জবির কোষাধ্যক্ষ পদে আলোচনায় তিন অধ্যাপক
ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে গত ২২ সেপ্টেম্বর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ পদ থেকে পদত্যাগ করেন অধ্যাপক ড. হুমায়ুন কবির চৌধুরী। এরপর থেকে ওই শূন্য পদে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের থেকে একজন সৎ, যোগ্য ও দক্ষ শিক্ষককে ট্রেজারার নিয়োগের দাবি ওঠে।
সেক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ ও হিসাব শাখার স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা এবং বিশ্ববিদ্যালয়কে এগিয়ে নিতে পারবেন। একই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেট বৃদ্ধি, শিক্ষা ও গবেষণার মানোন্ননে সরকারি ও বেসরকারি উৎস থেকে নানান ধরনের ফান্ড এনে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামগ্রিক উন্নয়নে অবদান রাখতে পারবেন এমন একজন ট্রেজার হোক সেই প্রত্যাশা শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের।
বিজ্ঞাপন
এসব দিক বিবেচনা করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্য হতে কোষাধ্যক্ষ হওয়ার দৌড়ে সমানভাবে এগিয়ে আছেন তিন অধ্যাপক। তারা হলেন— বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. মনজুর মোর্শেদ ভূঁইয়া, গণিত বিভাগের অধ্যাপক ড. পেয়ার আহমেদ ও মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক ড. ইমরানুল হক।
কোষাধ্যক্ষ পদের জন্য সবচেয়ে বেশি আলোচনায় আছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. মনজুর মোর্শেদ ভূঁইয়া। বর্তমানে তিনি বিজনেস অনুষদের ডিন, সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারক সভার (সিন্ডিকেট) সদস্য দায়িত্ব পালন করছেন। অধ্যাপক মঞ্জুর মোর্সেদ ভূঁইয়া ২০১৭ সালে অস্ট্রেলিয়ার সাউদার্ন কুইন্সল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি এবং ২০১৮ সালে একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পোস্ট ডক্টরাল সম্পূর্ণ করেন।
বিজ্ঞাপন
এর আগে তিনি ১৯৯৫ ও ১৯৯৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফিন্যান্স এবং ব্যাংকিংয়ে অনার্স এবং মাস্টার্স শেষ করে ২০০৫ সালে জাপানের ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি থেকে ইবিজ এমজিটিতে এমএস সম্পন্ন করেন। তিনি দুবার বিভাগের চেয়ারম্যানের দায়িত্বও পালন করেছেন। এছাড়া আন্তর্জাতিক এবং দেশীয় বিখ্যাত জার্নালে ৩০টি গবেষণা নিবন্ধ এবং আন্তর্জাতিক প্রকাশনা সংস্থায় ১টি বই প্রকাশিত হয়েছে।
আরও পড়ুন
দ্বিতীয় অবস্থায় আলোচনায় আছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের অধ্যাপক ড. পেয়ার আহমেদ। এর আগে তিনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হওয়ার আলোচনায় ছিলেন। তিনি ২০১২ সালে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক পদে যোগদান করেন। ২০১৮ সালে বিজ্ঞান অনুষদের ডিনের দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৯ সালে গ্রেড -১ অধ্যাপক হিসেবে উন্নীত হন। বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য, একাডেমিক কাউন্সিল সদস্য, বিশ্ববিদ্যালয়ের রুলস অ্যান্ড রেগুলেশন প্রণয়ন সদস্যসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়াও তিনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, মানারাত আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়, আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাকা ক্যাম্পাস), আহসানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, ইয়ামাগাটা বিশ্ববিদ্যালয় (জাপান) সহ দেশ ও দেশের বাইরে ১১টি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেছেন। ক্যাম্পাসে তিনি একজন সুবক্তা, স্পষ্টবাদী, সৎ ও ন্যায়পরায়ণ শিক্ষক হিসেবে পরিচিত। দেশি -বিদেশি জার্নালে তার ৪০ টির বেশি গবেষণা পত্র রয়েছে এবং বিভিন্ন পর্যায়ে তার লেখা কয়েকটি পাঠ্যপুস্তক রয়েছে।
এছাড়া আরও আলোচনায় রয়েছেন মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক ড. ইমরানুল হক। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ করে ২০০৭ সালে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে মার্কেটিং বিভাগে লেকচারার হিসেবে যোগদান করেন। ২০২১ সালে তিনি অধ্যাপক হিসেবে উন্নীত হন। পরে তিনি ২০২০ সালে ডেনমার্কের অ্যালবর্গ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ম্যানেজমেন্ট’ বিষয়ে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। এর আগে একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি ২০১২ সালে ‘ইনোভেশন অ্যান্ড এন্টারপিনিয়রশিপ’ বিষয়ে এমএসসি ডিগ্রি সম্পন্ন করেন।
শুধু তাই নয় অধ্যাপক ইমরানুল হক দেশি ও বিদেশি বিভিন্ন প্রজেক্টের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ও পিএইচডি ফেলো হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া তার দেশি ও আন্তর্জাতিক বিখ্যাত জার্নালে তার ৩৬টি জার্নাল প্রকাশিত হয়েছে।
কেমন কোষাধ্যক্ষ চান, এমন প্রশ্নে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী মাহমুদুল হাসান বলেন, যে কেউ কোষাধ্যক্ষ হোক সমস্যা নাই। তবে অবশ্যই তাকে শিক্ষাবান্ধব, দুর্নীতিমুক্ত এবং শিক্ষার্থীদের জন্য কাজ করার মনোভাবসম্পন্ন হতে হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ বিলাল হোসাইন বলেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকগণের মধ্য থেকে একজন যোগ্য, দক্ষ ও সৎ শিক্ষককে ট্রেজারার হিসেবে নিয়োগ দিতে হবে। যিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ ও হিসাব শাখার স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করবেন।
এমএল/এমএ