বাকৃবিতে উপাচার্যসহ শিক্ষকদের অবরুদ্ধ করলেন শিক্ষার্থীরা
তিনটি পৃথক ডিগ্রি নয়, বরং প্রাণিসম্পদে একটি একক ডিগ্রি, বিএসসি ভেটেরিনারি সায়েন্স অ্যান্ড অ্যানিমেল হাজবেন্ড্রি (কম্বাইন্ড ডিগ্রি) চালুর দাবিতে অনড় রয়েছে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) পশুপালন ও ভেটেরিনারি অনুষদের শিক্ষার্থীরা। এ দাবির পরিপ্রেক্ষিতে অনুষ্ঠিত জরুরি একাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করে সভাস্থলে তালা দিয়ে শিক্ষক ও উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করেছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
রোববার (৩১ আগস্ট) দুপুর ১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত সভায় এ ঘটনা ঘটে। এতে উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ. কে. ফজলুল হক ভূঁইয়া ও অন্যান্য অনুষদের শিক্ষকরা ভেতরে আটকা পড়েন। চার ঘণ্টার বেশি সময় ধরে তারা অবরুদ্ধ অবস্থায় ছিলেন।
বিজ্ঞাপন
জানা গেছে, চলমান আন্দোলনের প্রেক্ষিতে শিক্ষার্থীদের দাবিনির্ভর আলোচনার জন্য আজ একাডেমিক কাউন্সিলের জরুরি সভা আহ্বান করা হয়। সেখানে শিক্ষার্থীদের কম্বাইন্ড ডিগ্রির দাবি আংশিক মেনে নিয়ে নতুন সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা হয়। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে তিন ধরনের ডিগ্রিতে ভর্তির সুযোগ থাকবে। কম্বাইন্ড ডিগ্রি (বিএসসি ভেটেরিনারি সায়েন্স অ্যান্ড এএইচ)-১৫০ জন, ডক্টর অব ভেটেরিনারি মেডিসিন (ডিভিএম)-৫০ জন, বিএসসি ইন অ্যানিমেল হাজবেন্ড্রি-৫০ জন।
আরও পড়ুন
বিজ্ঞাপন
ইতিমধ্যে যারা ভর্তি হয়েছেন, তাদের জন্য অপশন থাকবে। তারা ইচ্ছেমতো একটি ডিগ্রি বেছে নিতে পারবেন।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানায়, প্রচলিত আইন অনুযায়ী দুইটি পৃথক অনুষদ একীভূত করা সম্ভব নয়। তবে উভয় অনুষদ মিলিতভাবে কম্বাইন্ড ডিগ্রি দিতে পারবে। পালাক্রমে উভয় অনুষদ থেকেই ডিন নির্বাচিত হবেন।
একাডেমিক কাউন্সিলের এই সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট নয় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। তারা জানান, তিনটি ডিগ্রি রাখার সিদ্ধান্ত গ্রহণযোগ্য নয় এবং এটি ভবিষ্যতে চাকরির বাজারে বিভ্রান্তি তৈরি করবে।
ভেটেরিনারি অনুষদের একাধিক শিক্ষার্থী বলেন, ২৫ জুলাই থেকে আমরা যৌক্তিক দাবি নিয়ে আন্দোলন করছি। অথচ আজকের সিদ্ধান্তে দেখা গেল তিনটি ডিগ্রিই বহাল রাখা হয়েছে। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর ও মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সব স্টেকহোল্ডার যেখানে কম্বাইন্ড ডিগ্রির পক্ষে, সেখানে শিক্ষকদের এ ধরনের সিদ্ধান্ত আমরা মেনে নিতে পারি না।
পশুপালন অনুষদের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী তাহমিনা আক্তার বলেন, সকালে আমরা আমতলায় অবস্থান নিই। পরে দুপুরে জানতে পারি, তিনটি ডিগ্রি বহাল রাখা হয়েছে। অথচ আমাদের একটাই দাবি, কেবল একটি কম্বাইন্ড ডিগ্রি চালু করতে হবে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে।
দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মিরা বলেন, ৩৬ দিন ধরে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি। চাকরির ক্ষেত্রে কম্বাইন্ড ডিগ্রিরই প্রাধান্য রয়েছে। তিনটি ডিগ্রি চালু থাকলে ভবিষ্যতে বিভ্রান্তি আরও বাড়বে। তাই আমাদের একটাই দাবি এক পেশায় একটি ডিগ্রি থাকতে হবে।
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মো. আসাদুজ্জামান সরকার বলেন, শিক্ষার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে কাউন্সিলে সর্বসম্মতিক্রমে কম্বাইন্ড ডিগ্রি চালুর সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ লক্ষ্যে ডিন কাউন্সিলের আহ্বায়ককে প্রধান করে চার সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। যারা দ্রুত সময়ের মধ্যে নতুন কারিকুলাম প্রণয়ন করবেন। একইসঙ্গে মেকআপ কোর্সের কারিকুলামও তৈরি করা হবে।
মুসাদ্দিকুল ইসলাম তানভীর/এআরবি