হরতাল-অবরোধে আতঙ্ক বাড়ছে শিক্ষার্থীদের
বিএনপি-জামায়াতের লাগাতার অবরোধের ফলে সারাদেশেই তৈরি হচ্ছে অস্থিতিশীল পরিবেশ। ঘটছে একের পর এক পরিবহনে আগুন দেওয়ার ঘটনা। যার রেশ থেকে পার পাচ্ছে না বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বহনকারী বাসগুলোও। এতে দিন যত গড়াচ্ছে ততই আতঙ্কিত হয়ে পড়ছেন শিক্ষার্থীরা।
গত বুধবার রাজধানী মিরপুর-১২ নম্বরে বেসরকারি গ্রিন ইউনিভার্সিটির একটি বাসে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটে। এরপর শনিবার সন্ধ্যা ৭টা ৩৫ মিনিটে এলিফ্যান্ড রোডে গ্রিন ইউনিভার্সিটির আরেকটি বাসে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনার ২৪ ঘণ্টা না পেরোতেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বহনকারী বাস চৈতালিতে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটে।
বিজ্ঞাপন
এসব ঘটনায় এখন পর্যন্ত হতাহতের খবর না পাওয়া গেলেও তাৎক্ষণিক আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে বাসে যাতায়াত করা শিক্ষার্থীদের মধ্যে। এমন পরিস্থিতিতে সশরীরে ক্লাসে উপস্থিত হতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনীহা দেখা যাচ্ছে।
অবরোধের মধ্যে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ক্লাস করতে অপারগতা প্রকাশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থী। এ নিয়ে অনেককে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্ষোভ ঝারতেও দেখা যায়। অনেকেই আবার অনলাইনে ক্লাস চালুর দাবি জানিয়েছেন।
বিজ্ঞাপন
তবে, এমন পরিস্থিতিতেও পরীক্ষা কার্যক্রম চালু রাখায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রতি সন্তোষ প্রকাশ করেছেন অনেকেই। তাদের মতে, পরীক্ষা স্থগিত করলে সেশনজট হবে। চলমান পরিস্থিতিতে সাময়িক কিছুটা ভোগান্তি হলেও সঠিক সময়ে পড়াশোনা শেষ করে চাকরির প্রস্তুতি নিতে পারবেন বলে আশাবাদী তারা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে যাতায়াত করা সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ তারিক বলেন, আমি প্রতিদিনই মিরপুরের কালশী থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে যাতায়াত করি। চলতি সপ্তাহে বুধবার আমার সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা। আবার একই দিনে বিরোধীদল অবরোধের ঘোষণাও দিয়েছে। এর মধ্যে খবর পেলাম চৈতালী বাসে কারা যেন আগুন লাগিয়েছে। এর আগে গ্রিন ইউনিভার্সিটির বাসে আগুন দেওয়া হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে সুস্থভাবে ক্যাম্পাসে পৌঁছানো এবং পরিক্ষায় অংশগ্রহণ করা নিয়ে আমি খুবই চিন্তিত। তাছাড়া এই অল্প সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশে থাকার ব্যবস্থা করাও আমার জন্য সম্ভব হবে না।
অনলাইনে ক্লাসের দাবি জানিয়ে আরেক শিক্ষার্থী রকিবুল হাসান বলেন, দেশে রাজনৈতিক সহিংসতা বেড়েই চলছে। মানুষ ভয়ে রাস্তাঘাটে বের হচ্ছে না। কিন্তু এত কিছুর পরেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ক্যাম্পাস খোলা রাখতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। এই আধুনিক যুগে এসেও অনলাইন ক্লাসের দিকে তাদের মনোনিবেশ নেই।
