ঢাকার ধামরাইয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) সাবেক শিক্ষার্থী ও ৪১তম বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত রুবেল পারভেজ বাসচাপায় নিহতের ঘটনায় তৃতীয় দিনের মতো সেলফী পরিবহনের ২৫টি বাস আটকে রেখেছে জাবির শিক্ষার্থীরা।

এ ঘটনায় নিহতের পরিবারকে ২৫ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণের দাবি জানিয়েছেন তারা। শনিবার (৯ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত কোনো সমঝোতা না হওয়ায় আজও বাসগুলো আটক আছে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জানান, গত ৭ ডিসেম্বর (বৃহস্পতিবার) সকাল ৯টার দিকে কর্মস্থল মানিকগঞ্জের মার্কেন্টাইল ব্যাংকে যাওয়ার জন্য ধামরাই থানা বাসস্ট্যান্ডে বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলেন রুবেল পারভেজসহ তিনজন। এ সময় সেলফী পরিবহনের দুটি বাস প্রতিযোগিতা করে যাওয়ার সময় একটি বাস তাদের চাপা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই জাবির সাবেক শিক্ষার্থী রুবেল পারভেজ ও আব্দুল মান্নান নামের একজন মারা যান। এছাড়া গুরুতর আহত হন আরও একজন। এ খবর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে পড়লে দুপুরে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের ডেইরি গেটে সেলফী পরিবহনের বাস আটক করতে থাকেন শিক্ষার্থীরা। পরে একে একে ২৫টি বাস আটক করেন তারা। পরদিন রুবেলকে হত্যাকাণ্ড উল্লেখ করে বিচারের দাবিতে মানববন্ধন করেন শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষার্থীরা আরও জানান, বাস আটক করে নিহতের পরিবারের জন্য তারা সেলফী পরিবহন কর্তৃপক্ষের কাছে ২৫ লাখ টাকা দাবি করেন। এ নিয়ে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও সেলফী পরিবহন কর্তৃপক্ষের কয়েক দফায় আলোচনা হলেও সর্বশেষ নিহতের পরিবারকে ৩ লাখ টাকা দিতে চায় সেলফী পরিবহন কর্তৃপক্ষ। তবে শিক্ষার্থীদের দাবি ২৫ লাখ টাকা মেনে না নেওয়ায় আজও বাস আটক রাখেন তারা।

এ ব্যাপারে সেলফী পরিবহনের পরিচালক মো. রফিকুল ইসলাম রফিক ঢাকা পোস্টকে বলেন, শিক্ষার্থীরা প্রথমে ৫০ লাখ টাকা দাবি করেন। তাদের সঙ্গে আলোচনা হলে সর্বশেষ ২৫ লাখ টাকার কথা বলেন। আমরা তিন লাখ টাকা দিতে চেয়েছি। একজন মালিক সারা জীবনের আয় ও জমি বিক্রি করে গাড়ি কিনেছেন। তিনি কীভাবে ২৫ লাখ টাকা দেবেন? গাড়ির মালিকের এত টাকা দেওয়ার সামর্থ্য না থাকায় আলোচনা অমীমাংসিত রয়ে গেছে। শিক্ষার্থীদের কথা হলো ২৫ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ না দিলে তারা এই সড়কে সেলফী পরিবহন চালাতে দেবে না।

এ ব্যাপারে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর ও অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক মো. রনি হোসাইন ঢাকা পোস্টকে বলেন, শিক্ষার্থীরা মালিকপক্ষের কাছে নিহত রুবেল পারভেজের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার, সেলফী পরিবহনের রুট পারমিট বাতিল ও ড্রাইভারকে গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছেন। দাবি না মানলে শিক্ষার্থীরা বাসগুলো ছাড়বে না। আমরা আবার সেলফী পরিবহন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে নিহতের পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বসব।

উল্লেখ্য, রুবেল পারভেজ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের ৪০তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি ৪১তম বিসিএস পরীক্ষায় সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছিলেন। রুবেল পারভেজ টাঙ্গাইলের মির্জাপুর থানার মৃত মোকছেদ আলীর ছেলে। বাবা মারা যাওয়ার পর ছোট দুই ভাই ও এক বোনকে টিউশনি করিয়ে লেখাপড়া করিয়েছেন তিনি। রুবেল পারভেজের ১৬ মাস বয়সী একটি মেয়ে রয়েছে।

মাহিদুল মাহিদ/এমজেইউ