মধ্যরাতে বেরোবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে (বেরোবি) ফের আন্দোলনে নেমেছেন ইংরেজি বিভাগের ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা। পরীক্ষা নেয়া, ফলাফল প্রকাশসহ আট দফা দাবিতে একাডেমিক ভবনে তালা লাগিয়ে তারা অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন। 

এদিকে অবস্থান কর্মসূচি পালনের ১৪ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। এমনকি প্রসাশনের কোনো কর্মকর্তাও আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলতে আসেননি। বাধ্য হয়ে ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা শীতে জবুথবু হয়ে রাত জেগে দাবি আদায়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন।

এর আগে সোমবার (৪ জানুয়ারি) বেলা ১১টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের হেয়াত মামুদ ভবনের মূল ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেন শিক্ষার্থীরা। পরে তারা দিনব্যাপী অবস্থান কর্মসূচি পালন শুরু করেন। 

সকাল থেকে সন্ধ্যা গড়িয়ে পড়লেও আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কারও কাছ থেকে কোনো আশ্বাস পাননি। এ েকারণে পৌষের কনকনে শীত উপেক্ষা করে রাতেও অবস্থান কর্মসূচি থেকে সরেননি তারা।

শিক্ষার্থীরা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য কথা রাখেননি। তার আশ্বাসের প্রেক্ষিতে দুই সপ্তাহ আগে আন্দোলন থেকে সরে গেলেও এখন ফের আন্দোলন করতে হচ্ছে। কারণ সাতদিনের মধ্যে পরীক্ষা নেয়া হবে বলে উপাচার্য অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ আশ্বাস দিয়েছিলেন। এখন আমরা আন্দোলনে অনড় থাকব, এছাড়া আমাদের উপায় নেই।

খাওয়া-দাওয়া ছেড়ে দিয়ে এখন পাসের সার্টিফিকেট হাতে নিয়ে ঘরে ফেরার প্রত্যয়ে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার কথা বলেন জিনিয়া শারমিন ও ফারহিন খন্দকার। তারা বলেন, আমাদের পরে যারা এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিল তাদের পড়াশোনা শেষ। কিন্তু আমাদের শেষ হয়েও শেষ হচ্ছে না। আমরা কি পাস করব না? সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা চলে যাচ্ছে, তবুও ফাইনাল পরীক্ষা দিতে পারছি না। আমরা পরীক্ষা দিতে চাই, রেজাল্ট চাই। 

আরমান শাহ্ উল্লাস দিনভর স্লোগান দিয়েছেন দাবি আদায়ে। কিন্তু রাত অবধি কেউ তাদের স্লোগানে সাড়া দেয়নি। এই শিক্ষার্থীর অভিযোগ, কিছু দিন আগে উপাচার্যের আশ্বাসের ভিত্তিতে তারা অবরোধ তুলে নিয়েছিলেন। কিন্তু আশ্বাসের সাত দিন পেরিয়ে গেলেও উপাচার্য তার দেয়া কথা না রাখায় ফের আন্দোলনে নেমেছেন তারা। এখন দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যেতে হবে। নইলে বছরের পর বছর কেটে যাবে, তবুও ফাইনাল পরীক্ষা দেয়া হবে না। 

মারুফ ও ইউসুফ নামে এই শিক্ষার্থী জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১২-১৩ সেশনের শিক্ষার্থীরা দীর্ঘ প্রায় আট বছর পেরিয়ে গেলেও এখনও মাস্টার্স শেষ করতে পারেননি। সরকারি চাকরির বয়স প্রায় শেষের দিকে। উপাচার্যের আশ্বাসের পরও কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে না। উপাচার্য কথা না রাখায় বাধ্য হয়েই আন্দোলনে নেমেছেন তারা।

ফাইনাল পরীক্ষা নেয়া ও  দ্রুত সময়ের মধ্যে ফলাফল প্রকাশ করাসহ আট দফা দাবি মেনে নেয়া না হলে কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন ইংরেজি ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা। 

কনকনে ঠান্ডায় শিক্ষার্থীরা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। রাত পৌনে ১টার দিকে এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা হেয়াত মাহমুদ ভবনের সামনে কাগজ বিছিয়ে তার ওপর বসে-শুয়ে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মধ্যে বেশ কয়েকজন মেয়ে শিক্ষার্থী থাকায় নিরাপত্তাহীনতার আশঙ্কা করা হচ্ছে। 

এ বিষয়ে জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও রেজিস্ট্রারের মুঠোফোনে বেশ কয়েকবার কল করা হলেও তারা রিসিভ করেননি। 

জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ ও রেজিস্ট্রার আবু হেনা মুস্তাফা কামাল ক্যাম্পাসে নেই। তারা দীর্ঘদিন ধরে ক্যাম্পাসে ধারাবাহিকভাবে অনুপস্থিত। 

আরএআর