বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘ (বিএনপিএস)-এর নির্বাহী পরিচালক মুক্তিযোদ্ধা ও বিশিষ্ট নারীনেত্রী রোকেয়া কবীর বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধে নারী-পুরুষসহ সকল জনগোষ্ঠীর সমান অংশগ্রহণে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, স্বাধীনতার অর্ধশত বছর পরেও ধর্মের ভিত্তিতে মানুষে-মানুষে বিভাজন সৃষ্টি করা হয়েছে। ধর্মকে সুকৌশলে রাজনীতিতে ব্যবহার করা হচ্ছে। একইসঙ্গে নারীদের পিছিয়ে রাখার জন্য ধর্মকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।

মঙ্গলবার (২৩ মে) জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে লোকপ্রশাসন বিভাগ ও বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘ (বিএনপিএস)-এর যৌথ আয়োজনে ‘জেন্ডার সমতা ও সমনাগরিকত্ব প্রতিষ্ঠায় গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ’ শীর্ষক সেমিনারে সভাপ্রধানের বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

রোকেয়া কবীর বলেন, এই উদ্বেগজনক পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য অসহিষ্ণুতা ও সহিংসতার বিরুদ্ধে জনসচেতনতা সৃষ্টি ও জনমত গড়ে তোলা খুবই জরুরি। যুবসমাজ এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।

শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব, সে তার বুদ্ধিমত্তা দিয়ে সমাজে পরিবর্তন বয়ে আনতে পারে। তাই মুখস্থ বিদ্যার বদলে আমাদের প্রশ্ন করা শিখতে হবে।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগের চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিন কবির বলেন, আমরা যদি ঔপনিবেশিক সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে এসে আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতি সম্পর্কে জানতে পারি, তাহলে আমরা উপলব্ধি করতে পারবো যে সমতা কেন জরুরি। এজন্য ইতিহাস পাঠ করা অত্যন্ত জরুরি। নিজস্ব ইতিহাস পাঠের মধ্যদিয়ে আমরা যদি জনমনে সচেতনতা তৈরি করতে পারি তাহলে জেন্ডার সমতা আনা সম্ভব।

অনুষ্ঠানে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের প্রভাষক বর্ণনা ভৌমিক বলেন, নারী-পুরুষ সমতার ক্ষেত্রে গণমাধ্যমের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। গণমাধ্যম যদি নারীর প্রতি বৈষম্য ও নারীর সমান অধিকারের বিষয়টি সঠিকভাবে উপস্থাপন করে তাহলে তা সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। এটি দীর্ঘমেয়াদে নারীর অধিকারের পক্ষে রাষ্ট্রীয় নীতিমালা প্রণয়নে সহায়ক হবে। নারীর অধিকারের পাশাপাশি ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গ নির্বিশেষে দেশের সকল নাগরিকের সম-অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।

শুভেচ্ছা বক্তব্যে লোকপ্রশাসন বিভাগের চেয়ারম্যান আসমা বিনতে ইকবাল বলেন, প্রাচীনকাল থেকে এখন পর্যন্ত সভ্যতার সৌধ নির্মাণে নারী-পুরুষ সমানতালে কাজ করে যাচ্ছে কিন্তু এখন পর্যন্ত নারীরা তার প্রাপ্য সম্মান পায়নি। নারী-পুরুষের মধ্যকার বৈষম্যের কারণ হচ্ছে পরিবার। সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়ার নারীরা নিজে থেকে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারে না। নারীকে নারী হিসেবে চিন্তা না করে মানুষ হিসেবে চিন্তা করতে হবে এবং তার অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।

বিএনপিএস-এর পরিচালক শাহনাজ বেগম সুমীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন- সহযোগী অধ্যাপক শামিমা আখতার।

এমএল/এমজে