আবাসিক হল বন্ধ রেখে সশরীরে পরীক্ষা চলছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি)। এ ছাড়া বিভিন্ন বিভাগের সেশনভিত্তিক পরীক্ষার রুটিন প্রকাশ শুরু করেছে। এতে করে বিপাকে পড়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীরা। 

এদিকে পরীক্ষা গ্রহণের সিদ্ধান্তের পর শিক্ষার্থীরা বাড়ি ছেড়ে শহরে ও ক্যাম্পাসের আশপাশের মেসে অবস্থান করছেন। হল বন্ধ থাকায় নতুন করে বাসা ভাড়া নিচ্ছেন অনেকে। মেস সঙ্কটের পাশাপাশি বাড়তি ভাড়াও চাচ্ছেন মালিকেরা। ফলে আর্থিক সমস্যার সঙ্গে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন তারা। সাধারণ শিক্ষার্থীরা কষ্ট করে কটেজ, বাসা জোগাড় করতে পারলেও প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীরা সেটাও করতে পারছেন না। উপযুক্ত পরিবেশ, ভাড়া না দেওয়া, দূরত্ব এবং নিরাপত্তা সব মিলে চরম বিপাকে পড়েছেন তারা।

চবি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের সংগঠন ‘ডিজেবল স্টুডেন্ট অ্যাসোসিয়েশন’(ডিসকু) এর সদস্য সংখ্যা ১৫০ জনের বেশি। যাদের বেশির ভাগেরই বসবাস বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলে। 

ডিসকুর সাধারণ সম্পাদক গোলাম কিবরিয়া ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা রেজিস্ট্রার বরাবর চিঠি দিয়েছি। উনি আশ্বস্ত করেছেন। কিন্তু অতীত অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব সময়ই আশ্বস্ত করা হলেও বাস্তবায়ন হয় না। কিছুদিন আগেও আমাদের এক বোন অপ্রীতিকর ঘটনার মুখোমুখি হয়েছে। হল বন্ধ থাকায় নিরাপত্তা নিয়ে আমরা চিন্তিত। প্রশাসনের সহযোগিতা ছাড়া আমরা অসহায়।

সমাজতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থী মাসুদা আক্তার থাকতেন শামসুন্নাহার হলে। এদিকে সেপ্টেম্বরে পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করেছে বিভাগ। পরীক্ষা এবং থাকা নিয়ে বেশ চিন্তিত তিনি। বললেন, হল বন্ধ। কোথায় কীভাবে থাকব? সব বাড়িওয়ালা ভাড়াও দিতে চায় না। আবার সব জায়গায় আমাদের থাকার মতো পরিবেশ নেই। আমরা পরীক্ষা দেব কীভাবে? প্রশাসনের  কাছে আবেদন অন্তত পরীক্ষার জন্য হলে থাকার ব্যবস্থা  করে দিন।

প্রতিবন্ধীদের নিয়ে কাজ করছে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন থার্ড আই। সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা চবি শিক্ষার্থী মাসরুর ইশরাক বলেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্রেইল সিস্টেমের বই না থাকলেও লাইব্রেরিতে কিছু রেকর্ডিং পাওয়া যায়, তবে সেটা অপ্রতুল। তার ওপর লাইব্রেরি করোনার শুরু থেকেই বন্ধ। এদিকে বিভিন্ন বিভাগ পরীক্ষার রুটিন প্রকাশ করেছে। কিন্তু হল বন্ধ থাকায় প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীরা খুবই বিপাকে পড়েছেন। আমরা থার্ড আইয়ের পক্ষ থেকে বৃহস্পতিবার (২৬ আগস্ট) প্রশাসনের কাছে পাঁচ দফা দাবি জানাব।

তিনি আরও বলেন, পরীক্ষার সময় ভোগান্তি পোহাতে হয় শ্রুতিলেখক নিয়ে। এবার সব বিভাগের পরীক্ষা প্রায় একসঙ্গে হওয়াতে বেশ কঠিন হয়ে পড়বে মনে হচ্ছে। বিভাগভিত্তিক জটিলতা তো আছেই। ওই সময়গুলোতে পরীক্ষা দেওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়ে তাদের।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এস এম মনিরুল হাসান ঢাকা পোস্টকে বলেন, এটা নিয়ে আমরাও ভাবছি। তবে করোনা পরিস্থিতি ভালোর দিকে হওয়ায় ক্যাম্পাস খোলার সঙ্গে আবাসিক হলগুলো খুলে দেওয়া হবে। কিছু দিন অপেক্ষা করতে হবে আমাদের। আশা করি সাময়িক সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।

রুমান হাফিজ/এসপি