ভুক্তভোগী চবি ছাত্রলীগ কর্মী মোস্তফা কামাল / ছবি : সংগৃহীত

ফেসবুক স্ট্যাটাসে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের হাতে মারধরের স্মৃতিচারণ করেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) শাখা ছাত্রলীগের আরেক ছাত্রলীগ কর্মী। অ্যাকাডেমিক ক্যারিয়ারের কথা না ভেবে ছাত্রলীগ করার প্রতিদান হিসেবে মারধরের বিষয়ে আক্ষেপ প্রকাশ করেন তিনি। এ ঘটনায় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বিচার চান তিনি।

ভুক্তভোগী ছাত্রলীগ কর্মীর নাম মোস্তফা কামাল। তিনি ছাত্রলীগের উপগ্রুপ সিক্সটি নাইনের কর্মী ও ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের মনোবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী। ঘটনাটি ঘটেছে ২০২৩ সালের ১৮ আগস্ট রাত ৩টায় চবি শাহজালাল হলের টিভি রুমের পাশে।

শনিবার (৩০ মার্চ) দুপুরে এক দীর্ঘ ফেসবুক স্ট্যাটাসে ঘটনার বর্ণনা তুলে ধরেছেন মোস্তফা কামাল। 

তিনি লিখেছেন, ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের সমাজতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থী মাহফুজ আনাম ফারুক, ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী আরিফ রাসেল ও শিক্ষা ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের শিক্ষার্থী জোবায়েরসহ আরও বেশ কয়েকজন স্পোর্টস রিলেটেড তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে আমাকে সরি বলার জন্য সেদিন সারাদিন চাপ দিতে থাকে। আমি পরবর্তীতে সরি বলতে রাজি হই। পরে রাত ৩টার দিকে ওরা আমাকে শাহজালাল হলের টিভি রুমের কাছাকাছি যাওয়া মাত্র আমার চোখ-মুখ কালো কাপড়ে শক্ত করে বেঁধে দেয়। এরপর আরিফ ও রাসেল পেছন থেকে সজোরে লাথি মেরে আমাকে রুমে ঢোকায়। 

মাহফুজ আনাম ফারুক রড দিয়ে এলোপাতাড়ি মারতে থাকে। আর পেছন থেকে জোবায়ের আমাকে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ধরে থাকে যেন নড়াচড়া করতে না পারি। টানা ৪০-৫০ মিনিট মারধর করার পর ওরা একটা ব্রেক নেয়... তারপর ওরা বিভিন্ন পলিটিক্যাল ইকুয়েশনের কথাবার্তা বলে।

বাঁ থেকে অভিযুক্ত আরিফুল ইসলাম, মাহফুজ আনাম ফারুক ও জুবায়ের আহমেদ / ছবি : সংগৃহীত

ভুক্তভোগী ওই ছাত্রলীগ কর্মী বলেন, আমি অর্ধমৃত অবস্থায় ওদের জিজ্ঞেস করি আমার অপরাধ টা কী বল। আরিফ রাসেল জবাব দেয়, তোর কোনো অপরাধ নাই, তোর অভার পলিটিক্যাল এক্টিভিটিজ আমাদের পছন্দ না। এজন্যই তোর সাথে এসব হচ্ছে। তোর আব্বু ইকবাল হোসেন টিপু... সাবেক সাধারণ সম্পাদক, চবি শাখা ছাত্রলীগ, রাজু মুনশি, সাবেক সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তোর লিডার রায়হান আলম সাবেক সহ-সম্পাদককে কল দে। দেখি তোর বাপেরা তোরে বাঁচাইতে পারে কি-না।

তিনি আরও লিখেছেন, তখন আমি জবাব দিলাম কাওরে লাগব না, জাস্ট হাত আর চোখের বাঁধন টা খুলে দে, তারপর ওয়ান ভার্সেস ওয়ান খেলব। বলার সাথে সাথে মাহফুজ আনাম ফারুক রামদা দিয়ে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকে। এরপর কি হয়ছে আমি আর বলতে পারি না। দীর্ঘ পাঁচ বছর ক্লাস না করে, অ্যাকাডেমিক ক্যারিয়ারের কথা না ভেবে ছাত্রলীগ করার উপহার হিসেবে চবি ছাত্রলীগের কতিপয় কিছু মানুষ আমাকে ছাত্রলীগ করার প্রতিদান এভাবে দিয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ভুক্তভোগী মোস্তফা কামাল ঢাকা পোস্টকে বলেন, শুধু তিনজন না, সেদিন প্রায় ১৫-২০ জন আমাকে ধরে আমার চোখ বেঁধে মারধর করেছিল। তারা ঘরেরই প্রতিপক্ষ, পলিটিক্যাল কারণে আমাকে মেরেছে। তারা ইস্যু খুঁজছিল কীভাবে আমাকে মারবে। তারা আমার ইমিডিয়েট সিনিয়র, এজন্য মেসি ও রোনালদোকে ট্রল করা নিয়ে আমাকে বিচার করার নামে মারধর করেছে।

