উচ্চমাধ্যমিক শ্রেণির প্রথম ক্লাস। স্বপ্নের প্রতিষ্ঠানে প্রথমবারের মতো পা রাখার অনুভূতিই অন্যরকম। সফেদ শার্ট, কালো প্যান্ট-জুতা আর ক্রস ব্যাগ কাঁধে সকাল থেকেই অপেক্ষা একঝাঁক নবীন শিক্ষার্থীর। তাদের চোখেমুখে ফুটে উঠছে উচ্ছ্বাস, সঙ্গে বড় হওয়ার স্বপ্ন আর বুকভরা আশা। তবে তাদের কিছুটা উৎকণ্ঠাও দেখা গেল।

কারণ, উচ্চশিক্ষার বৈতরণির শুরুর ধাপে উচ্চমাধ্যমিক পড়তে প্রিয়জন ছেড়ে প্রথমবারের মতো ঢাকায় পা রেখেছেন অনেকেই। তবে কিছু সময়ের মধ্যেই উবে যায় সব উৎকণ্ঠা। শিক্ষকদের উষ্ণ অভ্যর্থনা ও দিকনির্দেশনায় সব ভুলে সুশৃঙ্খলভাবে শ্রেণিকক্ষে কলেজ জীবনের প্রথম ক্লাস শুরু করে নবীনরা। তার আগে অবশ্য জাতীয় সংগীত আর শপথ বাক্য পাঠের মধ্যদিয়ে দেশপ্রেম, নিয়মানুবর্তিতা, সৎ ও যোগ্য হিসেবে নিজেকে গড়ে তোলার প্রত্যয়ে ধারণ করেন।

সোমবার (৯ অক্টোবর) সকাল থেকে রাজধানীর ঢাকা কলেজের চিত্র ছিল এমনই। মূলত, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুসারে উচ্চমাধ্যমিকের একাদশ শ্রেণির (২০২৩-২০২৪ শিক্ষাবর্ষ) শিক্ষার্থীদের ক্লাস ৮ অক্টোবর (রোববার) শুরু হওয়ার কথা থাকলেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষার কারণে তা শুরু হয়নি। সেজন্য আনুষ্ঠানিকভাবে আজ থেকে ঢাকা কলেজে শুরু হয়েছে একাদশ শ্রেণির ক্লাস। এছাড়া ওরিয়েন্টেশন প্রোগ্রামের মাধ্যমে বরণ করে নেওয়ার প্রস্তুতিও সম্পন্ন হয়েছে।

ঢাকা কলেজের পাঠ পরিকল্পনা, উন্নয়ন ও নিবিড় পর্যবেক্ষণ কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক পুরঞ্জয় বিশ্বাস জানান, ২০২৩-২০২৪ শিক্ষাবর্ষে ঢাকা কলেজে একাদশ শ্রেণিতে বিজ্ঞান, ব্যবসায় শিক্ষা ও মানবিক শাখায় ছাত্র ভর্তি করা হয়েছে। এক্ষেত্রে এসএসসি অথবা সমমান পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা উল্লিখিত বিভাগ অনুসারে কর্তৃপক্ষের নির্ধারিত জিপিএ অনুযায়ী আবেদনের যোগ্য বলে বিবেচিত হয়েছেন।

এবার বিজ্ঞান বিভাগে  ৯০০ জন, ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে ১৫০ জন এবং মানবিক বিভাগে ১৫০ জন শিক্ষার্থীকে ভর্তি করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

ঢাকা কলেজ শিক্ষক পরিষদের সম্পাদক ড. মো. আব্দুল কুদ্দুস সিকদার বলেন, উৎসবমুখর পরিবেশের মধ্যদিয়ে নতুন শিক্ষার্থীদের ক্লাস শুরু হয়েছে। সকাল থেকে নবীন শিক্ষার্থীদের প্রাণবন্ত উপস্থিতিতে ক্যাম্পাসে প্রাণচাঞ্চল্য তৈরি হয়। প্রথম দিন ওরিয়েন্টেশন প্রোগ্রাম অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে আবার তাদের আনুষ্ঠানিকভাবে বরণ করে নেওয়া হবে।

এদিন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (কলেজ ও প্রশাসন) অধ্যাপক মো. শাহেদুল খবির চৌধুরী অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে নবীন শিক্ষার্থীদের দিকনির্দেশনা দেবেন।

স্বপ্নের প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয়ে আত্মসন্তুষ্টির কোনও কমতি ছিল না শিক্ষার্থীদের। রবিউল হাসান নামের নবীন এক শিক্ষার্থী বলেন, ঢাকা কলেজে পড়ার স্বপ্ন অনেক দিনের। ইতিহাস ঐতিহ্য এবং পড়ালেখার মানের কারণে প্রথম পছন্দ ছিল ঢাকা কলেজ। শঙ্কিত ছিলাম যে ভর্তি হতে পারব কিনা। সবশেষ স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। আজ  ক্লাস করতে এসেছি। সবমিলিয়ে অনেক ভালো লাগা কাজ করছে।

হাসিবুল হাসান নামের আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ঢাকা কলেজে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীর পরিমাণ বেশি হওয়ায় খুব হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয়। নম্বরের কারণে আমার সাথের অনেকেই ঢাকা কলেজে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাননি। আমিও খুব চিন্তায় ছিলাম যে ঢাকা কলেজে সুযোগ পাব কি না। স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। আশা করছি অভিজ্ঞ ও দেশবরেণ্য শিক্ষকদের তত্ত্বাবধানে থেকে ভবিষ্যৎ জীবনে অনেক বড় জায়গায় পৌঁছাতে পারবো।

শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরি করতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জানান ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক মোহাম্মদ ইউসুফ। তিনি বলেন, প্রায় ২০০ বছরের কাছাকাছি বয়স ঢাকা কলেজের। এ দীর্ঘ সময় ধরে ঢাকা কলেজ ঐতিহ্য এবং গৌরব ধরে রেখেছে। নবীন শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলবো— নিয়মিত ক্লাস পরীক্ষায় অংশ নেন এবং কলেজের সব নিয়মকানুন মেনে চলুন।

তিনি আরও বলেন, শুধু পড়াশোনাই নয় বরং অন্যান্য ক্ষেত্রেও যোগ্য করে গড়ে তুলতে সহশিক্ষা কার্যক্রমের সুযোগ আমরা করে দেই। এখানে অনেকগুলো ক্লাব রয়েছে। সেগুলোতে শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করবে সেই প্রত্যাশা রাখছি।

এমজে