নিখোঁজ হওয়ার ৯ দিন পর ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল মর্গে খোঁজ মেলা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষার্থী হাফিজুর রহমানের ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক একেএম গোলাম রব্বানী।

বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য বিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা বিভাগের এই শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনা প্রসঙ্গে ঢাকা পোস্টের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এমন মন্তব্য করেন।

তিনি বলেন, হাফিজের এ ঘটনায় আমরা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সবাই মর্মাহত। এ ঘটনার তদন্ত প্রয়োজন। তদন্তই একমাত্র রাস্তা, তার (হাফিজ) সঙ্গে কি ঘটেছে সব ঘটনা জানতে চাই।

‘ঘটনাটি ক্যাম্পাসে হওয়ায় অনেকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে দায় দিচ্ছে’ -এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রক্টর বলেন, ক্যাম্পাস থেকে একজন শিক্ষার্থীর এমন ঘটনা সবার জন্য কষ্টকর। তাদের কষ্টের অনুভূতি তারা বলছে। বিশ্ববিদ্যালয় তো এখন বন্ধ, আর পরিবারের পক্ষ থেকে আমাদের জানানো হয়নি। জানার পরেই আমরা খোঁজ-খবর নিয়েছি।

পুলিশ কেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে জানায়নি? এমন প্রশ্নের জবাবে প্রক্টর বলেন, আমাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সংক্রান্ত কিছু জানতে পারলে পুলিশ সহজে জানায়। তাদের ভাষ্যমতে, তারা চিহ্নিত করতে পারেনি। তবে এখন এটি (ঘটনার সত্য উদঘাটন) বের হওয়া প্রয়োজন।

প্রক্টর আরও বলেন, তাকে (হাফিজকে) হারিয়ে আমরা খুবই মর্মাহত। এখন আমাদের সবার উচিত দোয়া করা এবং সত্য উদঘাটনে সহযোগিতা করা।

নিখোঁজের ৯ দিন পর ২৩ মে ঢামেক হাসপাতাল মর্গে মিলল হাফিজের লাশ। তাকে চিহ্নিত করে পরিবারের সদস্যরা। এর আগে গত ১৫ মে ঈদুল ফিতরের পরদিন দুপরে বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করতে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আসে হাফিজুর। বিশ্ববিদ্যালয় কার্জন হল এলাকায় বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা শেষে রাত ৮-৯ টার দিকে তার নিজ বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া চলে যাওয়ার জন্য উদগ্রীব হয়ে উঠে। পরে তার বন্ধুরা তাকে বিদায় দিলে তারপর থেকে তাকে আর পাওয়া যায়নি।

হাফিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য বিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা বিভাগের ১৫-১৬ সেশনের শিক্ষার্থী। তার গ্রামের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা থানায়। এর আগে নিখোঁজের ঘটনায় তার মা সামছুন নাহার ২১ মে কসবা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন।

পুলিশ সূত্র বলছে, কয়েকদিন আগে তাকে ঢামেক বহির্বিভাগের গেটের সামনে থেকে গলাকাটা অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। তখন তিনি (হাফিজ) রক্তাক্ত অবস্থায় সেখানে দৌড়াদৌড়ি করছিলেন। খবর পেয়ে পুলিশ লোকজনের সহায়তায় ধরে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সময় রিকশা থেকে লাফ দেয়। এরপর তাকে ধরে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে যাওয়া হয়। অবস্থা খারাপ দেখে তাকে ওটিতেও নেওয়া হয়। এর মধ্যে তিনি রাত সোয়া ১০টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। আর খবর পেয়ে ২৩ মে তার (হাফিজের) বড় ভাই লাশটি শনাক্ত করে।

পুলিশ প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে, এটি আত্মহত্যাও হতে পারে। বিষয়টি তারা তদন্ত করে সত্য উদঘাটন করবেন বলেও জানান। তবে হাফিজের বড় ভাই মাসুম বলছেন ‘এটি আত্মহত্যা হতো পারে না’ সুষ্ঠু তদন্ত এবং বিচার দাবি করেন তিনি।

এদিকে প্রত্যক্ষদর্শী ডাব বিক্রেতা আনোয়ার হোসাইন বলেন, হঠাৎ করে এসে একজন লোক আমার দা-টা টেনে নেয় এবং নিজের গলায় কোপ মারে। প্রথমে আমি ভাবছি সে ভয় দেখায়, পরে দেখি রক্ত বের হচ্ছে। আর বলতে থাকে ‘আমাকে মাফ করে দাও’, ‘আমাকে মাফ করে দাও’। তারপর সে শহীদ মিনারের দিকে দৌড় দেয়। ঘটনাটি ঘটে গত ১৫ মে রাত আটটার দিকে। তার পরনে ছিল একটা থ্রি কোয়ার্টার প্যান্ট আর খালি গা।

এইচআর/এসএম