প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা সাধারণ শিক্ষার্থীদের জন্য অতিরিক্ত উল্লেখ করে মুক্তিযোদ্ধা কোটা সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসার অনুরোধ জানিয়েছেন একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। 

বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) দুপুর পৌনে ২টায় শাহবাগ মোড়ে শিক্ষার্থীদের অবরোধে আন্দোলনের প্রতি সংহতি জানিয়ে তিনি এ অনুরোধ জানান।

তিনি বলেন, আজকে শিক্ষার্থীরা তাদের দাবির পক্ষে শাহবাগে অবস্থান নিয়েছে। তাদের মতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা অযৌক্তিক। আবার মুক্তিযোদ্ধা সন্তানদের জন্য এই কোটা যৌক্তিক। তবে আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে বলতে চাই, মুক্তিযোদ্ধার সন্তান-নাতিদের জন্য ৩০ শতাংশ কোটা যৌক্তিক নয়। তাই সেই কোটা সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসার জন্য সরকারের কাছে অনুরোধ জানাই। 

এসময় তিনি মুক্তিযোদ্ধা কোটা ১০-১৫ শতাংশ করার কথা জানালে শিক্ষার্থীরা সমস্বরে ‘মানি না, মানি না’ বলে প্রতিবাদ করেন। 

এর আগে, বেলা সাড়ে ১১টায় শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি হল থেকে আলাদা ব্যানারে করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্ট্রাল লাইব্রেরির সামনে জড়ো হন। পরে সেখান থেকে মিছিল নিয়ে হলপাড়া-ভিসি চত্বর-টিএসসি হয়ে বেলা সোয়া ১২টায় শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নেন। বৃষ্টি মাথায় নিয়েই আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। 

শিক্ষার্থীরা ৪ দফা দাবিতে তাদের আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। দাবিগুলো হলো— 

• ২০১৮ সালে ঘোষিত সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল ও মেধাভিত্তিক নিয়োগের পরিপত্র বহাল রাখা

• পরিপত্র বহাল সাপেক্ষে কমিশন গঠনপূর্বক দ্রুত সময়ের মধ্যে সরকারি চাকরির সমস্ত গ্রেডে অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাদ দেওয়া (সুবিধাবঞ্চিত ও প্রতিবন্ধী ব্যতীত)

• সরকারি চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় কোটা সুবিধা একাধিকবার ব্যবহার করা যাবে না এবং কোটায় যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া গেলে শূন্যপদগুলোতে মেধা অনুযায়ী নিয়োগ দেওয়া 

• দুর্নীতিমুক্ত, নিরপেক্ষ ও মেধাভিত্তিক আমলাতন্ত্র নিশ্চিত করতে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া

২০১৮ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে ৫৬ শতাংশ কোটা ছিল। এর মধ্যে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা, ১০ শতাংশ নারী, অনগ্রসর জেলার বাসিন্দাদের জন্য ১০ শতাংশ, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষের জন্য ৫ শতাংশ আর প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য ১ শতাংশ আসন সংরক্ষিত ছিল। 

ওই বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কোটা সংস্কারের দাবিতে বড় বিক্ষোভ হয়। কোটাব্যবস্থার সংস্কার করে ৫৬ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনার দাবি জানিয়েছিলেন তখনকার আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। পরে সরকারি চাকরিতে (প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে) কোটা বাতিল করে পরিপত্র জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

২০২১ সালে সেই পরিপত্রের মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের অংশটিকে চ্যালেঞ্জ করে কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান উচ্চ আদালতে একটি রিট আবেদন করেন। সেই রিটের রায়ে চলতি বছরের ৫ জুন পরিপত্রের ওই অংশ অবৈধ ঘোষণা করেন আদালত।

পরে এ রায় স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ। কিন্তু গত ৯ জুন প্রাথমিক শুনানির পর আবেদনটি আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে পাঠানো হয়।

কেএইচ/জেডএস