এদিকে আজ বিকেলে শিক্ষার্থীদের নামিয়ে ফেরার পথে সরকারি বাংলা কলেজের সামনে চৈতালি বাসের দোতলায় একটি সিটে আগুন দিয়ে পালিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। এসময় বাংলা কলেজের শিক্ষার্থীদের সহায়তায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। যাত্রীর বেশে দুর্বৃত্তরা বাসের দোতলায় উঠে দিয়াশলাই দিয়ে সিটে আগুন লাগানোর চেষ্টা করে পালিয়ে যায় বলে জানান বাসের চালক মোহাম্মদ নিজামউদ্দিন।
এর আগে গত ৩১ অক্টোবর সকাল ৬টা ৪০ মিনিটের দিকে রাজধানীর বনানীর পার্শ্ববর্তী এলাকায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক বাস ক্ষণিকার কয়েকশো গজ দূরে ককটেল বিস্ফোরণ হয়। তাৎক্ষণিক বাসের শিক্ষার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় অনেকেই বোমা বিস্ফোরিত হয়েছে বলে ভয়ে চিৎকার শুরু করেন। তার আগের দিন গত ৩০ অক্টোবর সকাল সাড়ে ৯টার দিকে মিরপুরের প্রশিকা মোড়ে ঢাবির চৈতালি বাসে গার্মেন্টস কর্মীরা হামলা চালায়। সরকারি বিআরটিসি বাস ভেবে ভেতরে ইট-পাটকেল ছুঁড়ে। পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস বুঝতে পেরে ছেড়ে দেওয়া হয়।
আরও পড়ুন
এ প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মাকসুদুর রহমান বলেন, বিআরটিসি বাসগুলো শিক্ষার্থীদের নামিয়ে ফেরার পথে যাত্রী নিয়ে ফিরে। এ সময় তারা যাত্রী হিসেবে যাদের বাসে তুলেছিল তাদেরই কেউ একজন দিয়াশলাই দিয়ে সিটে আগুন লাগানোর চেষ্টা করে। এখানে পেট্রোল বা অন্য কোনো কিছুই ব্যবহার করা হয়নি। বাসচালক ও হেল্পারদের কারণেই এই আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে।
এ সময় তিনি শিক্ষার্থীদের সতর্ক থাকতে এবং তুচ্ছ ঘটনায় আতঙ্কিত না হয়ে ধৈর্যের সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবিলার অনুরোধ করেন।
সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা শিক্ষার্থীদের সেশনজটে ফেলতে চাই না। ২০১০ সাল থেকে হরতাল-অবরোধের সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক কার্যক্রম চলছিল বিধায় শিক্ষার্থীদের সেশনজট থেকে মুক্তি দিতে পেরেছিলাম। এখনও আমরা চাই না শিক্ষার্থীরা অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম ব্যাহত হোক।
অনলাইন ক্লাস নেওয়া যায় কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুসারে আমরা কিছু সংখ্যক ক্লাস অনলাইনে নেব। তবে সেটা পরিস্থিতির উপর নির্ভর করবে। এর চেয়ে অনেক খারাপ পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয় খোলা ছিল, নিয়মিত ক্লাসও হয়েছে। আবার বিশেষ প্রয়োজনে কোভিডের সময় অনলাইনে ক্লাস নিয়েছি। এবারও দেশের সার্বিক পরিস্থিতি যদি আরও অবনতির দিকে যায় তবেই আমরা অনলাইনে ক্লাস নেওয়ার কথা চিন্তা করবো।
চৈতালি বাসে আগুনের বিষয়ে তিনি বলেন, বাসে আগুনটা লাগেনি বরং কেউ লাগিয়েছে। কিন্তু কীভাবে বাসে আগুন লেগেছে, এটা আমরা এখনো নিশ্চিতভাবে জানি না। এ বিষয়ে তদন্তের মাধ্যমে আমরা সিদ্ধান্ত নেব।
সব রাজনৈতিক দলের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, শিক্ষার্থীরা দেশের ভবিষ্যৎ। রাজনীতি থাকবে রাজনীতির জায়গায়। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রমে যেন ব্যাঘাত না ঘটে সেদিকে আমাদের খেয়াল রাখতে হবে। আমরা আশা করবো তারা যেন শিক্ষার্থীদের প্রতি সহানুভূতিশীল হয় এবং এ ব্যাপারে তাদের সহযোগিতা কামনা করছি।
এমজে