কোনো রকম ছুটি ছাড়াই প্রায় চার বছর ধরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় (বেরোবি) ক্যাম্পাস ও বিভাগে না আসা এবং পিএইচডি করার অভিযোগ উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের প্রভাষক মাশরেকি মুস্তারির বিরুদ্ধে।

জানা যায়, ২০১৮ সালের ১২ ডিসেম্বর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগে যোগদান করেন মাশরেকি মুস্তারি। ক্যাম্পাসে না এসেই ঢাকায় অবস্থিত তৎকালীন বিশ্ববিদ্যালয়ের লিয়াজোঁ অফিসে যোগদান করেন তিনি। যোগদানের পর থেকেই লিয়াজোঁ অফিসে বুনিয়াদি প্রশিক্ষণের জন্য এক বছর ঢাকাতেই অবস্থান করেন তিনি। এরপর প্রশিক্ষণ শেষে ক্যাম্পাসে ফিরে ২০১৯ সালে শিক্ষার্থীদের মাত্র কয়েকটি ক্লাস নিয়েছেন। ২০১৯ সালের পর থেকে বিভাগের কোনো কোর্স নেননি। এমনকি বিভাগেও উপস্থিত হননি।

তিনি কর্মস্থলে উপস্থিত না থেকেই প্রায় দুই বছর নিয়মিত বেতন-ভাতা ও অন্যান্য সুবিধা নিয়েছেন। এরপর ২০২১ সালের নভেম্বর মাসে এই প্রভাষকের বেতন-ভাতা বন্ধ করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অনুমতি ছাড়াই তিনি বছরের পর বছর ধরে অবস্থান করছেন দেশের বাইরে। জাপানে পিএইচডি করলেও কোনো প্রকার শিক্ষা ছুটির জন্য কখনো আবেদন করেননি তিনি।

এদিকে দীর্ঘদিন বিধিবহির্ভূতভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকার কারণ জানতে চেয়ে সেই শিক্ষককে নোটিশ দেয় প্রশাসন। পরে এর জবাবও দেন তিনি। নোটিশের জবাব যথাযথ না হওয়ায় একটি কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

বিভাগের শিক্ষার্থীরা ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের বিভাগে এমনিতেই শিক্ষার্থী অনুপাতে শিক্ষক কম। এর মধ্যে যদি কোনো শিক্ষক অনুপস্থিত থাকেন তাহলে আমাদের কোর্সগুলো শেষ করতে হিমশিম খেতে হয়।

এ বিষয়ে লোকপ্রশাসন বিভাগের প্রধান আসাদুজ্জামান মন্ডল আসাদ বলেন, আমি চেয়ারম্যান হওয়ার পরও তাকে বেশ কয়েকবার বলেছি যে, শিক্ষক সংকট আছে আপনি চলে আসেন। উনি তারপরও আসেননি। তারপর বিভাগ থেকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন মতামত চায়। আমরা মতামত দিয়েছি যে, উনি ২০১৯ সাল থেকে বিভাগে অনুপস্থিত। এই ব্যাপারটা দ্রুত সুরাহা করা দরকার।

এ বিষয়ে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন ড. মোরশেদ উল আলম ঢাকা পোস্টকে বলেন, প্রথমত এটা প্রশাসনিক বিষয়। এই বিষয়ে লোকপ্রশাসন ডিপার্টমেন্ট থেকে এখন পর্যন্ত আমাকে কিছু জানানো হয়নি। আমি নতুন ডিন হয়েছি। লোকপ্রশাসন ডিপার্টমেন্ট থেকে যদি এ বিষয়ে আমাকে জানানো হয় পরবর্তীতে আমি সেটা প্রশাসনকে জানাব।

ছুটি ছাড়াই চার বছরের বেশি কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকা কোনো ব্যক্তি শিক্ষকতা করার যোগ্য কি না এমন প্রশ্নে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি শরিফুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিষয়টি তদন্তাধীন আছে। আমরা চাই বিষয়টির দ্রুত সমাধান হোক।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী আলমগীর চৌধুরী বলেন, কেউ নিয়ম ভঙ্গ করে সুবিধা নিতে পারবে না। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. হাসিবুর রশীদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিষয়টি আমি জেনেছি। অধিকতর খোঁজ নেওয়ার জন্য ইতোমধ্যে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। 

এমজেইউ