ইকসুর গঠনতন্ত্র সিন্ডিকেটে অনুমোদন, শিক্ষার্থীদের উচ্ছ্বাস
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ, কুষ্টিয়া কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ ও হল সংসদের গঠনতন্ত্র সিন্ডিকেটে চূড়ান্ত অনুমোদন পেয়েছে। বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৭১তম সিন্ডিকেট সভায় বিশ্ববিদ্যালয় আইন ১৯৮০ এর ধারা ৪১ অনুযায়ী এই গঠনতন্ত্র পাস হয়। এতে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের নাম হবে ‘ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ, কুষ্টিয়া কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ’। এতে থাকছে মোট ২৫টি পদ। এর মধ্যে ২৩টি পদে শিক্ষার্থীরা সরাসরি ভোট দিয়ে প্রতিনিধি নির্বাচন করবেন। উপাচার্য পদাধিকার বলে ছাত্র সংসদের সভাপতি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ পদাধিকার বলে ছাত্র সংসদের কোষাধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করবেন। অন্যদিকে হল সংসদে মোট ১৫টি পদ থাকবে। সংশ্লিষ্ট হলের প্রাধ্যক্ষ পদাধিকার বলে সভাপতি ও সহকারী প্রাধ্যক্ষদের মধ্য থেকে একজনকে কোষাধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ দেবেন। বাকি ১৩টি পদ সরাসরি নির্বাচনের মাধ্যমে পূরণ করা হবে।
বিজ্ঞাপন
গঠনতন্ত্রে ভোটার ও প্রার্থী হওয়ার যোগ্যতার বিষয়ে এতে বলা হয়েছে, গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, পূর্ণকালীন শিক্ষার্থীরাই ইকসু ও হল সংসদের ভোটার ও প্রার্থী হতে পারবেন। যারা ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে স্নাতক প্রথম বর্ষে ভর্তি হয়ে স্নাতক, স্নাতকোত্তর বা এমফিল পর্যায়ে অধ্যয়নরত এবং দাপ্তরিকভাবে বার্ষিক সদস্যপদ ফি প্রদান করেছেন। এমফিল শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে বয়সসীমা সর্বোচ্চ ৩০ নির্ধারণ করা হয়েছে। তারা মাত্র একবার ভোটার বা প্রার্থী হতে পারবেন। সান্ধ্যকালীন, এক্সিকিউটিভ, ডিপ্লোমা, সার্টিফিকেট ও ভাষা কোর্সের শিক্ষার্থীরা ভোটার বা প্রার্থী হওয়ার অযোগ্য বিবেচিত হবেন।
এছাড়া, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার, নাম কর্তন বা ডিগ্রি সম্পন্ন হওয়ার পর তিনি আর সংসদের সদস্য হিসেবে থাকবেন না। তবে নির্বাহী কমিটিতে দায়িত্বে থাকলে মেয়াদ শেষ হওয়া পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করতে পারবেন।
বিজ্ঞাপন
নির্বাহী কমিটির কাঠামোর বিষয়ে এতে বলা হয়, নির্বাহী কমিটি হবে ২৫ সদস্যের। এর মধ্যে সভাপতি ও কোষাধ্যক্ষ পদাধিকারপ্রাপ্ত। বাকি ২৩টি পদ সরাসরি নির্বাচনের মাধ্যমে পূরণ হবে। পদগুলোর মধ্যে সহসভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, সহসাধারণ সম্পাদকসহ মুক্তিযুদ্ধ, গণতন্ত্র, স্বাস্থ্য, পরিবেশ, সংস্কৃতি, ক্রীড়া, আইন ও মানবাধিকার, পরিবহন, ক্যারিয়ার ও গবেষণা, ইতিহাস ও ঐতিহ্য, কমনরুম ও ক্যাফেটেরিয়া দায়িত্বের পদ রাখা হয়েছে। এছাড়া ছয়জন নির্বাহী সদস্য থাকবেন এবং তাদের জ্যেষ্ঠতা নির্ধারিত হবে প্রাপ্ত ভোটের ভিত্তিতে।
এছাড়াও, বিশ্ববিদ্যালয়ের গঠনতন্ত্রে সম্মানসূচক আজীবন সদস্যপদের বিধান রাখা হয়েছে। উপাচার্যের সম্মতিক্রমে সমাজে প্রতিষ্ঠিত কোনো প্রাক্তন শিক্ষার্থীকে এ সদস্যপদ দেওয়া যাবে। তবে এজন্য ন্যূনতম ৫০ হাজার টাকা সদস্যপদ ফি প্রদান করতে হবে। আজীবন সদস্যরা কোনো নির্বাচনে ভোটার বা প্রার্থী হতে পারবেন না।
নির্বাচন কমিশন সম্পর্কে এতে বলা হয়, নির্বাচন তদারকিতে একজন প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ সর্বোচ্চ পাঁচজন শিক্ষককে নিয়ে নির্বাচন কমিশন হবে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার নির্বাচনের কমপক্ষে ২১ দিন আগে তফসিল ঘোষণা করবেন। তফসিলে ভোটের দিন, ভোটার তালিকা প্রকাশ ও যাচাই, মনোনয়নপত্র দাখিল ও প্রত্যাহারসহ সব তারিখ উল্লেখ থাকবে। আবাসিক হলে কোনো ভোটকেন্দ্র স্থাপন নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আল ফিকহ্ অ্যান্ড ল বিভাগের শিক্ষার্থী আশরাফুল আলম বলেন, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ইকসু) গঠনতন্ত্র সিন্ডিকেটে অনুমোদনের জন্য ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। আমি প্রত্যাশা করি, খুব শিগগিরই ইকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এবং শিক্ষার্থীদের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত প্রতিনিধিরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মানোন্নয়ন, গণতান্ত্রিক চর্চা ও সামগ্রিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবেন।
এ বিষয়ে গঠনতন্ত্র ও সংবিধি প্রণয়ন কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মিজানূর রহমান বলেন, আমরা ইকসুর খসড়া গঠনতন্ত্র প্রণয়নের পর কয়েক দফায় সাংবাদিক এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল ছাত্রসংগঠনের সঙ্গে বৈঠক করেছি। তারা সকলে মতামত দিয়েছে। যারা বলছে ছাত্রসংগঠনের সঙ্গে আলোচনা করিনি তারা মিথ্যা বলছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, সিন্ডিকেট সর্বসম্মতভাবে গঠনতন্ত্র অনুমোদন দিয়েছে। এখন এটি ইউজিসি, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও আইন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের জন্য পাঠানো হবে। রাষ্ট্রপতির সম্মতির পর এটি অর্ডিন্যান্স আকারে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনে অন্তর্ভুক্ত হবে।
এমএসএ/এমএসএ