ঢাবি শিক্ষার্থী হাফিজের মৃত্যুর তদন্তের দাবিতে মানববন্ধন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য বিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষার্থী ও মাইম অ্যাকশনের সাধারণ সম্পাদক হাফিজুর রহমানের রহস্যজনক মৃত্যুর বিষয়টি দ্রুত এবং সঠিক তদন্তের দাবি জানিয়ে মানববন্ধন করেছে টিএসসির সব সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন।

মঙ্গলবার (২৫ মে) বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যে এ মানববন্ধন কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। মানববন্ধনে অংশ নেয়- ঢাকা ইউনিভার্সিটি মাইম অ্যাকশন, গবেষণা সংসদ, নাট্য সংসদ ও সাংস্কৃতিক সংসদের বিভিন্ন নেতৃবৃন্দ।

মানববন্ধনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা সংসদের সাধারণ সম্পাদক মো. ইসতিয়াক উদ্দিন বলেন, হাফিজের মৃত্যু আমাদেরকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে, মানবতার করুণ পরিণতি, ঢাকা মেডিকেল কলেজের ভঙ্গুরতা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের চরম গাফিলতি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসকে অচিরেই সাবেক ঢাবিয়ান ছাড়া বহিরাগতমুক্ত করতে হবে, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে মাদকের আস্তানা ভেঙে দিতে হবে। মাদকের সাপ্লাই কারা দেয় তাদের মূলোৎপাটন করতে হবে। আমরা আর একজন হাফিজকেও হারাতে চাই না। তার হত্যাকাণ্ডের পেছনে যাদের প্ররোচনা এবং যোগসূত্র রয়েছে তাদেরকে রিমান্ডে নিয়ে সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে দ্রুত বিচারের আওতায় নিয়ে আসতে হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নাট্য সংসদের সাধারণ সম্পাদক দিগার মো. কৌশিক বলেন, একজন সুস্থ সামাজিক-সাংস্কৃতিক ব্যক্তি সুষ্ঠু সাংস্কৃতিক চর্চা কীভাবে করতে পারে, মাইমের মাধ্যমে তিনি (হাফিজ) সবাইকে সেটা দেখিয়েছেন। অসংখ্য সামাজিক সচেতনতামূলক মাইম সে করেছে। ভারত ও বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি প্রতিভা ছিল তার। যে দেশকে, বিশ্ববিদ্যালয়কে এত কিছু দিলো, তার লাশ মর্গে পচেছিল, পোকা ধরেছে। কালকে যে আমাদের এমন নৃশংসতার স্বীকার হতে হবে না এর নিশ্চয়তা কে দেবে। অতীতের সব ঘটনার মতো এটা যেন হারিয়ে না যায়। মৃত্যুর কারণটা অন্তত আমাদের জানার অধিকার আছে। হাফিজ হত্যার সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক বিচার দাবি করছি, হাফিজের মতো আমাদের আর কোনো ভাইকে হারাতে চাই না।

ঢাকা ইউনিভার্সিটি মাইম অ্যাকশনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সানোয়ারুল হক বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী আট দিন ধরে নিখোঁজ এবং লাশ মর্গে পড়ে থাকে! এরচেয়ে হতাশাজনক আর বেদনাদায়ক আর কিছু হতে পারে না। সে মাইম অ্যাকশনের সাধারণ সম্পাদক, সে নিজেও আত্মহত্যার বিরুদ্ধে প্রোগ্রাম করেছে। ঈদের পরদিনই কেন সে ঢাকায় চলে আসবে, নিশ্চয় এর পেছনে কোনো ইন্ধন ছিল, অপ্রকৃতস্থ ছিল, আমরা হাফিজের মধ্যে কোনো বাঁচার আকুতি দেখিনি প্রশাসন আপনাদের মেরুদণ্ড ভাঙা হতে পারে, কিন্তু টিএসসি ঘুমায় না।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবেশ সংসদের সভাপতি ও মাইম অ্যাকশনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েমের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে আরও বক্তব্য রাখেন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংস্কৃতিক সংসদের সাবেক সভাপতি রাগীব রহমান, ঢাবি সাংস্কৃতিক সংসদের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শিশির মাহমুদ প্রমুখ।

প্রসঙ্গত, নিখোঁজের ৯ দিন পর রোববার (২৩ মে) ঢামেকের মর্গে মেলে হাফিজের লাশ। তাকে চিহ্নিত করেন তার পরিবারের সদস্যরা। এর আগে গত ১৫ মে ঈদুল ফিতরের পরদিন দুপরে বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করতে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আসেন হাফিজুর। বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হল এলাকায় বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দেন তিনি। রাত ৮টার পর থেকে তার আর খোঁজ পাওয়া যায়নি।

হাফিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য বিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা বিভাগের ২০১৫-১৬ সেশনের শিক্ষার্থী ছিলেন। তার গ্রামের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা থানায়। হাফিজ নিখোঁজের ঘটনায় তার মা সামছুন নাহার কসবা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন। জিডি নম্বর ১২৮৩।

এইচআর/এফআর