চামড়া শিল্প দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রপ্তানি খাত হওয়া সত্ত্বেও এর রপ্তানি দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে। এ শিল্প খাতে রপ্তানি হ্রাস পাওয়ার মূল কারণ হলো বাংলাদেশের ট্যানারিগুলো আন্তর্জাতিক পরিবেশগত কমপ্লায়েন্স সনদ (এলডব্লিউজি) প্রাপ্ত নয়। এ সনদ প্রাপ্তির পথে মূল বাধা হলো পরিবেশবান্ধব উপায়ে চামড়া প্রক্রিয়াজাত না করা, ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থের ব্যবহার ও সঠিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অভাব।

ট্যানারি শিল্পের বিদ্যমান সমস্যা নিরসনের লক্ষ্যে ২০২১ সাল থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মিজানুর রহমানের নেতৃত্বে পরিবেশবান্ধব উপায়ে চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণের এক নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবনের গবেষণা চালানো হয়। 

এ প্রযুক্তিতে স্বল্প খরচে উদ্ভাবিত এনজাইম ব্যবহার করে প্রচলিত পদ্ধতির চেয়ে অধিকতর গুণগত মাসম্পন্ন ফিনিশড লেদার উৎপাদন করা সম্ভব হয়েছে। এ প্রযুক্তির মাধ্যমে ৩০ শতাংশ কম রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করা হয়। এ পদ্ধতিটি গবেষণাগারে সফলভাবে সম্পন্ন হওয়ার পর প্রগতি ট্যানারিতে ইন্ডাস্ট্রিয়াল স্কেলেও প্রয়োগ ইতোমধ্যে সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। উদ্ভাবিত পদ্ধতিতে প্রস্তুতকৃত ফিনিশড লেদার দিয়ে প্রচলিত পদ্ধতির চেয়ে অধিকতর গুণগত মানসম্পন্ন চামড়াজাত পণ্য উৎপাদন করা সম্ভব হয়েছে। আইলেট উদ্ভাবিত প্রযুক্তিটি ইতোমধ্যে শিল্প মন্ত্রণালয়ের পেটেন্ট, ডিজাইন এবং ট্রেডমার্কস অধিদপ্তরে পেটেন্ট অনুমোদনের প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

আইলেট কর্তৃক উদ্ভাবিত প্রক্রিয়ায় লেদারের গুণগত মান উন্নয়ন ছাড়াও ট্যানারির তরল বর্জ্যে পরিবেশ ও মানবদেহের জন্য ক্ষতিকারক ক্রোমিয়ামের পরিমাণ ৯০ শতাংশ হ্রাস পায়। এছাড়া অন্যান্য ক্ষতিকারক কেমিক্যালের পরিমাণও উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পায়। তাছাড়া এই প্রক্রিয়ায় নির্গত তরল বর্জ্যও বাহ্যিকভাবে অনেকটাই স্বচ্ছ হয়। উদ্ভাবিত পদ্ধতিটি চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণে ৩০ শতাংশ কেমিক্যাল খরচ এবং তরল বর্জ্য পরিশোধন ব্যয় ৫০ শতাংশেরও বেশি হ্রাস পাবে যাতে ট্যানারির তরল বর্জ্য পরিশোধন পদ্ধতিও সহজতর হবে।

চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণে ব্যবহার ছাড়াও আইলেট উদ্ভাবিত এনজাইম ব্যবহার করে আনট্যানড কঠিন বর্জ্য থেকে কম খরচে পরিবেশবান্ধব উপায়ে বায়োডিজেল এবং জৈব সার প্রস্তুত করা সম্ভব হয়েছে। যা দেশের নবায়নযোগ্য শক্তির অন্যতম উৎস হতে পারে। ক্রোমযুক্ত ট্যানারির কঠিন বর্জ্য (শেভিং ডাস্ট) থেকে ইতোমধ্যে লেদার শেভিং বোর্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল স্কেলে সফলভাবে উৎপাদন করা সম্ভব হয়েছে। যা বাজারে প্রচলিত পার্টিকেল বোর্ডের চেয়ে অধিকতর গুণগত মানসম্পন্ন ও সাশ্রয়ী। এতে করে পোল্ট্রি ফিড, ফিশফিড, ব্রিকফিল্ড ও সিমেন্ট ফ্যাক্টরিতে ক্ষতিকর ক্রোম শেভিং ডাস্টের অনৈতিক ব্যবহার বন্ধ করা সম্ভব এবং এর মাধ্যমে পরিবেশ দূষণও রোধ হবে।

উপরোক্ত উদ্ভাবনগুলো উপযুক্ত বিনিয়োগ ও সরকারি সহায়তায় আইলেটের মাধ্যমে ট্যানারি শিল্পে বাস্তবায়িত হলে পরবর্তী দুই বছরের মধ্যে ট্যানারিগুলোর বহুল প্রত্যাশিত আন্তর্জাতিক পরিবেশগত সনদ (এলডব্লিউজি) অর্জন সম্ভব এবং ২০৩০ সালের মধ্যে সরকার নির্ধারিত ১০ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে।

এইচআর/কেএ