মাটিতে থরে থরে সাজানো আছে বাক্স। এসব বাক্স খুলতেই বেরিয়ে আসে ফণা ধরা বিষধর সাপ। এ সাপগুলো দিয়ে বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গিতে দেখানো হয় খেলা। এ সাপখেলা দেখিয়ে মানুষের মন জয় করতে পারলে মেলে টাকা-পয়সা। এভাবেই রোজগার করেন সাপুড়ে লাল চান্দ। রংপুর শহরের বিভিন্ন এলাকায় নিয়মিত সাপ খেলা দেখিয়ে মানুষকে আনন্দ দেওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে থাকেন।

রংপুরের ধাপ এলাকায় সাপ নিয়ে মজমা বসিয়েছেন লাল চান্দ। হাতে লম্বা দাঁড়াশ সাপ দেখে দু’একজন করে মানুষ জমা হচ্ছেন। বিভিন্ন ছন্দের তালে তালে সাপটিকে দোলাচ্ছেন এবং পথিকদের আকৃষ্ট করার চেষ্টা করছেন। মুহূর্তেই উৎসুক পথিক তাকে ঘিরে ধরে। এসময় একে একে খৈয়া, গোখরা বা গোমা, পদ্ম গোখরা বা মাছুয়া আলাদ, কালাচ, ঘরগিন্নিসহ বিভিন্ন বিষধর ও নির্বিষ সাপ দিয়ে খেলা দেখান। লোকজনও মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে এসব খেলা দেখেন।

এসময় তিনি লোকজনকে বিষধর ও নির্বিষ সাপ সম্পর্কে পরিচয় করিয়ে দেন এবং সাপে কাটলে সাপুড়ে বা কবিরাজের কাছে না গিয়ে ডাক্তারের কাছে যাওয়ার পরামর্শ দেন। আর দর্শনার্থীদের অনেকেই খেলা দেখে বকশিশ হিসেবে কিছু টাকা-পয়সা দিয়ে নিজ নিজ গন্তব্যের উদ্দেশ্যে চলে যান।

সাপুড়ে লাল চান্দ বলেন, পরিবারেই সাপ দেখে বড় হয়েছি। সাপ ধরার দীক্ষাও অর্জন করেছি। আগে বড়দের সাথে গ্রামগঞ্জ ঘুরে সাপ খেলা দেখিয়েছি। এখন নিজেরই বয়স হয়েছে। দূরে যেতে পারি না। তাই ভাতিজাকে নিয়ে শহরের বিভিন্ন জায়গায় সাপ খেলা দেখাই। এতে যা আয় হয় তা দিয়েই চলছে সংসার।

এসব সাপ কোথায় পেয়েছেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন- কোথাও কোনও সাপ দেখা গেলে মানুষেই খবর দেয়। আমরা সেখানে গিয়ে সাপ ধরে নিয়ে আসি। এ সাপগুলো নিজেই ধরেছি।

সাপ ধরার মন্ত্র সম্পর্কে বলেন, সাপ ধরার জন্য নির্দিষ্ট কোনও মন্ত্র নেই। সাপ ধরতে দুইটি জিনিস লাগে তা হলো সাহস ও কৌশল। এ ছাড়াও যে যার বিশ্বাস মতো মন্ত্র বা দোয়া পড়ে থাকে।

সাপুড়েদের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সাপুড়েদের আর আগের অবস্থা নেই। আগে সাপুড়েও ছিল অনেক। কদরও ছিল। একদিনেই অনেক টাকা পয়সা রোজগার করা যেত। এখন সবকিছুর দাম বেশি, আয় নেই বললেই চলে। তাই অনেক সাপুড়ে পেশা বদলেছে। তাছাড়া আগের মতো সাপও দেখা যায় না। আগে সাপে কাটলে সাপুড়ের কাছে মানুষ ধরনা দিত। এখন সাপে কাটার চিকিৎসা থাকায় বেশিরভাগ মানুষ হাসপাতালে যায়। আমরাও হাসপাতালে যাওয়ার পরামর্শ দেই।

সাপখেলা দেখতে আশা দর্শনার্থী আফজাল হোসেন বলেন, লোকটার হাতে সাপ দেখে দাঁড়িয়েছিলাম। পরে আরও কয়েকটা দেখেছি। আগে গ্রামগুলোতে সাপের খেলা দেখা যেত। এখন আর দেখা যায় না।

আরেক দর্শনার্থী কামাল হোসেন বলেন, সাপ খেলা অনেক মজার। টিভিতে অনেক ফণা ধরা সাপ দেখেছি। এখানে আজ বাস্তবে দেখলাম। ভালোই লাগলো। সাপ সম্পর্কে অনেক নতুন অভিজ্ঞতা হলো।

শিপন তালুকদার/পিএইচ