অভিযুক্ত সিক্সটি নাইনের কর্মী জুবায়ের আহমেদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, ও যেগুলো বলছে মিথ্যা। আমি কেন ওকে রামদা দিয়ে কোপাতে যাব? আমি কী জানোয়ার না-কি? সেদিন ও খেলাধুলা নিয়ে অশ্লীল ভাষায় গালাগালি করেছিল। পরে তাকে সরি বলার জন্য গ্রুপের মিটিংয়ে ডাকা হয়। তারপর শুধু চড়-থাপ্পড় মারা হয়েছে, আর কিছু না।

এ বিষয়ে আরেক অভিযুক্ত আরিফুল রাসেল ঢাকা পোস্টকে বলেন, ও যে বিষয়ে পোস্ট করেছে তার সঙ্গে ঘটনার কোনো মিল নেই। সে দাবি করছে আমাকে কোপানো হয়েছে। কিন্তু সে হাতের ছবি ব্যতীত কোপানোর কোনো ছবি দেখাননি। এখন বুয়েটকে কেন্দ্র করে ইস্যু চলছে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগকে জড়িয়ে আর একটি অভিযোগ চলে এসেছে। ওই ছেলেটা নেশাগ্রস্ত, ওকে একবার শিবির সন্দেহে আটক করা হয়েছিল। ও হলের বিভিন্ন বিষয় ছাত্রশিবিরের কাছে পাচার করে এমন একটি তথ্য আমাদের কাছে আসে। এছাড়া স্কুল-কলেজে তার জামাত শিবিরের সংশ্লিষ্টতার ব্যাপারে আমরা অনেক আগেই শুনেছি। পরে ওকে বিচারে আওতায় আনা হয়। কারণ চবিতে জুনিয়রদের ওপর সিনিয়রদের শাসনব্যবস্থা আছে। পরে সাময়িকভাবে ওকে বগির বাইরে রাখা হয়। ও এখন মারার বিষয়টি যেভাবে নিয়ে আসছে সেটা সন্দেহজনক। কারণ বিশ্ববিদ্যালয়ে কেউ আহত হলে প্রথমে চবি মেডিকেলে যায় কিন্তু ও গিয়েছে হাটহাজারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত অপর দুই সিক্সটি নাইনের কর্মী আরিফ রাসেল ফোন ও মাহফুজ আনাম ফারুককে ফোন দিলে তাদের ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। 

চবি শাখা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সিক্সটি নাইন গ্রুপের নেতা সাইদুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, যে সময় ঘটনাটি ঘটেছে, তখন ছাত্রলীগের কমিটি ছিল। এ বিষয়ে তখনকার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ভালো বলতে পারবেন। তবে সাত-আট মাস পর যখন ঘটনাটি সামনে আসছে, তাহলে বুঝতে হবে এখানে কিন্তু রয়েছে, কোনো অ্যাজেন্ডা রয়েছে। এ বিষয়ে আমরা খুঁটিয়ে দেখে পরে মন্তব্য করব।

চবি শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসাইন টিপু ঢাকা পোস্টকে বলেন, এটা ২০২৩ সালের আগস্ট মাসের ঘটনা। হলের মধ্যে যখন জুনিয়রদের ঝামেলা হয়, তখন ইমিডিয়েট সিনিয়ররা ম্যানেজ করে। এসব ঘটনা আমাদের পর্যন্ত আসে না। কিন্তু এ বিষয়টা যে এতদূর পর্যন্ত গেছে, তা ওয়াকিবহাল ছিলাম না। আর ও কেন এত দিন পর এটা সামনে আনছেন তা জানি না। সে যদি তখন সিনিয়রদের মাধ্যমে আমার কাছে আসতো, আমি ব্যবস্থা নিতাম। এখন বর্তমানে যারা দায়িত্বে রয়েছে, তাদেরকে বিষয়টি দেখতে হবে।

আতিকুর রহমান/কেএ