বাড়িতে পরিবারের সদস্যদের ডাকে ঘুম থেকে উঠে খাবারের ব্যবস্থা থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে তা নেই। নিজ তাগিদেই হলের ডাইনিং কিংবা ক্যাফেটেরিয়ায় গিয়ে খাওয়াদাওয়া করতে হয় নতুবা নিজে রান্না করে খেতে হয়। ইফতারিতেও একই অবস্থা।

তবে ক্যাম্পাসে সেহরি ও ইফতারে বিভিন্ন সমস্যা থাকলেও আনন্দও কম নয়। কখনো রান্নার অভিজ্ঞতা না থাকলেও বন্ধুদের সঙ্গে রান্না করা, কার হাতের রান্না ভালো, কে ঝাল কিংবা লবণ কম খায় এ নিয়ে ঝগড়া ও দুষ্টুমিও কম হয় না। বন্ধুদের সঙ্গে বসে গোল হয়ে ইফতার করার ব্যাপারটাও দারুণ।

ক্যাম্পাসের হলে সেহরি

রোজা শুরু হওয়ার আগে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক শিক্ষার্থীরা ছিলেন উদ্বিগ্ন। এ বছর দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে হলের ডাইনিংয়ে নেই ভালো খাবার। ফলে বাধ্য হয়েই অধিকাংশ আবাসিক শিক্ষার্থী নিজেরাই রান্না করে অথবা হোটেলে খাচ্ছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মুখতার ইলাহী হলের আবাসিক শিক্ষার্থী আল আমিন। পরিবারের বাইরে এ বছরই প্রথম রমজান তার। হলে খাবার ভালো না হওয়ায় রুমমেটদের সঙ্গে রান্না করে খেতে হচ্ছে।

আল আমিন বলেন, বিকেলেই রান্নার জন্য বাজার করতে হয়। ইফতারি শেষে রান্নায় রুমমেটদের সহযোগিতা করা, রান্না-খাওয়া শেষে তারাবির নামাজ। আর সেহরিতে সবাই একসঙ্গে খাওয়াদাওয়া। এভাবেই কাটছে রমজানের সময়গুলো।

তিনি আরও বলেন, নিজে রান্না করে খাওয়ার এটাই প্রথম অভিজ্ঞতা। বাড়িতে সেহরিতে উঠে খেতেই আলসেমি লাগতো। মা-বাবার কয়েক দফা ডাকার পর উঠে সেহরি খেতাম। আর এবার রুমমেটদের সঙ্গে নিজেই রান্না করে খাচ্ছি। বাড়িতে রান্নায় লবণ, ঝাল বেশি হলেই কথা শোনাতাম। আর এখন নিজেদের রান্না খারাপ হলেও মুখ বুঝে খেতে হয়।

ঝড়ের রাতে সেহরি

সেদিন সন্ধ্যা থেকেই গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছিল। বাইরে প্রচণ্ড বাতাস, ছিল না বিদ্যুৎ। সেই রাতে হলের শিক্ষার্থীরা কেউ রান্না করতে পারেনি। সেহরির সময় ঝড় থেমে গেলে হলের ডাইনিং ও ক্যাফেটেরিয়ায় দেখা যায় শিক্ষার্থীদের ছুটাছুটি। খাবার দেওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই হলের ডাইনিংয়ে খাবার শেষ।

শহীদ মুখতার ইলাহী আবাসিক হলের শিক্ষার্থী নিলয় বলেন, ঝড়ের কারণে রান্না করতে পারিনি। ঘুম থেকে উঠে হলের ডাইনিংয়ে গিয়ে দেখি খাবার নেই। পরে ক্যাফেটেরিয়ায় দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করার পর জানা গেল ওখানেও খাবার শেষ। পরে ক্যাম্পাসের বাইরে গিয়ে সেহরি করে এসেছি।

ডাইনিং ও ক্যাফেটেরিয়ার কর্মচারীরা বলেন, প্রতিদিনের চাহিদা অনুযায়ী আমরা খাবার রান্না করি। হঠাৎ করে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় সবাইকে খাবার দেওয়া সম্ভব হয়নি।

বন্ধুদের সঙ্গে ইফতার

ইফতার কিনে ক্যাম্পাসের মাঠে একসঙ্গে গোল হয়ে বসে ইফতারিতে অন্যরকম তৃপ্তি পাওয়া যায়। রাকিবুল ইসলাম নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, আমরা প্রতিদিনই বন্ধুদের সঙ্গে ক্যাম্পাসের মাঠে ইফতার করি। আমাদের মতো অনেকেই ইফতার করতে ক্যাম্পাসে চলে আসেন। ক্যাম্পাসের পুরো মাঠ ইফতারের গ্রুপে পরিপূর্ণ হয়ে উঠে। একা ইফতার করার চেয়ে সবার সঙ্গে ইফতার করতে ভালো লাগে। ইফতারের পর মসজিদে নামাজ শেষে হলে বা মেসে ফিরে যাই।

জেলা সমিতির ইফতার

ক্যাম্পাসে বিভিন্ন সংগঠন ইফতারের আয়োজন করে করে থাকে। এর মধ্যে জেলা ছাত্রকল্যাণ সমিতি অন্যতম। এ সময় ওই জেলার শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী ছাড়াও জেলা থেকে আগত শহরের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ব্যক্তিরাও উপস্থিত থাকেন।

ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীরা পরিবার ছাড়া সেহরি-ইফতার করলেও প্রতিটি গ্রুপ, বন্ধু সার্কেল, সিনিয়র-জুনিয়র ও বিভিন্ন সংগঠনের সদস্যরা হয়ে ওঠে একেকটি পরিবার। খারাপ-ভালো সময়ে তারাই পাশে থাকে এবং সহযোগিতা করে। শিক্ষাজীবন শেষেও স্মরণীয় হয়ে থাকে ক্যাম্পাসের দিনগুলো।

এমজেইউ