মো. মাইদুল ইসলাম

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ‘স্টেপ ডাউন হাসিনা’ লিখে পোস্ট দেওয়ায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) সমাজতত্ত্ব বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. মাইদুল ইসলামকে কারণ দর্শানোর নোটিশ (শোকজ) দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

বৃহস্পতিবার (২৪ আগস্ট) চবির ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার কে এম নুর আহমাদ নোটিশের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এর আগে বুধবার (২৩ আগস্ট) রেজিস্ট্রার কর্তৃক স্বাক্ষরিত ওই নোটিশে মো. মাইদুল ইসলামকে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে লিখিত জবাব দিতে বলা হয়েছে।

চিঠিতে বলা হয়, আপনি (মো. মাইদুল ইসলাম) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ চেয়ে এবং তার সরকারের বিরুদ্ধে নানা কুৎসা রটনা করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে আপত্তিকর পোস্ট দিয়েছেন। এতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে এবং তা বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিধান পরিপন্থি। এ ব্যাপারে আপনার বিরুদ্ধে কেন আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, তা আগামী ১৫ কর্মদিবসের মধ্যে লিখিতভাবে জানানোর জন্য অনুরোধ করা হলো।

এর আগে গত ৩০ জুলাই ফেসবুকে (#StepDownHasina) লিখে পোস্ট করেন মো. মাইদুল ইসলাম, যা এখনো তার ফেসবুক আইডিতে রয়েছে। আর ২০ আগস্ট ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য উপাচার্য বরাবর আহ্বান জানিয়ে চিঠি দেয় শিক্ষক সমিতি। শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মুস্তাফিজুর রহমান ছিদ্দিকী এবং সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আবদুল হক স্বাক্ষরিত চিঠিতে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানানো হয়।

মো. মাইদুল ইসলামের দেওয়া ফেসবুকে পোস্ট

শিক্ষক মাইদুল ইসলাম বর্তমানে গবেষণার কাজে দেশের বাইরে থাকায় শোকজের বিষয়ে তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে শিক্ষক সমিতি কর্তৃক উপাচার্য বরাবর আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের চিঠি প্রদানের পর তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, গণমানুষের ট্যাক্সের টাকায় পরিচালিত একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াই। তাই, এই প্রতিষ্ঠান কোনো সরকার কিংবা একক কোনো গোষ্ঠী অথবা কারও বাপ-দাদার চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত নয়। এই প্রতিষ্ঠান সরকারি কোনো দলের খোঁয়াড় নয়। এটি এখন দিবালোকের মতো স্পষ্ট যে দেশে আইনের শাসন নেই, জবাবদিহিতা নেই, জনগণের ভোটাধিকার নেই, তাই গণতন্ত্রও সেখানে অনুপস্থিত। যেহেতু এসব আওয়ামী লীগ ক্ষমতাসীন থাকার সময় ঘটেছে তাই আমি জনগণের ভোটাধিকার এবং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়ে আমার ব্যক্তিগত ফেসবুক প্রোফাইলে (#StepDownHasina) লিখেছি। অনলাইন বা অফলাইনে নিজের মতামত প্রকাশ করতে পারা আমার নাগরিক, রাজনৈতিক, গণতান্ত্রিক এবং সাংবিধানিক অধিকার।

তিনি আরও বলেন, যে শিক্ষক সমিতি এর আগে সরকারদলীয় ছাত্রসংগঠনের দ্বারা আমার নিপীড়িত হওয়ার ঘটনায় আমার পাশে দাঁড়ায়নি, বারবার যোগাযোগ করার পরও কোনো সাড়া দেয়নি আজ তারাই আমার সহকর্মী হওয়ার পরও অন্যায়ভাবে আমার বিরুদ্ধে নিপীড়নমূলক ব্যবস্থা নিতে উঠেপড়ে লেগেছে। আদতে এটি যে তাদের নিজের পায়ে নিজেদেরই শিকল পরানোর বন্দোবস্ত। তারা নিজেরাই নিজেদেরকে কারাগারে বন্দী করে ফেলছে কিংবা প্রতিষ্ঠানগুলোকে কারাগারে রূপান্তরিত করে ফেলা হচ্ছে। এই বোধটুকু তাদের ভেতরে জাগ্রত হোক। একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি মত প্রকাশের অধিকারের প্রাথমিক ধারণা রাখে না বা রাখতে চায় না এটা অত্যন্ত দুঃখজনক ঘটনা।

উল্লেখ্য, এর আগেও কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের পক্ষ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে কটূক্তি করে ফেসবুকে পোস্ট দেওয়ার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে হাটহাজারী থানায় তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় মামলা করেন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ইফতেখার উদ্দিন আয়াজ। ওই মামলায় তিনি কারাগারেও যান। এমনকি গ্রেপ্তারের পর তাকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বরখাস্তও করা হয়।

রুমান/এমজেইউ