করোনাভাইরাস পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে আগামী ১ জুলাই থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষার্থীদের সেমিস্টার ফাইনাল/বার্ষিকসহ সব পরীক্ষা অনলাইনে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে প্রচলিত নিয়মে সশরীরে পরীক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হবে।

বৃহস্পতিবার (৬ মে) ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের সভাপতিত্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা পরিষদের (একাডেমিক কাউন্সিল) সভায় এই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। একাডেমিক কাউন্সিলে উপস্থিত একাধিক সদস্য ঢাকা পোস্টকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) এ এস এম মাকসুদ কামাল ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতির উন্নতি না হলে আপৎকালীন ব্যবস্থা হিসেবে গতকাল আমরা ডিনস কমিটির সভায় পহেলা জুলাই থেকে অনলাইনে পরীক্ষার বিষয়ে যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম একাডেমিক কাউন্সিল বিশদ আলোচনা করে সেটিকে চূড়ান্ত করেছে।’

সভায় কৌশলগত কারণে প্রতিটি কোর্সকে একাধিক ভাগে ভাগ করে বিভিন্ন ধরন/পদ্ধতিতে পরীক্ষা (যেমন- বর্ণনামূলক সংক্ষিপ্ত আকারে, এমসিকিউ, কুইজ, অ্যাসাইনমেন্ট এবং ওপেনবুক পরীক্ষা) নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। পরীক্ষার সময় ও পূর্ণমান কমানো হবে, তবে মূল্যায়নকৃত ফলাফলকে প্রচলিত পূর্ণমানে রূপান্তর করে চূড়ান্ত ফলাফল তৈরি করা হবে। ক্রেডিট অপরিবর্তিত থাকবে।

এছাড়া, কম্পিউটারভিত্তিক ব্যবহারিক পরীক্ষাসমূহ অনলাইনে নেওয়া হবে। অন্যান্য ল্যাবভিত্তিক ব্যবহারিক পরীক্ষা যথাযথ নিয়মে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে সশরীরে নেওয়া হবে।

সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী অনুষদের ডিনরা ও ইনস্টিটিউটের পরিচালকরা অনলাইনে পরীক্ষা নেওয়ার জন্য নিজ নিজ একাডেমিক ঘরনার পরীক্ষা ও প্রশ্নের ধরন নির্ধারণ করে একটি গাইডলাইন তৈরি করবেন। তারা আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে এই গাইডলাইন উপ-উপাচার্যের (শিক্ষা) কাছে প্রেরণ করবেন।

সভায় উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ, উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল, বিভিন্ন অনুষদের ডিন, বিভাগীয় চেয়ারম্যানরা, ইনস্টিটিউটের পরিচালকরাসহ একাডেমিক কাউন্সিলের সদস্যবৃন্দ সংযুক্ত ছিলেন।

এর আগে গতকাল (৫ মে) বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিনস কমিটির জরুরি বৈঠকে অনলাইনে পরীক্ষা নেয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছিল।

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরু হলে গত বছরের ১৮ মার্চ থেকে বন্ধ রয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক কার্যক্রম। গত জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহ থেকে অনলাইনে ক্লাস ও দুটি সেমিস্টারের মিডটার্ম পরীক্ষা হলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বর্ষের চূড়ান্ত পরীক্ষাগুলো আটকে আছে। এর ফলে অনেক শিক্ষার্থী পড়াশোনা শেষ করতে না পারায় থমকে আছে তাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা। এমন পরিস্থিতিতে অনলাইনে পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

তবে অনলাইন পরীক্ষা নিয়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। অনার্স শেষ বর্ষ এবং মাস্টার্সের শিক্ষার্থীরা অনলাইন বা যেকোনো ধরনের পরীক্ষার পক্ষে। কেননা তারা চাকরিতে প্রবেশ নিয়ে উদ্বিগ্ন। অন্যদিকে, নিচের দিকে অর্থাৎ প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীরা অনলাইনে পরীক্ষার পক্ষে নন। কারণ হিসেবে তারা ডিভাইস না থাকা, ইন্টারনেট না পাওয়াসহ নানা যুক্তি দাঁড় করাচ্ছেন।

এদিকে ১৭ মে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল খোলার কথা থাকলেও গত ২৯ এপ্রিল করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় এ সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, শিক্ষার্থীদের টিকা নিশ্চিত করে তবেই খুলবে হল। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘোষণা অনুযায়ী গত ২৪-৩১ মার্চ পর্যন্ত নির্ধারিত ওয়েব লিংকে প্রায় ৩০ হাজার শিক্ষার্থী টিকার জন্য নিবন্ধন করেন। এ পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের করোনার টিকা নিশ্চিত করা যায়নি। এ বিষয়ে কোনো হালনাগাদ তথ্যও জানায়নি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

এইচআর/এফআর