কে হবেন ঢাবির পরবর্তী উপ-উপাচার্য?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৯তম উপাচার্য হিসেবে ৪ নভেম্বর দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন প্রো-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামাল। উপাচার্য হিসেবে যোগদানের পর তার স্থলাভিষিক্ত কে হবেন তা নিয়ে আলোচনার যেন শেষ নেই। এ পদ পেতে ইতোমধ্যে সরকারের উচ্চপর্যায়ে তদবির শুরু করে দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কয়েকজন শিক্ষক। তাছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ এ পদের জন্য তিন জন অধ্যাপকের তালিকা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে গেলেও প্রধানমন্ত্রী সেটা গ্রহণ না করে ফিরিয়ে দেন বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আদেশ অনুযায়ী, দায়িত্ব বণ্টনের ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) ও উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) দুই ভাগে বিভক্ত। উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) বিভিন্ন দায়িত্বের পাশাপাশি শিক্ষক নিয়োগ বোর্ডের সভাপতি হিসেবে দায়িত্বে থাকেন। উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) বিভিন্ন দায়িত্বের পাশাপাশি কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ দিয়ে থাকেন।
বিজ্ঞাপন
বর্তমানে উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) দায়িত্বে আছেন সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ। গত বছরের ১২ এপ্রিল দ্বিতীয় মেয়াদে ৪ বছরের জন্য তাকে এ পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। সে হিসাবে তিনি এখনো প্রায় আড়াই বছর দায়িত্ব পালন করতে পারবেন। কিন্তু উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. মাকসুদ কামাল উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পাওয়ায় তার পদটি শূন্য হয়ে যায়। এ পদে তার স্থলাভিষিক্ত কে হবেন তা নিয়েই চলছে আলোচনা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আদেশ ১৯৭৩ এর ১৩ (১) ধারা অনুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য ও রাষ্ট্রপতি যদি কাউকে উপ-উপাচার্য পদে উপযুক্ত মনে করেন, তাহলে তাকে নির্দিষ্ট একটি মেয়াদের জন্য নিয়োগ দিতে পারেন এবং যেকোনো সময় এ নিয়োগ বাতিলও করতে পারেন। সাধারণত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে উপ-উপাচার্য পদে রাষ্ট্রপতি চার বছরের জন্য নিয়োগ দিয়ে থাকেন।
বিজ্ঞাপন
বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, উপাচার্য নিয়োগের ক্ষেত্রে সিনেট থেকে তিন জনের নাম প্রস্তাবিত হলেও উপ-উপাচার্য নিয়োগের ক্ষেত্রে এমনটা হয় না। শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে প্রধানমন্ত্রীর কাছে এক বা একাধিক নাম প্রস্তাব করা হয়। তখন প্রধানমন্ত্রী কাউকে পছন্দ করলে রাষ্ট্রপতির কাছে ফাইল চলে যায়। রাষ্ট্রপতি তা অনুমোদন করে পুনরায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দেন। পরবর্তীতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রজ্ঞাপন আকারে মনোনীত ব্যক্তিকে নিয়োগ প্রদান করে।
আরও পড়ুন
সাধারণত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে পরামর্শ করে তিন জনের একটি তালিকা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে থাকেন এবং সেই তালিকা প্রধানমন্ত্রীর অফিসে পাঠানো হয়। সেখান থেকে প্রধানমন্ত্রীর অভিপ্রায় অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি চাইলে একজনকে মনোনীত করেন অথবা তাদের বাদ রেখে অন্য কাউকে মনোনীত করে প্রজ্ঞাপন প্রকাশ করার আদেশ প্রদান করেন।
