ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে রাবির মাত্র একজন!
ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। ৩০১ সদস্যবিশিষ্ট এ কমিটিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) থেকে মাত্র একজন পদ পেয়েছেন। তাও আবার ১৮ জন সহ-সম্পাদকের মধ্যে সবার শেষে। যেখানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কেন্দ্রীয় কমিটিতে স্থান পেয়েছেন ২২৬ জন।
গত বৃহস্পতিবার (১৩ জুলাই) রাতে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে এই কমিটি ঘোষণা করা হয়।
বিজ্ঞাপন
এতে হুসাইন আদনান নামে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী সহ-সম্পাদক পদ পেয়েছেন।
এদিকে কেন্দ্রীয় কমিটিতে স্থান না পেয়ে রাবি ছাত্রলীগের অনেক নেতা-নেত্রী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করে স্ট্যাটাস দিয়েছেন। কেন্দ্রীয় কমিটিতে সব সময় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় অবহেলিত বলে অভিযোগ তাদের।
বিজ্ঞাপন
রাবি ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির এই মূল্যায়নে তারা বেশ অসন্তুষ্ট। তাদেরকে অপমানিত ও অবমূল্যায়ন করা হয়েছে। অনেকের ভালো মূল্যায়ন পাওয়া উচিত ছিল বলে মনে করছেন তারা।
নেতৃবৃন্দ বলেন, শিবিরের চোখ রাঙানি উপেক্ষা ও লড়াই-সংগ্রাম করে টিকে থাকতে হয় এই ক্যাম্পাসে। এখানকার নেতাকর্মীরা ত্যাগের রাজনীতি করেন। নানা প্রতিবন্ধকতার মধ্য দিয়ে তারা তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। সেখানে মাত্র একজন নেতাকে পদ দেওয়া মানে এই ইউনিটকে অবজ্ঞা করা।
তবে কেউ কেউ মনে করেন, কেন্দ্রে পদ পাওয়ার মতো কোনো নেতাই নেই। কারণ দীর্ঘদিন নতুন কমিটি না হওয়ায় রাবি ছাত্রলীগের কাঠামো দুর্বল হয়ে গেছে। নেতাকর্মী সংকটে মেরুদণ্ড সোজা করে দাঁড়াতে পারছে না রাবি ছাত্রলীগ। বর্তমান সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের প্রতি আস্থা নেই তাদের। অধিকাংশ নেতাই নিষ্ক্রিয় ও দুর্নীতিগ্রস্ত।
জানা গেছে, এর আগে ২০১৯ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কেন্দ্রীয় কমিটিতে পদ পান দুইজন। তারা হলেন- সহ-সভাপতি পদে খালিদ হাসান নয়ন এবং সহ-সম্পাদক পদে শরিফুল ইসলাম সাদ্দাম পদ পান।
তার আগে ২০১৬ সালে রাবি ছাত্রলীগের সভাপতি-সম্পাদক পদপ্রত্যাশী ৮ জনকে কেন্দ্রীয় কমিটিতে সদস্য পদ দেওয়া হয়। তারা হলেন- তন্ময়ানন্দ অভি, সাহানুর ইসলাম শাকিল, সাকিবুল হাসান বাকি, মিনারুল ইসলাম, মেহেদী হাসান রাসেল, টগর মো. সালেহ, আব্দুল্লাহ আল মাসুদ, আখেরুজ্জামান তাকিম।
কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের একটি সূত্র জানিয়েছে, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কেন্দ্রীয় কমিটিতে পদপ্রত্যাশী নেতার সংখ্যা তেমন একটা ছিল না। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে রাবি ছাত্রলীগের হল কমিটির সঙ্গে যুক্ত কয়েকজন নারী শিক্ষার্থী পদ প্রত্যাশা করেছিলেন। কিন্তু এদের কাউকেই পদ দেওয়া হয়নি। মূলত কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সঙ্গে রাবি ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দের যোগাযোগের অভাবের কারণেই নেতা-কর্মীদের কেন্দ্র থেকে পর্যাপ্ত মূল্যায়ন করা হয় না। দীর্ঘদিন কমিটি না থাকার কারণে রাবি ছাত্রলীগ থেকে ত্যাগী ও দক্ষ নেতাকর্মীও তৈরি হচ্ছে না।
রাবি ছাত্রলীগের উপ-ধর্মবিষয়ক সম্পাদক ও সাধারণ সম্পাদক পদ প্রত্যাশী তাওহীদুল ইসলাম দুর্জয় বলেন, যে ইউনিটে সাত বছরে নতুন কমিটি হয়নি সে ইউনিট থেকে কীভাবে কেন্দ্রে গুরুত্বপূর্ণ পদ পাওয়ার মতো নেতৃত্ব তৈরি হবে। মেরুদণ্ড ও কর্মীহীন অবহেলিত ইউনিট রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় আর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন্দ্রে যারা পদ পাওয়ার জন্য দৌড়াদৌড়ি ও রাজনীতি করছে তাদের মধ্যে শুধু রুবেল ভাই সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদ পাওয়ার যোগ্য, আর বাকি সব হলের নেতা। তাহলে কাকে কেন্দ্রে পদ দেবে? কিবরিয়া (সভাপতি), রুনু ভাইকে (সাধারণ সম্পাদক) পদে দেব? তারাতো সাত বছর থেকে খাচ্ছেই, পৃথিবীর সব কি দিবে ওদের? দুনিয়া কি এতটাই সহজ?
এদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে রাবি ছাত্রলীগের দপ্তর সম্পাদক এবি হোসেন লিখেছেন, ‘বৃত্তের কেন্দ্র থেকে পরিধি পর্যন্ত দূরত্ব ২৪৬.৩ কি.মি.। কেন্দ্র থেকে পরিধি পর্যন্ত আলো পৌঁছাতে পারেনি। তাই আমাদের প্রতি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের দৃষ্টি পড়েনি। রাবির মতো গুরুত্বপূর্ণ এবং একইসঙ্গে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ সাংগঠনিক ইউনিটে জীবন-যৌবন সবটুকু দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পরিশ্রম করে ছাত্রলীগ করা নেতা-কর্মীদের অবমূল্যায়ন এবং অপমান করায় শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন রইল আপনাদের।’
রাবির বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা হল শাখা ছাত্রলীগের বর্তমান সভাপতি এবং কেন্দ্রীয় কমিটিতে পদপ্রত্যাশী তাজরীন আহমেদ খান মেধা বলেন, ঢাকার বাহিরে কেন্দ্রীয় কমিটিতে বরাবরই মেয়েরা পদ পায় না। তবে আমরা এবার ধারণা করেছিলাম সাদ্দাম ভাই যেহেতু ভিন্ন ধারার মানুষ তিনি ঢাকার বাহিরের মেয়েদের নিয়ে ভাববেন। কিন্তু দুঃখের বিষয় ঢাকার বাহিরে কোনো মেয়েই পদ পায়নি। তারা হয়তো আমাদের যোগ্য মনে করেনি। আমরা আমাদের জায়গা থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের শুরু থেকে রাজনীতি করে আসছি। কিন্তু আমাদের মূল্যায়ন করা হলো না। আমাদের জুনিয়র এবং কখনো মিটিং-মিছিলে দেখিনি তারাও পদ পেয়েছে শুধু ঢাকার বলে।
রাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু বলেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিবিরের সঙ্গে লড়াই-সংগ্রাম করে ছাত্রলীগকে টিকে থাকতে হয়েছে। এখানে যে ত্যাগের রাজনীতি হয়ে থাকে, সেই হিসেবে আরও মূল্যায়ন পাওয়া উচিত ছিল। আমাদের এখানের অনেকেই কেন্দ্রীয় কমিটিতে পদ প্রত্যাশী ছিলেন, কিন্তু আমরা দেখলাম মাত্র একজনকে সেখানে স্থান দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান বলেন, এসব অভিযোগের কোনো ভিত্তি নেই। আমি নিজেও ঢাকার না, ঝালকাঠির। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতিও রাজধানীর নয়, তিনি পঞ্চগড় থেকে এসেছেন। কমিটিতে পদায়নের ক্ষেত্রে আমরা চেয়েছি যেন দেশের সকল প্রান্তের প্রতিনিধিত্ব থাকে। এখানে কে কোন ক্যাম্পাসের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, সেটি বিবেচনায় নেওয়া হয়নি।
জুবায়ের জিসান/আরএআর