রাজধানী পুরান ঢাকার সদরঘাটে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯ শিক্ষার্থীদের উপর সঙ্ঘবদ্ধ হামলা চালিয়েছে শ্রমিকদলের নেতারা। এ হামলার ঘটনায় একজনকে গ্রেপ্তার করেছে যৌথ বাহিনী।

বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) রাত দেড়টার দিকে কোতোয়ালি জোনের এসি ফজলুল হক ঢাকা পোস্টকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

তিনি বলেন, যৌথ বাহিনীর অভিযানে কিরণ নামে একজন গ্রেপ্তার হয়েছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।

রাজনৈতিক পরিচয় জানা গেছে কি না জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, “এখনও কিছু জানা যায় নি। জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।”

তবে একাধিক সূত্র ঢাকা পোস্টকে নিশ্চিত করেছে কিরণ ঢাকা মহানগর দক্ষিণ স্বেচ্ছাসেবক দলের রাজনীতির সাথে জড়িত ও সদরঘাটের ইজারাদার ও দক্ষিণাঞ্চল শ্রমিক দলের আহ্বায়ক সুমন ভূঁইয়ার মাইম্যান হিসেবে পরিচিত।

এর আগে আজ সন্ধ্যায় সদরঘাটে  জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সুন্দরবন-১২ লঞ্চের কর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, কবি নজরুল কলেজ এবং সোহরাওয়ার্দী কলেজের অন্তত নয়জন শিক্ষার্থী আহত হন। ঘটনার প্রতিবাদে উত্তেজিত শিক্ষার্থীরা লঞ্চটি ঘেরাও করে ভাঙচুর করেন। এতে ঢাকা-বরিশাল রুটে লঞ্চ চলাচলে বিঘ্ন ঘটে এবং যাত্রীরা পড়ে যান চরম ভোগান্তিতে। আনুমানিক আটটার দিকে সদরঘাট টার্মিনালের ১ নম্বর ঘাটে এ ঘটনা ঘটে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স বিভাগের ১৮তম ব্যাচের শিক্ষার্থী নাবিল বরিশালগামী সুন্দরবন-১২ লঞ্চে উঠলে লঞ্চের স্টাফরা তাকে জোর করে কেবিন ভাড়া নিতে বাধ্য করতে চান। নাবিল তা প্রত্যাখ্যান করলে কথা-কাটাকাটির একপর্যায়ে কয়েকজন স্টাফ মিলে তাকে মারধর করেন। খবর পেয়ে তার সহপাঠী ও বড় ভাইয়েরা ঘটনাস্থলে গেলে তাদেরও শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা হয়।

আহত শিক্ষার্থীরা হলেন—নাবিল (ফিন্যান্স, ১৮তম ব্যাচ), শের আলী (আইএমএল, ১৮তম ব্যাচ), ব্রজ গোপাল রায় (সংগীত বিভাগ, ১৬তম ব্যাচ), জিলন (এমসিজে, ১৮তম ব্যাচ), ইমরোজ সিদ্দিক (আইন, ১৯তম ব্যাচ), আনিছ (থিয়েটার, ১৯তম ব্যাচ), টিঙ্কু (ফিলোসফি, ১৮তম ব্যাচ), মাকসুদুল হক (ইসলামিক স্টাডিজ, ১৪তম ব্যাচ), রিহাব (কবি নজরুল কলেজ) এবং মুজাহিদ (সোহরাওয়ার্দী কলেজ)। আহতদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে সুমনা হাসপাতালে।

এ ঘটনায় সদরঘাটের ইজারাদার ও দক্ষিণাঞ্চল শ্রমিক দলের আহ্বায়ক সুমন ভূঁইয়ার অনুসারীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে। শিক্ষার্থীদের ভাষ্যমতে, তার ঘনিষ্ঠ কিরনের নেতৃত্বে আজিজুল, রমজান, আনিছ, রফিক, কাদের, রাব্বি ও সাগরসহ কয়েকজন লঞ্চকর্মী হামলায় অংশ নেন। পরে শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ হয়ে সুন্দরবন-১২ লঞ্চ ঘেরাও করে ভাঙচুর চালান। এতে লঞ্চ চলাচলে বিঘ্ন ঘটে এবং যাত্রীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. তাজাম্মুল হক বলেন, "সদরঘাটের ঘটনা সম্পর্কে জানার পর ঘটনাস্থলে আসি। সমস্ত কিছু বিবেচনা করে শিক্ষার্থীরা পাঁচ দাবি জানিয়েছে। তাদের দাবি মানা শর্তে এ ঘটনার সুরাহা হবে।”

তাদের দাবিগুলো হলো- কিরণকে দ্রুত সময়ে গ্রেপ্তার; তার সহযোগীকে গ্রেপ্তার; সিসিটিভি ফুটেজ চেক; ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের মোবাইল মানিব্যাগ ক্ষতিপূরণ; সাধারণ মানুষের হয়রানি ও কুলিদের অতিরিক্ত টাকা আদায় বন্ধ করতে হবে।

এমএল/এমটিআই