বায়োরিফাইনারি প্রযুক্তি ব্যবহার করে সামুদ্রিক শৈবালভিত্তিক আগাছা (সি উইড) থেকে উচ্চমূল্যের পণ্য উৎপাদনের নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি)।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আবদুল হান্নানের নেতৃত্বে একদল গবেষক সামুদ্রিক শৈবাল থেকে রঞ্জক, অ্যাগার ও সেলুলোজ—এই তিনটি উৎপাদনে সফলতা পেয়েছে। গবেষণায় সহযোগিতা করেছে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (পবিপ্রবি)। এই গবেষণা বাংলাদেশের নীল অর্থনীতিকে আরও শক্তিশালী ও টেকসই করে তুলতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশা গবেষকদের। 

জানা যায়, ‘সামুদ্রিক শৈবালভিত্তিক বায়োরিফাইনারি প্রযুক্তির মাধ্যমে উচ্চমূল্যের পণ্য উন্নয়ন’ শীর্ষক এই উপপ্রকল্পটি বাস্তবায়িত হয়েছে মৎস্য অধিদপ্তরের ‘সাসটেইনেবল কোস্টাল অ্যান্ড মেরিন ফিশারিজ প্রকল্পের (এসসিএমএফপি)’ অর্থায়নে। এর মূল লক্ষ্য, সম্পদের টেকসই ব্যবহার নিশ্চিত করা এবং জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের পথে বাংলাদেশকে এগিয়ে নেওয়া।

প্রকল্পের প্রধান গবেষক ও বাকৃবির প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আবদুল হান্নান বলেন, গবেষণায় ব্যবহৃত হয়েছে গ্র্যাসিলারিয়া টেনুইস্টিপিটাটা (Gracilaria tenuistipitata) নামের সামুদ্রিক শৈবাল (সি উইড)। এই শৈবাল থেকে পর্যায়ক্রমে তিনটি মূল্যবান উপাদান রঞ্জক পদার্থ, অ্যাগার (জেল-উৎপাদক উপাদান) ও সেলুলোজ—সফলভাবে নিষ্কাশন করা হয়েছে। বায়োরিফাইনারি প্রযুক্তির বিশেষত্ব হলো, শৈবালের প্রতিটি অংশই ব্যবহৃত হয়। ফলে বর্জ্য তৈরি হয় খুব কম, যা পরিবেশবান্ধব।

তিনি আরও বলেন, গবেষণার কার্যক্রমটি শুরু হয় ২০২৪ সালের শুরুর দিকে। প্রথম ধাপে জলীয় পদ্ধতিতে শৈবাল থেকে ফাইকোবিলিপ্রোটিন রঞ্জক সংগ্রহ করা হয়। এতে শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও প্রদাহরোধী গুণ রয়েছে। এই প্রাকৃতিক রঞ্জক দইসহ বিভিন্ন খাদ্যে ব্যবহার করা যায় এবং স্বাদ, গন্ধ, রং ও গ্রহণযোগ্যতা বাড়ায়। এরপর বাকি থাকা অংশ থেকে অ্যাগার উৎপাদিত হয়েছে। যার পরিমাণ পাওয়া গেছে প্রায় ১৫ শতাংশ। শেষে যে অংশটি অবশিষ্ট থাকে, তা থেকে সেলুলোজ সংগ্রহ করে গ্লিসারিন, অ্যাগার ও জিলেটিনের সঙ্গে মিশিয়ে একটি শক্তিশালী, অতিবেগুনি রশ্মি প্রতিরোধী ও জৈব-বিয়োজ্য বায়োফিল্ম তৈরি করা হয়েছে। এই বায়োফিল্ম প্যাকেজিং ও বায়োমেটেরিয়াল শিল্পে ব্যবহারের উপযোগী।

গবেষণার বিষয়ে বাকৃবি উপাচার্য অধ্যাপক ড এ কে ফজলুল হক ভূঁইয়া বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে টেকসই উন্নয়নের জন্য নীল অর্থনীতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাকৃবির এই গবেষণা সামুদ্রিক সম্পদের কার্যকর ব্যবহার নিশ্চিত করে দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক অবদান রাখবে।

মুসাদ্দিকুল ইসলাম তানভীর/এএমকে