একাধিক সিনেট সদস্যের মাধ্যমে জানা যায়, ইতোপূর্বে নীল দলের আহ্বায়ক ও ফার্মেসি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. সীতেশ চন্দ্র বাছার, বিজ্ঞান অনুষদের ডিন ও ফলিত গণিত বিভাগের অধ্যাপক ড. আবদুস সামাদ, কলা অনুষদের ডিন, বিজয় একাত্তর হল প্রাধ্যক্ষ এবং ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক আবদুল বাছির– এই তিন অধ্যাপকের একটি তালিকা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হয়েছিল কিন্তু প্রধানমন্ত্রী তা গ্রহণ না করে ফিরিয়ে দেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ডিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরাও শুনেছি তিন জনের নামের লিস্ট শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে কিন্তু প্রধানমন্ত্রী সেটা গ্রহণ করেননি। আবার বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগের নামের লিস্টও প্রধানমন্ত্রী ফেরত পাঠিয়েছেন। তবে কেন এমনটা করা হয়েছে, আমাদের জানা নেই। তবে কতদিন পর পুনরায় নাম পাঠানো হবে বা এই শূন্য পদে একজনকে কখন নিয়োগ দেওয়া হবে, সেটা জানি না।
সূত্র জানায়, উপ-উপাচার্য পদের দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কয়েকজন অধ্যাপক। তারা হলেন– নীল দলের আহ্বায়ক ও ফার্মেসি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. সীতেশ চন্দ্র বাছার; বিশ্ববিদ্যালয়ে বিজ্ঞান অনুষদের ডিন ও ফলিত গণিত বিভাগের অধ্যাপক ড. আবদুস সামাদ; কলা অনুষদের ডিন, বিজয় একাত্তর হল প্রাধ্যক্ষ এবং ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক আবদুল বাছির; সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন ও অপরাধ বিভাগের প্রতিষ্ঠাকালীন চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. জিয়া রহমান; শিক্ষক সমিতির বর্তমান সভাপতি অধ্যাপক ড. নিজামুল হক ভূঁইয়া; টেলিভিশন, ফিল্ম অ্যান্ড ফটোগ্রাফি বিভাগের প্রতিষ্ঠাকালীন চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এজেএম শফিউল আলম ভূঁইয়া; ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) চেয়ারম্যান ও ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি অনুষদের ডিন অধ্যাপক হাফিজ মুহম্মদ হাসান এবং সাবেক প্রক্টর এবং ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রব্বানী।
নারীদের মধ্যে আলোচনায় যারা– সমাজবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম, শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. জিনাত হুদা, রোবটিক্স অ্যান্ড মেকাট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্টের অধ্যাপক ড. লাফিফা জামাল।
এ বিষয়ে বিজ্ঞান অনুষদের ডিন ও ফলিত গণিত বিভাগের অধ্যাপক ড. আবদুস সামাদ বলেন, আমাদের ভেতরে আলাদা কোনো বিষয় নেই, আমরা সবাই একই আদর্শের মানুষ, আমাদের সবার উদ্দেশ্যও এক। আমরা সবাই চাই বিশ্ববিদ্যালয় এগিয়ে যাক। যে-ই এ পদে আসুক না কেন, আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়েই বিশ্ববিদ্যালয়ের সামগ্রিক কল্যাণ ও বিশ্ববিদ্যালয়কে অনেক দূর এগিয়ে নিতে কাজ করে যাব। প্রধানমন্ত্রী যাকে পছন্দ করবেন তিনিই এ পদের মনোনীত হবেন, এতে আমাদের কারো দ্বিমত থাকবে না।
কলা অনুষদের ডিন এবং ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক আবদুল বাছির ঢাকা পোস্টকে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছা অনুযায়ী একজনকে উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) পদে মনোনীত করা হবে। তিনি যাকে নিয়োগ দেবেন তার সঙ্গে মিলেই আমরা আমাদের কাজ করে যাব। এখানে কে মনোনীত হলো আর কে হলো না, এ নিয়ে মন খারাপ বা অন্য কিছু ভাবার সুযোগ নেই। যেহেতু এ পদ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, সেহেতু আমি মনে করি এ পদে যিনি মনোনীত হবেন তিনি অবশ্যই যোগ্য ও ভালো মনের মানুষ হবেন, যিনি সবাইকে নিয়ে কাজ করতে পারবেন।
কেএইচ/এসএসএইচ