চবি উপাচার্যের বক্তব্যের প্রতিবাদে ছাত্রীদের বিক্ষোভ
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইয়াহইয়া আখতারের দেওয়া 'স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন' বক্তব্যের প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেছেন নারী শিক্ষার্থীরা।
সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) বিকেল ৪টায় শিক্ষার্থীরা শহীদ মিনারের সামনে অবস্থান নেন। এরপর শহীদ মিনার থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে প্রশাসন ভবনের সামনে গিয়ে প্রতিবাদ সমাবেশে মিলিত হন।
বিজ্ঞাপন
বিক্ষোভ মিছিলে 'আহত ১৫০০, হয়ে গেল ২০০', 'আমার ভাই আইসিইউতে, ভিসি গেছে নিয়োগ বোর্ডে', 'প্রশাসন হায় হায়, নিরাপত্তার খবর নাই', 'আমার ভাইয়ের রক্ত বৃথা যেতে পারে না' ইত্যাদি বলে নারী শিক্ষার্থীদের স্লোগান দিতে দেখা যায়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সানজিদা বলেন, আমাদের ভাইদের খোঁজ না নিয়ে উপাচার্য স্যার শিক্ষক নিয়োগে ব্যস্ত ছিলেন। আবার তিনি আহতের সংখ্যা কমিয়ে দেখানোর চেষ্টা করেছেন। আর যাদের প্রতি তিনি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন সেই স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কি এই ঘটনার নিন্দা জানিয়ে একটি বিবৃতি পর্যন্ত দিয়েছে?
বিজ্ঞাপন
তিনি বলেন, উপাচার্য স্যার দাবি করেছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা তাকে চার-পাঁচবার কল দিয়েছেন, এতে নাকি তিনি খুশি। কিন্তু শিক্ষার্থীরা টানা ৬ ঘণ্টা জোবরাবাসীর হাতে মার খেয়েছে, তবুও প্রশাসন কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। আমরা তার এই বক্তব্যের তীব্র নিন্দা জানাই।
সাদিয়া নামে আরেক শিক্ষার্থী বলেন, গতকাল আমাদের ভাইয়েরা মার খাচ্ছিলো, তখন ভিসি স্যার প্রশাসনিক ভবনে নিয়োগ বোর্ডে ব্যস্ত ছিলেন। আমরা গতকাল বারবার প্রশাসনের সাহায্য চেয়েছি কিন্তু কোনো সাহায্য পাইনি।
প্রসঙ্গত, গতকাল রাত ১১টার দিকে উপাচার্যের সম্মেলন কক্ষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আকতার বলেন, আমরা হাটহাজারী থানা থেকে কোনো সাহায্য পায়নি এবং অন্য সময়ও পায়না। আর আমি অবাক হয়ে গেছি, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার মত ব্যক্তিত্ব আমার সাথে চার-পাঁচবার ফোনে কথা বলেছেন। প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব সিরাজ উদ্দিন মিয়া দুই-তিনবার খোঁজ নিয়েছেন। আমি তাদেরকে কৃতজ্ঞতা জানাই। আমার মত তুচ্ছ ব্যক্তির অনুরোধে সিভিল প্রশাসন যেভাবে সাড়া দিয়েছে। আমি তাদের প্রতিও কৃতজ্ঞতা জানাই।
এর আগে গত শনিবার (৩০ আগস্ট) দিবাগত রাত সাড়ে ১২টা থেকে গতকাল বেলা ৪টা পর্যন্ত দফায় দফায় শিক্ষার্থী ও স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে প্রায় ১৫০০ শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
এ প্রসঙ্গে চবি মেডিকেল সেন্টারের সিনিয়র মেডিকেল অফিসার ডা. ফারহানা ইয়াসমিন বলেন, গতকাল থেকে প্রায় ১৫০০ শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। এর মধ্যে ৫০০ শিক্ষার্থীকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। আর গুরুতর আহত হয়েছেন ১০ জন।
আহতদের বিষয়ে তিনি বলেন, অধিকাংশেরই শরীর ছিলে গেছে, কেটে গেছে এবং তাদের শরীরে গভীর ক্ষতও ছিল। স্ক্রিনের নিচে ব্লাড জমে কালো হয়ে গেছে এ ধরণের শিক্ষার্থীও ছিল। মোট কথা ছোট বড় সব ধরনের ক্ষতই ছিল। এছাড়াও শিক্ষার্থীদের কপাল, মাথা ও শরীরেও ক্ষত ছিল।
জানা যায়, গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (অ্যাকাডেমিক) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মো. কামাল উদ্দিন, প্রক্টর তানভীর মোহাম্মদ হায়দার আরিফসহ শিক্ষকবৃন্দ দুই পক্ষকে বোঝানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে থেকে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করলে দুই পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।
দুই পক্ষের মধ্যে থেমে থেমে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। শিক্ষার্থীদের হাতে ছিল রড, পাইপ, কাঠের লাঠি ও পাথর। স্থানীয়দের হাতে ছিল রামদা, রড ও পাইপ। সংঘর্ষে ২ নম্বর গেট সংলগ্ন এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়।
সংঘর্ষ এক পর্যায়ে গ্রামের অলিগলিতে ছড়িয়ে পড়ে। অনেক শিক্ষার্থী অলিগলিতে আটকে গেলে তাদের মারধর করা হয়। ধারালো অস্ত্রের আঘাতে রক্তাক্ত অবস্থায় একের পর এক শিক্ষার্থীকে নিয়ে যাওয়া হয় চট্টগ্রাম মেডিকেল সেন্টারে। এক পর্যায়ে গতকাল বেলা দুইটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করে হাটহাজারী উপজেলা প্রশাসন।
সংঘর্ষের ঘটনায় গুরুতর আহত হয়ে তিন শিক্ষার্থী নগরের দুই বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাদের মধ্যে এক জনকে ঢাকায় রেফার্ড করা হয়েছে।
আতিকুর রহমান/এআরবি