পদত্যাগ করা ছাত্র অধিকার নেতাদের নেতৃত্বে আসছে নতুন সংগঠন
আখতার হোসেন (বামে) ও নাহিদ ইসলাম
ডাকসুর সাবেক সমাজসেবা সম্পাদক ও ছাত্র অধিকারের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক সভাপতি আখতার হোসেনের নেতৃত্বে আত্মপ্রকাশ হতে যাচ্ছে নতুন একটি ছাত্র সংগঠনের। ছাত্র অধিকার পরিষদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার পদত্যাগ করা নেতাদের সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমিটিতে দেখা যেতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। নতুন এ সংগঠনের নাম কী হতে পারে তা এখনো জানা যায়নি।
বুধবার (৪ অক্টোবর) বেলা ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) রাজনীতির আঁতুড়ঘর খ্যাত মধুর ক্যান্টিনে এক সংবাদ সম্মেলনে আনুষ্ঠানিকভাবে এ সংগঠনের ঘোষণা দেওয়া হবে বলে জানা গেছে। সোমবার (২ অক্টোবর) রাতে এক বিবৃতিতে এ তথ্য নিশ্চিত করেন ডাকসুর সাবেক নেতা আখতার হোসেন।
বিজ্ঞাপন
এর আগে গত ২৩ জুলাই বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদ কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের গঠনতন্ত্র লঙ্ঘন ও লেজুড়বৃত্তিক অবস্থানের বিষয়ে অভিযোগ তুলে ঢাবির সাংবাদিক সমিতির কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে একযোগে পদত্যাগের ঘোষণা দেন সংগঠনটির ঢাবি শাখার নেতারা। এসময় ঢাবি শাখার সভাপতি আসিফ মাহমুদ, সাধারণ সম্পাদক আহনাফ সাঈদ খান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নুসরাত তাবাসসুমসহ অন্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
তখন থেকেই চতুর্মুখী গুঞ্জন ছিল নতুন ছাত্র সংগঠনের আত্মপ্রকাশ ঘটবে। কিন্তু এ নিয়ে নেতাকর্মীদের কাউকে মুখ খুলতে দেখা যায়নি। সম্প্রতি কিছু ছাত্রনেতা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নতুন সংগঠন নিয়ে কথা বললেও কবে নাগাদ এর আত্মপ্রকাশ ঘটবে সেটি জানা যায়নি। সোমবার সাবেক ডাকসু নেতা আখতার হোসেন ও অন্য নেতারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন ছাত্র সংগঠনের আত্মপ্রকাশের কথা জানালে বিষয়টি স্পষ্ট হয়।
বিজ্ঞাপন
ডাকসুর সাবেক এ নেতার পাঠানো বিবৃতিতে বলা হয়, আমরা দেখতে পাচ্ছি যে বাংলাদেশ আজ এক ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। ইতিহাসের ভুলত্রুটি শুধরে বর্তমানের সংকট নিরসন করে এক নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের প্রত্যাশা সবার। এর জন্য প্রয়োজন সময়োপযোগী রাজনীতি, চিন্তা ও নেতৃত্ব গঠন। বাংলাদেশে ঐতিহাসিকভাবে ছাত্ররাজনীতি নেতৃত্ব বিকাশ ও রাজনৈতিক শিক্ষার আঁতুড়ঘর হিসেবে কাজ করেছে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক বন্দোবস্ত ও শিক্ষাব্যবস্থায় যে দীর্ঘমেয়াদি ক্ষত ও অব্যবস্থাপনা তৈরি হয়েছে তার পুনর্গঠনে প্রয়োজন দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ও ধারাবাহিক সক্রিয়তা। এ কার্যক্রমে শিক্ষার্থী ও তরুণদের রাজনৈতিক অংশগ্রহণ ও নেতৃত্ব অতি জরুরি বিষয়।
