প্রাণীদের পাশে এক স্বেচ্ছাসেবী/ ছবি- ঢাকা পোস্ট

করোনা পরিস্থিতির শুরুতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে কুকুর ছিল প্রায় আড়াইশ। করোনার কারণে খাবার সংকটে এ সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে একশতে। এই প্রাণীদের বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন ছিল ক্যান্টিনের উচ্ছিষ্ট খাবার। করোনা পরিস্থিতিতে গত বছরের মার্চ থেকে বন্ধ ক্যাম্পাসের এসব কুকুরকে খাবার দিচ্ছে ‘বিডি ইউনিভার্সিটিজ অ্যানিমেল লাভার সোসাইটি’।

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ছড়িয়ে পড়লে গত বছরের ১৮ মার্চ দেশের অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মতো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসও বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এ পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের অনুপস্থিতিতে পশুদের খাবার সংকট দেখা দেয়। অবলা প্রাণীদের এই দুরবস্থার কথা চিন্তা করে তখন থেকেই ক্যাম্পাসের কুকুরদের নিয়মিত খাবার দিয়ে যাচ্ছে সংগঠনটি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তি ও গণতন্ত্র তোরণ, এফ রহমান হল, মুহসীন হল, জহুরুল হক হল, ভিসি চত্বর, কলাভবন, উদয়ন স্কুল, এস এম হল, ফুলার রোড, রোকেয়া হল, টিএসসি, মধুর ক্যান্টিন, জসিমউদ্দীন হল, বিজয় একাত্তর হল, মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল, সূর্যসেন হল, বিজনেস ফ্যাকাল্টি, আইবিএ, সোশ্যাল সায়েন্স ফ্যাকাল্টি, নাট মন্ডল, হাকিম চত্বর, শামসুন্নাহার হল, সেন্ট্রাল লাইব্রেরি, মোতাহের হোসেন ভবন, মোকাররম ভবন বা বিজ্ঞান লাইব্রেরি, কার্জন হল, শহীদুল্লাহ হল, আইইআর, খাদ্য ও পুষ্টি ইনস্টিটিউটে নিয়মিত খাবার দিয়ে আসছেন কুকুরদের। 

তরুণদের উদ্যোগে গড়ে ওঠা এ সংগঠনের প্রধান সমন্বয়কারী ফারজানা ইসলাম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এমফিলে অধ্যয়নরত ফারজানা ঢাকার মিরপুরের বাসিন্দা। নিজেদের মধ্যেই টাকা তুলে তহবিল করেছেন তারা। সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা ফারজানা তার উপার্জন থেকে এ কাজে সিংহভাগ অর্থ দান করেন। সংগঠনের কাজে মুগ্ধ হয়ে পরিচিত কয়েকজন অর্থ সহায়তা করেছেন।

ফারজানা জানান, প্রথমে ব্যক্তিগত উদ্যোগে একাই শুরু করেছিলেন এ কাজ। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থী তার সঙ্গে যুক্ত হন। তার এই উদ্যোগ বৃহৎ পরিসরে ছড়িয়ে দিতে গড়ে তোলেন ‘বিডি ইউনিভার্সিটিজ অ্যানিমেল লাভার সোসাইটি’।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ২০১৮-১৯ সেশনের শিক্ষার্থী ফয়সাল আহমেদ। সংগঠনটির প্রধান স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে যুক্ত রয়েছেন তিনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ হলেও পরিবারের সঙ্গে ঢাকায় অবস্থান করছেন। জনশূন্য ক্যাম্পাসে অভুক্ত অবস্থায় থাকা কুকুরগুলোকে শুরু থেকেই তিনি খাবার দিয়ে আসছেন।

তিনি বলেন, লকডাউনে বিভিন্ন টিম অসহায় মানুষদের দ্বারে দ্বারে খাবার পৌঁছে দিচ্ছে। কিন্তু অসহায় পশু-পাখি, কুকুর-বিড়াল কোথায় পাবে খাবার? 

এসব প্রাণীরা ক্যাম্পাসের বিভিন্ন জায়গার উচ্ছিষ্ট খাবার খেয়েই বেঁচে থাকে। কিন্তু লকডাউনে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল, ক্যান্টিন, কোয়ার্টার সব বন্ধ রয়েছে। ক্যাম্পাসে বড় কোনো ডাস্টবিনও নেই যেখানে কুকুর-বিড়াল ন্যূনতম বেঁচে থাকার খাবার পাবে। তাই বিডি ইউনিভার্সিটিজ অ্যানিমেল লাভার সোসাইটি তাদের খাবার দিচ্ছে।

কথা হয় সংগঠনটির কয়েকজন স্বেচ্ছাসেবীর সঙ্গে। তারা জানান, বর্তমানে ঢাবি ক্যাম্পাস ও এর আশপাশের ইডেন মহিলা কলেজ, হোম ইকোনমিক্স কলেজ, সোশ্যাল ওয়েলফেয়ারসহ ক্যাম্পাস এলাকায় সপ্তাহে তিন দিন কুকুরদের নিয়মিত খাবার দেন তারা। আর এসব খাবার রান্না করেন সেচ্ছাসেবী ফয়সাল আহমেদের মা।

কাজটি করতে গিয়ে কোনো সমস্যায় পড়ছে কি না জানতে চাইলে ফয়সাল আহমেদ বলেন, খাওয়াতে গিয়ে অনেক কথার সম্মুখীন হয়েছি। ‘মাইনষে খাইতে পায়না, কুত্তা বিলাইরে খাওয়ায়’- এরকম কথা প্রায়ই শুনতে হতো। অনেকে পাগলও বলতো।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. এ কে এম গোলাম রব্বানী তরুণদের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, এখন মানবিক বিপর্যয়ের সময় যাচ্ছে। একদিকে যেমন মানুষকে সহযোগিতা করার দরকার, অন্যদিকে প্রাণীদেরও পাশে দাঁড়াতে হবে। 

এইচআর/এইচকে