করোনাকালীন এক হাজারেরও বেশি বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীকে অনলাইনে বিনামূল্যে পড়াচ্ছে ‘ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া সাইন্স একাডেমি’। জানা গেছে, ১০০ জন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজের নেতাকর্মীদের সমন্বয়ে গঠিত ‘ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া সাইন্স একাডেমি’র মাধ্যমে করোনার শুরু থেকে নবম-দশম ও একাদশ দ্বাদশ শ্রেণীর বিজ্ঞান শাখার শিক্ষার্থীদের পড়ানোর উদ্যোগ নেয় ছাত্রলীগ। কার্যক্রমটির কোর্ডিনেট করছেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় উপবিজ্ঞান বিষয়ক সম্পাদক খন্দকার হাবীব আহসান।

উদ্যোগটিতে শিক্ষক (ক্লাস কন্ডাক্টর) হিসেবে কাজ করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বুয়েট, কুয়েট, রুয়েট, চুয়েট ও বিভিন্ন মেডিকেলে পড়ুয়া ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। প্রতিজন শিক্ষক ১৫-২০ জনের এক একটি গ্রুপকে সপ্তাহে ন্যূনতম তিন দিন পদার্থ, রসায়ন, গণিত, জীববিজ্ঞান, আইসিটি, ইংরেজি বিষয়ে অনলাইনে ক্লাস নিচ্ছেন। নটরডেম কলেজ, রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজ, ভিকারুননিসা নুন স্কুল অ্যান্ড কলেজসহ দেশের বিভিন্ন স্কুল কলেজ এবং মাদ্রাসার বিজ্ঞান শাখার শিক্ষার্থীরা এতে নিয়মিত ক্লাস করছেন।

এই সেবা পেয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থীরা। তারা বলছেন, বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদের জন্য এমন উদ্যোগ খুব কমই নেওয়া হয়। বাংলাদেশ ছাত্রলীগের এমন উদ্যোগে আমরা লাভবান হচ্ছি, অনেক কিছু শিখতে পারছি। সত্যিই এটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ।

বাংলাদেশ এগ্রিকালচার রিসার্চ ইনস্টিটিউট হাইস্কুলের শিক্ষার্থী ফাতেমা তুজ জহুরা ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া সাইন্স একাডেমির একজন শিক্ষার্থী। তিনি বলেন, করোনায় যেখানে সব ধরনের প্রাইভেট, টিউশনি বন্ধ হয়ে গেছে, সে জায়গায় ছাত্রলীগ যে উদ্যোগ নিয়েছে তা অবশ্যই প্রশংসনীয়। যারা ক্লাস নিচ্ছেন, তাদের কাছ থেকে অনেক কিছু শিখেছি।

রংপুর সরকারি কলেজের একাদশ শ্রেণিতে অধ্যয়নরত রিফাত হাসান বলেন, আমার আগে যে সমস্যাগুলো ছিল, ক্লাসগুলো করার মাধ্যমে তার অনেকটা সমাধান হয়েছে। দেশের সেরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা আমাদের ক্লাস নেন। এজন্য আমি খুব গর্ব অনুভব করি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের শিক্ষার্থী রাজন হোসাইন। কাজ করছেন ক্লাস কন্ডাক্টর হিসেবে। ঢাকা পোস্টকে তিনি বলেন, করোনা মহামারির কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দীর্ঘ সময় বন্ধ। যার ফলে শিক্ষার্থীরা পড়ালেখা থেকে খানিকটা দূরে সরে গিয়েছে। বেশিরভাগ শিক্ষার্থীই অনলাইন গেমিং বা অন্য বিভিন্ন কাজে তাদের সময় নষ্ট করছে। বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কর্মী হিসেবে সামাজিক দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে আমাদের এই উদ্যোগ।

আরেক ক্লাস কন্ডাক্টর চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাফকাত আর রুম্মান বলেন, প্রথমে যখন আমরা ক্লাস নেওয়া শুরু করি তখন আমার মনে হলো দেশের এই প্রত্যন্ত অঞ্চলের শিক্ষার্থীরা শহরের শিক্ষার্থীদের মতো সমান সুযোগ পাচ্ছে না। আমরা তাদের প্রোপার গাইড দেওয়া শুরু করি। এখন তারা যেনো হারানো পথ খুঁজে পেয়েছে। তারা এখন নতুন নতুন শিখছে। তাদেরকে শেখানোর মাধ্যমে আমরাও শিখছি।

কেন এই উদ্যোগ জানতে চাইলে ‘ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া সাইন্স একাডেমি’র কোর্ডিনেটর খন্দকার হাবীব আহসান ঢাকা পোস্টকে বলেন, করোনার কারণে দীর্ঘদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ রয়েছে। আমরা যেহেতু ছাত্র রাজনীতি করি, শুরু থেকে আমাদের মনে হয়েছে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ছাত্র নেতাদের একটা বন্ধন থাকা উচিত। ছাত্র রাজনীতির একজন কর্মী হিসেবে শিক্ষার্থীদের জন্য কাজ করা উচিত। সেই দায়বদ্ধতা থেকেই করোনা মহামারি আকার ধারণ করার পর বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদের জন্য বাংলাদেশ ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে এই কার্যক্রমটি হাতে নেই। আমার বিশ্বাস, আমাদের এই উদ্যোগ দেশে বিজ্ঞান শিক্ষা প্রসারে ভূমিকা রাখবে।

বাংলাদেশ ছাত্রলীগের এই উপবিজ্ঞান বিষয়ক সম্পাদক আরও বলেন, গত বছর সেপ্টেম্বর-অক্টোবর থেকে ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া সাইন্স একাডেমিতে ২০ জন শিক্ষার্থীকে পড়ানো শুরু করি। করোনা সংক্রমণ বাড়ায় এ বছর নতুন উদ্যমে কার্যক্রমটি শুরু হয়েছে। সবমিলে এখন পর্যন্ত রেজিস্ট্রেশন করা নিয়মিত শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১ হাজারেরও বেশি। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০০ জন ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা স্বেচ্ছায় ক্লাস কন্ডাক্টর হিসেবে কাজ করছেন। বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের পক্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের জন্য এটি একটি স্বেচ্ছাসেবী কার্যক্রম। কার্যক্রমটি পরিচালনার জন্য কারো কাছ থেকে কোনো ধরনের আর্থিক সহায়তা নেওয়া হচ্ছে না।

তিনি বলেন, যতদিন পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলবে না, ততদিন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের এই বিনামূল্যের অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। আমাদের এখানে বেশ কয়েকজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকও ক্লাস নিচ্ছেন। যে কেউ আমাদের এখানে ক্লাস নিতে পারবেন এবং ক্লাস করতে পারবেন।

কার্যক্রমটি সফলভাবে চালাতে যারা আর্থিক সুবিধা ছাড়াই নিয়মিত ক্লাস নিচ্ছেন এবং যেসব শিক্ষার্থীরা শিক্ষা সহায়তা নিচ্ছেন তাদের ও সংশ্লিষ্টদের প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান তিনি।

কার্যক্রমটির সঙ্গে যুক্ত হতে যোগাযোগ করতে হবে ০১৭৪০০০০০৭৫, ০১৯৭১৪৮৫২৬৬ এই দুটি নাম্বারের যেকোন একটিতে। অথবা Fb/DrMAWazedMiahSA ফেসবুক পেইজ কিংবা ইমেইল- drmawazedmiahscienceacademy@gmail.com এর মাধ্যমেও যোগাযোগ করা যাবে।

এইচআর/এমএইচএস