শিক্ষার্থীদের রাজনীতিবিমুখের কারণ উল্লেখ করে বলা হয়, করোনা-পরবর্তী সময়ে ছাত্ররাজনীতি যেন মুখ থুবড়ে পড়েছে। ২০১৯ সালের ডাকসু নির্বাচনের উত্তাপের রেশ কাটতে না কাটতেই বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলোতে তৈরি হয়েছে রাজনৈতিক শূন্যতা। আমরা আশা করেছিলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে ও অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও ছাত্র সংসদ চালু হবে এবং ছাত্র নেতৃত্ব তৈরি হবে। কিন্তু আমরা লক্ষ্য করলাম, ক্যাম্পাসগুলোতে রাজনৈতিক পরিসর আরও সংকুচিত হয়েছে। এসময়ের ছাত্ররাজনীতি ইস্যুভিত্তিক কর্মসূচি ও প্রতিক্রিয়া ছাড়া শিক্ষার্থীদের সামনে কোনো সামষ্টিক ভিশন তৈরি করতে পারেনি। ছাত্ররাজনীতির স্বতন্ত্র ও স্বাধীন ধারা বিকশিত না হওয়ায় সাধারণ শিক্ষার্থীরাও রাজনীতিবিমুখ হয়ে পড়েছে।
নতুন ছাত্র সংগঠনের প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে বলা হয়, ছাত্ররাজনীতির এ পর্যালোচনা ও নতুন একটি ছাত্ররাজনীতি বিকাশের লক্ষ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ও জনপরিসরে স্বতঃস্ফূর্তভাবে বিভিন্ন আড্ডা, সেমিনার ও প্ল্যাটফর্ম তৈরি হয়েছে। কিছু শিক্ষার্থী চিন্তা বিনির্মাণের লক্ষ্যে এসব উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। পাশাপাশি ক্রিয়াশীল বিভিন্ন সংগঠনের প্রতি শিক্ষার্থীদের অনাস্থা তৈরি হয়েছে। সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনায় শিক্ষার্থীদের রাজনৈতিক বিকাশের জন্য আমরা একটি নতুন প্ল্যাটফর্মের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছি।
বিবৃতিতে বলা হয়, নতুন সংগঠন গড়ার লক্ষ্যে আমরা গত কয়েক মাস ধরে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে সক্রিয় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা ও মতবিনিময়ের মাধ্যমে একটি নতুন ছাত্র সংগঠন গঠন করার সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছি। শিক্ষাব্যবস্থার পুনর্গঠন, শিক্ষার্থী কল্যাণ, রাজনৈতিক পরিসর ও নেতৃত্ব তৈরির লক্ষ্যে ৪ অক্টোবর (বুধবার) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে একটি জাতীয় ছাত্র সংগঠনের ঘোষণা ও আত্মপ্রকাশ উপলক্ষ্যে আমরা একটি সংবাদ সম্মেলন আহ্বান করছি।
নতুন এ সংগঠনের নেতৃত্বে আখতার হোসেনের সঙ্গে নাহিদ ইসলাম নামের একজনের আসার কথা নিশ্চিত করেছেন ছাত্র অধিকার পরিষদের সাবেক এক নেতা। নাহিদ ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। তিনি সর্বশেষ ডাকসু নির্বাচনে অধিকার পরিষদের প্যানেল থেকে সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক পদে নির্বাচন করে ছাত্রলীগের প্যানেলের কাছে পরাজিত হয়েছিলেন। তারপর অবশ্য তিনি ছাত্র অধিকার পরিষদের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না।
সংগঠনটির নেতৃত্বে কারা আসতে পারেন– এমন প্রশ্নের জবাবে ছাত্র অধিকার পরিষদের সাবেক এক নেতা বলেন, এখানে শুধু পদত্যাগ করা নেতারা থাকবেন, এমনটা বললে ভুল হবে। বরং বাইরের নেতারাই এখানে বেশি থাকবেন। এটি নতুন একটি সংগঠন, যেখানে ছাত্র অধিকার পরিষদের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক থাকবে না।
এ বিষয়ে জানতে আখতার হোসেনকে কল করা হলেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
কেএইচ/এসএসএইচ/