শহীদ হাদির হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার ও ভারতীয় গুপ্তচর অপসারণের দাবি
শহীদ শরিফ ওসমান হাদির হত্যাকারীদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার ও দ্রুত বিচার, নির্বাচনের আগে গোয়েন্দা সংস্থা ও গণমাধ্যমে থাকা ভারতীয় গুপ্তচরদের চিহ্নিত করে অপসারণের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছে সংগঠন ‘মঞ্চ ২৪’।
সোমবার (২৯ ডিসেম্বর) সকাল ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি তুলে ধরেন সংগঠনটির প্রতিনিধি ফাহিম ফারুকী।
বিজ্ঞাপন
এ সময় তিনি শহীদ হাদির হত্যার বিচারের দাবিতে চলমান ইনকিলাব মঞ্চের অবরোধ কর্মসূচির সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেন।
সংবাদ সম্মেলনে ফাহিম ফারুকী বলেন, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে আমরা কোনো আপোষ করব না। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার শহীদ শরিফ ওসমান হাদির হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে যে নমনীয় অবস্থান নিয়েছে, তা শহীদ আবু সাঈদ ও ওয়াসিম মুগ্ধের চেতনার পরিপন্থি।
বিজ্ঞাপন
তিনি অভিযোগ করেন, ২০২৪ সালের ছাত্র-জনতার আন্দোলনের অন্যতম সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক প্রেরণা ছিলেন শহীদ হাদি। আধিপত্যবাদবিরোধী সংগ্রামে তার ভূমিকার কারণেই তিনি দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হন। ‘দিল্লির তালিকায় নাম ওঠার পর পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেছে আওয়ামী লীগ’ এমন অভিযোগও করেন তিনি।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নেতৃবৃন্দের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে উল্লেখ করে ফাহিম ফারুকী বলেন, যে সরকার আমাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারেনি, সে সরকার যদি বিচারেও ব্যর্থ হয়—তাহলে তা হবে ভয়ংকর বার্তা। এতে অপরাধী চক্র আরও বেপরোয়া হয়ে উঠবে।
তিনি দাবি করেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে ৮ থেকে ২৭ দিনের মধ্যে বিচার সম্পন্ন হওয়ার নজির রয়েছে। সুতরাং আন্তরিকতা থাকলে জানুয়ারির মধ্যেই শহীদ হাদির হত্যার বিচার শেষ করা সম্ভব।
ফাহিম ফারুকী আরও বলেন, খুনি ফয়সাল এই হত্যাকাণ্ডের সবচেয়ে ছোট অংশ। তাকে গ্রেপ্তার করা হলে পুরো চক্র উন্মোচিত হবে। কিন্তু সরকার এখনো তাকে ফেরত আনার বিষয়ে নিশ্চিত আশ্বাস দিতে পারছে না—যা সরকারের সীমাবদ্ধতা স্পষ্ট করে।
গোয়েন্দা সংস্থা ও গণমাধ্যমে ভারতীয় প্রভাবের অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, এখনো সামরিক গোয়েন্দা ও বিভিন্ন গণমাধ্যমে ভারতীয় অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়নকারী চক্র সক্রিয় রয়েছে, যা দেশের স্বাধীনতা ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য হুমকি। সংবাদ সম্মেলনে রেমিট্যান্স বন্ধের সম্ভাব্য কর্মসূচির কথাও জানান তিনি।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে হুঁশিয়ারি দিয়ে ফাহিম ফারুকী বলেন, সরকার যদি বিচার প্রক্রিয়ায় ইতিবাচক অগ্রগতি না দেখায়, তবে প্রবাসী বাংলাদেশিদের সঙ্গে আলোচনা করে এক সপ্তাহের জন্য রেমিট্যান্স বন্ধের আহ্বান জানানো হবে।
এ সময় তিনি মঞ্চ ২৪-এর চার দফা দাবি উত্থাপন করেন। দাবিগুলো হলো—
১. শহীদ শরিফ ওসমান হাদির মূল খুনি ও সহযোগী চক্রকে অবিলম্বে গ্রেপ্তার করে ২৫ দিনের মধ্যে বিচার কার্য সম্পন্ন করতে হবে।
২. নির্বাচনের আগে গোয়েন্দা সংস্থার কাঠামোগত সংস্কার এবং সেখানে থাকা সব ভারতীয় গুপ্তচরকে চিহ্নিত করতে হবে।
৩. গণমাধ্যমে লুকিয়ে থাকা দেশবিরোধী ও বিদেশি অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়নকারীদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।
৪. বাংলাদেশে অবস্থানরত ভারতীয় নাগরিকদের ওয়ার্ক পারমিট পুনর্মূল্যায়ন ও বাতিল, এবং ভারত খুনিদের ফেরত না দিলে আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনের শেষ দিকে ফাহিম ফারুকী বলেন, ইনসাফ ছাড়া কোনো কূটনৈতিক সম্পর্ক মেনে নেওয়া হবে না। যতক্ষণ না খুনি ফয়সালকে কারাগারে দেখা যাবে, ততক্ষণ আন্দোলন চলবে। আজ বিকেল ২টায় শাহবাগে ইনকিলাব মঞ্চের কর্মসূচিতে মঞ্চ–২৪ একাত্মতা পোষণ করে অংশগ্রহণ করার ঘোষণাও দেন তিনি।
এসএআর/এমএন