আবারও সাংবাদিকের ওপর হামলা করেছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) কৃষি অনুষদ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি শাহীনুর রেজা সুমন। এবার তার হামলার শিকার হয়েছেন বাকৃবি সাংবাদিক সমিতির সভাপতি ও দৈনিক সমকালের প্রতিনিধি আশিকুর রহমান। এর আগেও সাংবাদিকের ওপর হামলা, নিরাপত্তাকর্মীকে মারধরসহ একাধিক অভিযোগ রয়েছে শাহীনের বিরুদ্ধে। মারধরের ঘটনাগুলো নিয়ে তদন্ত কমিটি গঠিত হলেও কোনো বিচার হয়নি। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের সিসিটিভি ফুটেজ দেখে জানা যায়, মঙ্গলবার (২১ নভেম্বর) বিকেল ৩টার দিকে আশিকুর রহমান দুপুরের খাবার খেতে বিশ্ববিদ্যালয়ের জব্বার মোড়ে অবস্থিত সজীব হোটেলে গিয়েছিলেন। এ সময় বাকৃবির কৃষি অনুষদ ছাত্রলীগের সভাপতি শাহীনুর রেজা সুমন, পশুপালন অনুষদ ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সৌরভ মেহেরাবসহ আরও অনেকে দোকানে উপস্থিত ছিলেন। একপর্যায়ে আশিকুর রহমানের অর্ডারকৃত খাবার হোটেল বয় শাহীনুরকে দিয়ে দেন। তখন আশিকুর খাবারের বিষয়ে দোকানদারের সাথে কথা বলতে গেলে শাহীন ও তার সঙ্গী সৌরভ তাকে এলোপাথাড়ি চড়থাপ্পড় মারতে থাকেন। ফুটেজে দোকানদারকে মারধর ঠেকাতেও দেখা যায়।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রবিষয়ক উপদেষ্টা ও প্রক্টর বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগী আশিকুর রহমান। জানা যায়, শাহীনুর রেজা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. মেহেদী হাসানের অনুসারী। তিনি শামসুল হক হল ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি।

ভুক্তভোগী আশিকুর রহমান বলেন, আমি যে খাবারটি অর্ডার করেছিলাম, সেটি শাহীনুর রেজা পার্সেল নিয়ে নেয়। এ বিষয়ে দোকানদারের সাথে কথা বলছিলাম। সেসময় পেছন থেকে শাহীন আমার ওপর অতর্কিত হামলা করে। আমি বিচার চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে অভিযোগ দিয়েছি। প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে আমি পরবর্তীতে আইনের আশ্রয় নিতে বাধ্য হবো।

অভিযুক্ত শাহীনুর রেজা বলেন, খাবার নিয়ে আশিকুর রহমানের সাথে কথা কাটাকাটি ও কিছুটা ধাক্কাধাক্কি হয়েছে। তবে সেখানে মারামারির কোনো ঘটনা ঘটেনি।

আরেক অভিযুক্ত সৌরভ মেহেরাব জানান, খাবার নিয়ে শাহীন ভাইয়ের সাথে তার (আশিকুর রহমান) কথা কাটাকাটি হয়। একসময় শাহীন ভাইয়ের সাথে বেয়াদবি শুরু করলে তার গায়ে হাত তুলি।

এ বিষয়ে বাকৃবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. মেহেদী হাসানের মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি। এছাড়া সভাপতি খন্দকার তায়েফুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

ভুক্তভোগীর লিখিত অভিযোগ গ্রহণকালে অধ্যাপক ড. হারুন-অর-রশিদ বলেন, আমরা ঘটনার বিষয়ে একটি লিখিত অভিযোগ হাতে পেয়েছি। এ বিষয়ে আলোচনা করে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

প্রসঙ্গত, এর আগে ২০২২ সালের ২৬ মার্চের একটি ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ দেখাকে কেন্দ্র করে ২৮ মার্চ বিকেলে সড়ক অবরোধ করেন ছাত্রলীগের কর্মীরা। এ সময় তাদের গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনার ভিডিও করায় একজন সাংবাদিককে মারধর করে শাহীনুর রেজাসহ আরও অনেকে। এ ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠিত হলেও এখন পর্যন্ত কোনো বিচার হয়নি। এছাড়া গত বছর মধ্যরাতে একজন নিরাপত্তাকর্মীকে মারধরের সাথেও শাহীনের সম্পৃক্ততার অভিযোগ রয়েছে।

মুসাদ্দিকুল ইসলাম তানভীর /আরএআর