জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৬তম শাহাদতবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘বঙ্গবন্ধু পরবর্তী বাংলাদেশ’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক ওয়েবিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে।

রোববার (১৫ আগস্ট) বিকাল ৪টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রগতিশীল শিক্ষকদের সংগঠন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় নীলদলের উদ্যোগে অনলাইনে ওয়েবিনারটি অনুষ্ঠিত হয়।

এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আব্দুল মান্নান। স্বাগত বক্তব্য রাখেন আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মো. ছিদ্দিকুর রহমান।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক আব্দুল মান্নান বলেন, বঙ্গবন্ধুর সবচেয়ে বড় সফলতা ছিল স্বাধীনতার নয় মাসের মধ্যে একটি পরিপূর্ণ সংবিধান প্রণয়ন। বঙ্গবন্ধু স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখতেন মূলত সামাজিক রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বৈষম্য থেকে বাংলাদেশের মানুষকে মুক্ত করার জন্য। স্বাধীনতা পরবর্তী নানাবিধ সমস্যা মোকাবেলা করে বঙ্গবন্ধু যখন দেশ পুনর্গঠনের দিকে মনোনিবেশ করেন তখনই নির্মমভাবে তাকে হত্যা করা হয়।

ওয়েবিনারে সম্মানিত অতিথি হিসেবে একুশে পদকপ্রাপ্ত সাংবাদিক স্বদেশ রায় বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পরে যখন তারা দেশের সংবিধানকে পরিবর্তন করে তখন সেই হত্যাকাণ্ডকে একটি সাধারণ হত্যাকাণ্ড বলা যায় না। হত্যাকারীরা সংবিধান থেকে সাধারণ মানুষের আন্দোলন সংগ্রামের বিষয়টিকে মুছে দিতে চেয়েছিলেন। এর মধ্য দিয়ে ৪৮এর অসহযোগ আন্দোলন, ৫২-র ভাষা আন্দোলন এবং ৬৬র ছয় দফা, ৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান এবং ৭০ এর নির্বাচন সবকিছুকেই তারা অস্বীকার করে।

ভারতের ইনস্টিটিউট অব কালচারাল অ্যান্ড সোশ্যাল স্টাডিজের পরিচালক অরিন্দম মুখোপাধ্যায় বলেন, ৭১-এর পরাজিত শক্তিরা আবারও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে ব্যবহার করে একটি ইকোসিস্টেম তৈরি করছে। এক্ষেত্রে তারা ভারতবিরোধীতার বিষয়টিকে সবসময় ব্যবহার করে থাকে।

আলোচক হিসেবে সমাজবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিপ্রা সরকার বলেন, বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক দর্শনের পথে হেঁটেই বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে তার সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে। অর্থনীতি ও শিক্ষাসহ সামাজিক সকল সূচকেই বাংলাদেশ এখন প্রতিবেশী দেশগুলোর চেয়ে অনেক এগিয়ে।

ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সেলিম ৭৫ পরবর্তী পররাষ্ট্র নীতির পরিবর্তনের বিষয়টি তুলে ধরে বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর যে বাংলাদেশকে আমরা পেয়েছিলাম সেটি আসলে প্রকৃত বাংলাদেশ ছিল না। বাংলাদেশকে একটি ভিন্ন চরিত্রে উপস্থাপনের চেষ্টা করা হয়েছে। এছাড়া বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পরে পাকিস্তানের উল্লাস প্রকাশের বিষয়টিও তিনি উল্লেখ করেন।

বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক ড. এস এম আনোয়ারা বেগম বলেন, পাকিস্তানিরা বঙ্গবন্ধুকে দুইবার ফাঁসি দেওয়ার পরিকল্পনা করে। এতে সফল না হলেও স্বাধীন বাংলাদেশেই পাকিস্তানপন্থী একদল সেনাসদস্য প্রায় সপরিবারে তাকে হত্যা করে। তাকে হত্যার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িকতার বীজ বপন করার চেষ্টা হয়েছে বার বার। যদিও শেষ পর্যন্ত তারা সফলতার মুখ দেখবে না বলেই আমাদের বিশ্বাস। বঙ্গবন্ধু যে সোনার বাংলার স্বপ্ন দেখতেন, আমরা এখন সে লক্ষ্যেই এগিয়ে যাচ্ছি।

ওয়েবিনারে সভাপতিত্ব করেন নীলদলের সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. আবুল হোসেন এবং ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন নীলদলের সাধারণ সম্পাদক মো. কামাল হোসেন। ওয়েবিনারটি সঞ্চালনা করেন সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ আব্দুল কাদের এবং সহকারী অধ্যাপক বুশরা জামান।

এছাড়াও বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও সাংবাদিকরা ওয়েবিনারে উপস্থিত ছিলেন।

এমএইচএস