জুলাই আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলা
অভিযুক্ত শিক্ষকদের বিচার নিয়ে জাবি প্রশাসনের গড়িমসি
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হওয়া হামলায় মদদ দেওয়ায় অভিযুক্ত শিক্ষকদের বিচারকার্য এখনও শেষ হয়নি। ঘটনাটির পর ১৪ মাস পার হলেও বিচারপ্রক্রিয়ায় কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি না থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ছাত্র ও শিক্ষক সংগঠনের নেতারা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, একই ঘটনায় অভিযুক্ত শিক্ষার্থীদের বিচার শেষ করে কেউ স্থায়ীভাবে বহিষ্কার হয়েছেন, আবার কারও সনদ বাতিল করা হয়েছে। কিন্তু একই অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও অভিযুক্ত শিক্ষকদের বিচার নিয়ে প্রশাসন টালবাহানা করছে। এতে করে এক সময় শিক্ষকদের বিচার আর এগোবে না এমন আশঙ্কাও প্রকাশ করছেন তারা।
বিজ্ঞাপন
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, জুলাই আন্দোলনের সময় ১৪ জুলাই বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের সামনে, ১৫ জুলাই তৎকালীন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের সামনে এবং সেদিন রাতে উপাচার্যের বাসভবনে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা হয়। প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদনে ২৮৯ নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীকে অভিযুক্ত করা হয়। প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পর ১৭ মার্চ সিন্ডিকেট সভায় তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। একই সময়ে ৯ শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্ত করা হয় এবং মোট ১৯ জনের বিরুদ্ধে তদন্তে স্ট্রাকচার্ড কমিটি গঠন করা হয়। তবে এসব কমিটি গঠনের আট মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো কোনো প্রতিবেদন জমা পড়েনি। সংশ্লিষ্টদের আশঙ্কা, ২০২৬ সালের মাঝামাঝি সময়েও বিচারকাজ শেষ নাও হতে পারে।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার মদদ দেওয়ার অভিযোগে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যে ১৯ শিক্ষককে অভিযুক্ত করেছে, তারা সবাই অতীতে আওয়ামীপন্থী রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদেও ছিলেন। তাদের বিরুদ্ধে স্ট্রাকচার্ড কমিটি গঠন করা হয়েছে, যার মধ্যে ৯ জন শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
সাময়িক বরখাস্ত হওয়া শিক্ষকরা হলেন- সাবেক উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) মোহাম্মদ মোস্তফা ফিরোজ, সাবেক প্রক্টর আলমগীর কবির, নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ইস্রাফিল আহমেদ রঙ্গন, ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মেহেদী ইকবাল, সমাজবিজ্ঞান অনুষদের তৎকালীন ডিন বশির আহমেদ, সরকার ও রাজনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান, ইতিহাস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক হোসনে আরা, বাংলা বিভাগের অধ্যাপক নাজমুল হোসেন তালুকদার এবং পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিকস বিভাগের অধ্যাপক তাজউদ্দীন শিকদার।
হামলার ঘটনায় আরও ১০ শিক্ষকের সংশ্লিষ্টতা ও অভিযোগের মাত্রা বিবেচনায় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেওয়ার জন্য যে স্ট্রাকচার্ড কমিটি গঠন করা হয়েছে, তাদের মধ্যে রয়েছেন- অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের প্রভাষক কানন কুমার সেন, আইবিএর অধ্যাপক পলাশ সাহা, পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শফি মোহাম্মদ তারেক, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক জহিরুল ইসলাম খোন্দকার, অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম, লোক প্রশাসন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মনির উদ্দিন শিকদার ও অধ্যাপক মোহাম্মদ ছায়েদুর রহমান, মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের অধ্যাপক আনোয়ার খসরু পারভেজ, নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মহিবুর রৌফ শৈবাল এবং পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক এ এ মামুন।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুল আহসান বলেন, ১৯ শিক্ষক মানে ১৯টি কমিটি। সব সভা একসঙ্গে করা যায় না, আলাদা করে করতে হয়। শিক্ষার্থীদের বিচার আমরা করেছি, শিক্ষকদের বিচারও করব। আগামী বছরের মার্চের মধ্যেই বিচার শেষ করার আশা করছি।
এআরবি