলা’। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রেলস্টেশন ঘেঁষেই স্টেশনতলার অবস্থান।

কিছু একটা করার পরিকল্পনা থেকেই স্টেশনতলা নামক চায়ের দোকানের উদ্যোগ নেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী কাজী মাহমুদ হাসান অয়ন। পরে ২০২২ সালের ১৬ ডিসেম্বর গড়ে তোলেন এই স্টেশনতলা। তার সঙ্গে যোগ দেন দর্শন বিভাগের আবু বকর চৌধুরী, বন ও পরিবেশবিদ্যা ইনস্টিটিউটের সাজ্জাদ আনাম পিনন, ফার্সি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের শোয়েবুল ইসলাম মাসুদ এবং ফিন্যান্স বিভাগের চৌধুরী সাজিদ মোস্তফা আশফিক। শাটল ট্রেনের ক্যাম্পাস হওয়ায় তাদের দোকানের নাম দিয়েছেন ‘স্টেশনতলা’।

বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস হোক বা না হোক, বিকেল বেলা স্টেশনতলায় আসর জমান শিক্ষার্থীরা। চায়ের সঙ্গে গিটারের টুংটাং শব্দ আর বেসুরো গলায় মুহূর্তেই জমে ওঠে গানের আসর। কোরাস গানে কণ্ঠ মেলান দলের অন্যরা। বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘুরতে আসা মানুষের জন্যও বসার উন্মুক্ত এক জায়গা স্টেশনতলা। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যেখানে শিক্ষকরাও আসেন চায়ের স্বাদ নিতে। ফলে ২৭ হাজার শিক্ষার্থীর বিশাল এ ক্যাম্পাসে টিএসসি না থাকার আক্ষেপ যেন কিছুটা হলেও কমিয়েছে পাঁচ বন্ধুর গড়ে তোলা এই চায়ের দোকান।

‘স্টেশনতলা’ শুধু একটা চায়ের দোকানই নয়। চায়ের সঙ্গে রয়েছে সৃজনশীল নানা আয়োজন। চলতি বছর ভাষার মাস উপলক্ষ্যে সপ্তাহব্যাপী বইমেলার আয়োজন করে স্টেশনতলা। বইমেলায় অংশ নেওয়া প্রকাশনীগুলোর মধ্যে ছিল অক্ষরবৃত্ত, বীকন পাবলিকেশন্স, বাতিঘর, নন্দন বইঘর, দাঁড়িকমা, শৈলী ও চন্দ্রবিন্দু প্রকাশনী।

বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী তাহলিল সাকিফ ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিসেবে টিএসসির আক্ষেপ রয়েছে। তবে স্টেশনতলা সেই আক্ষেপ পূরণে খানিকটা সমর্থ হয়েছে বলেই মনে হচ্ছে। প্রায় সময়ই বন্ধুদের সঙ্গে আসা হয়। এত সাদামাটাভাবে সাজানো তবুও শিক্ষার্থীদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে এই স্টেশনতলা।

স্টেশনতলার উদ্যোক্তা কাজী মাহমুদ হাসান অয়ন ঢাকা পোস্টকে বলেন, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেছি। ক্যাম্পাসে টিএসসি কিংবা মধুর ক্যান্টিন না থাকায় শিক্ষার্থীদের সেই অভাব পূরণে একটা কিছু করার ভাবনা থেকে এমন ভিন্নধর্মী উদ্যোগ নেওয়া। শুরু দিকে অনেকে নিরুৎসাহিত করলেও এখন ভালোই সাড়া পাচ্ছি। তবে, লাভ করার পরিকল্পনার চেয়ে আমি সব সময় এটাকে আনন্দের একটা জায়গা হিসেবে ভাবতে পছন্দ করি।

আরেক উদ্যোক্তা আবু বকর চৌধুরী ঢাকা পোস্টকে বলেন, অয়ন যখন আমাদের সঙ্গে এই বিষয়টি নিয়ে আলাপ করে তখনই মনে হয়েছিল ভালো কিছু হবে। সবাই মিলে বিস্তারিত পরিকল্পনা করে শুরু করে দিলাম। কম সময়ে এত বেশি সাড়া পাব তা আমাদের চিন্তাই ছিল না। তবে আন্তরিকতা আমাদের অনুপ্রাণিত করছে। সামনে আরও ভালো করার চেষ্টা রয়েছে আমাদের।

রুমান হাফিজ/এবিএস