কাঁটা পাহাড়ের পথ পেরিয়ে সমাজবিজ্ঞান অনুষদের সামনে গেলেই চোখে পড়বে এক টুকরো রাঙামাটি অর্থাৎ ঝুলন্ত সেতু। দৈর্ঘ্য-প্রস্থে রাঙামাটির মতো বড় না হলেও এটিকে ‘মিনি রাঙামাটি’ বলা যেতেই পারে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে অবস্থিত বিশেষ আকর্ষণীয় 'ঝুলন্ত সেতু'টি আজ মৃতপ্রায়।

ব্যতিক্রমী এ স্থাপনাকে ঘিরে সারা দিন চলত তারুণ্যের উচ্ছ্বাস, আড্ডা আর গানের মহড়া। কিন্তু সেটি আজ কাঁটাতারে মোড়ানো। দুর্ঘটনার আশঙ্কা আর সংস্কারের লক্ষ্যে সেতুটি বন্ধ রাখলেও দীর্ঘ দুই বছরের বেশি সময় ধরে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে।

জানা যায়, চবির প্রয়াত উপার্চায অধ্যাপক ড. আবু ইউসুফ দায়িত্ব পালনকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে রাঙামাটির ঝুলন্ত সেতুর আদলে নির্মাণ করা হয় বিশেষ এ সেতুটি। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এক কৃতী শিক্ষার্থী এটি নির্মাণে পৃষ্ঠপোষকতা করেন। ২০০৯ সালের ১৭ ডিসেম্বর সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয় সেতুটি। কিন্তু অযত্ন-অবহেলায় ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে চবির প্রায় ২৮ হাজার শিক্ষার্থীর প্রিয় ঝুলন্ত সেতুটি।

সরেজমিনে দেখা যায়, সেতুর দুই পাশে মোড়ানো কাঁটাতার এখনো রয়েছে। চারপাশে জন্মেছে অনেক ঝোপঝাড়। কাঠের পাটাতনে জন্মেছে আগাছা। বেশ কয়েক জায়গায় দেখা দিয়েছে ভাঙন। সেতুর চারপাশে শেওলা জমে বিবর্ণ হয়ে আছে। দূর থেকে বোঝার উপায় নেই, এখানে ঝুলন্ত সেতু আছে। মোটের ওপর সেতুটি নতুন করে সংস্কার ছাড়া ব্যবহার সম্ভব নয়।

ইংরেজি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মাইনুদ্দিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, সৌন্দর্যের লীলাভূমি বিশ্ববিদ্যালয়ের একখণ্ড রাঙামাটির আনন্দ দেয় ঝুলন্ত সেতুটি। কিন্তু প্রশাসনের উদাসীনতায় নষ্ট হতে চলেছে সেতুটি। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া নতুন অনেক শিক্ষার্থী দেখে নাই ঝুলন্ত সেতু কেমন। ‘মিনি রাঙামাটি’খ্যাত চবির ঐতিহ্যবাহী এ স্থাপনাটি দ্রুত সংস্কারের জন্য প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানান।

ক্ষোভ প্রকাশ করে বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী সুমেনা সুমি বলেন, অনেক দিন ধরে দেখছি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আমাদের ঝুলন্ত সেতুটি কাঁটাতার দিয়ে বন্ধ করে রেখেছে। সেতুটি মেরামত না করে ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে প্রশাসন। দুই বছরের বেশি সময়ে সেতুটি খুলে না দেওয়ার বিষয়টি দুঃখজনক। ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য রক্ষার্থে সেতুটি অতিদ্রুত মেরামত করা হোক।

জানতে চাইলে চবি প্রকৌশল দফতরের প্রধান প্রকৌশলী মো. আবু সাঈদ হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, যখন সেতুর কিছু কাঠের অংশ ভেঙে পড়ে, তখন চারদিকে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া হয়। কবে নাগাদ সংস্কার হতে পারে, এমন প্রশ্নে তিনি জানান, আগে একটা কমিটি করা হয়েছিল। কিন্তু কোভিড আসায় সব প্রস্তুতি এগিয়ে নেওয়া যায়নি। এখন বিশ্ববিদ্যালয় স্বাভাবিক হলে প্রশাসনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কাজ শুরু হবে।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক এস এম মনিরুল হাসান ঢাকা পোস্টকে বলেন, ক্যাম্পাস যেহেতু বন্ধ, এটা নিয়ে পরে চিন্তাভাবনা করব। সংস্কারের ব্যাপারে তিনি বলেন, প্রকৌশলীর সঙ্গে আলাপ করব। দেখি তারা কী ভাবছে।

এনএ