প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস মহামারির কারণে প্রায় দেড় বছর বন্ধ থাকার পর ১৫ সেপ্টেম্বরের পর শর্তসাপেক্ষে খুলছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) আবাসিক হলগুলো। 

শর্তগুলোর মধ্যে রয়েছে- শিক্ষার্থীদের করোনার টিকা নিতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় খোলার পর শুধুমাত্র বৈধ শিক্ষার্থীরা সংশ্লিষ্ট হলে অবস্থান করবেন। যাদের ছাত্রত্ব নেই, তারা কোনোভাবেই অবস্থান করতে পারবেন না। এছাড়া হলে কোনো গণরুম থাকবে না বলেও জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

গণরুম না থাকার এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন ছাত্রনেতারাও। তারা বলছেন এটা প্রশাসনের কাছে তাদের দীর্ঘদিনের দাবি। গণরুম না থাকাকে সাধুবাদ জানালেও তারা সংশয় প্রকাশ করেছেন এর কার্যকারিতা নিয়ে। তারা বলছেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এর আগেও এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে, কিন্তু তার প্রতিফলন ঘটেনি।

ঢাবি ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন এ বিষয়ে ঢাকা পোস্টকে বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যেন পূর্ণাঙ্গ আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়, সেটার জন্য আমরা কথা বলেছি, আন্দোলন করেছি এবং ডাকসুর ইশতেহারেও ছিল। গণরুম সার্বিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ এবং ছাত্র রাজনীতির জন্য নেতিবাচক একটি দিক। একুশ শতকে এসেও গণরুমে থাকতে হচ্ছে, এটা আমাদের জন্য দুর্ভাগ্যের। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে আমাদের দাবি, শিক্ষার্থীরা যেন মর্যাদার সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ে দিন অতিবাহিত করতে পারে, গণরুমের মতো নেতিবাচক ব্যবস্থায় যেন শিক্ষার্থীদের পড়তে না হয়, সে ব্যবস্থা করতে হবে।

সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়নের দাবি জানিয়ে ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সভাপতি ফয়েজ উল্লাহ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যদি গণরুম না থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করতে পারে, তাহলে আমরা অবশ্যই সাধুবাদ জানাব। সেক্ষেত্রে ছাত্র সংগঠন হিসেবে ছাত্র ইউনিয়ন প্রশাসনকে সহযোগিতা করবে। তবে অতীতেও এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কিন্তু বাস্তবায়ন হয়নি। আমরা চাই এবার বাস্তবায়ন হোক। তবে যদি গণরুম না থাকে, সেখানে থাকা শিক্ষার্থীদের কোথায় কিভাবে সিট দেওয়া হবে তার একটি সুনির্দিষ্ট নীতিমালা করে শিক্ষার্থীদের সামনে তা তুলে ধরতে হবে। 

ঢাবি ছাত্রদলের আহ্বায়ক রাকিবুল ইসলাম রাকিব ঢাকা পোস্টকে বলেন, কর্তৃপক্ষের এ সিদ্ধান্তকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল সাধুবাদ জানাচ্ছে। একই সাথে আমাদের দাবি, ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনের ছত্রছায়ায় যেসব অবৈধ শিক্ষার্থী হলে অবস্থান করেন, তাদের হল থেকে বের করতে হবে এবং ছাত্রলীগের হাতে দখলকৃত রুমগুলো উদ্ধার করতে হবে। তবেই এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে বলে আমরা মনে করছি।

ছাত্র অধিকার পরিষদ ঢাবি শাখার সাধারণ সম্পাদক আকরাম হোসাইন বলেন, ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনের ছত্রছায়ায় সবসময় গণরুম নামক এক নরক দেশের সর্বোচ্চ মেধাবীদের কপালে জুটেছে। কৃত্রিম সিট সংকট দেখিয়ে যখন যে ক্ষমতায় ছিল, তারা শিক্ষার্থীদের গণরুমে রেখে জোর করে মিছিলে নেওয়ার অপসংস্কৃতি চালু করেছে। আমরা এবার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন চাই এবং এর পাশাপাশি শতবর্ষে শতভাগ আবাসনের ব্যবস্থা করার জোর দাবি জানাই। ক্যাম্পাস খোলার পর ক্ষমতাসীনদের ছত্রছায়ায় গণরুম ব্যবস্থার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের নির্যাতন করার বিন্দুমাত্র চেষ্টা করলে, আমরা সাধারণ ছাত্রদের সাথে নিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলবো।

এর আগে হল খোলার প্রস্তুতি এবং গণরুমের বিষয়ে প্রভোস্ট স্ট্যান্ডিং কমিটির সভাপতি ও বিজয় একাত্তর হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. আবদুল বাছির ঢাকা পোস্টকে বলেন, হলগুলোতে এখন আর গণরুম থাকবে না। উপাচার্য স্যারের নেতৃত্বে প্রভোস্ট কমিটি একটি নীতিমালা করেছে। আর কোনো শিক্ষার্থী ফ্লোরে ঘুমাবেন না, অবশ্যই নির্ধারিত একটি খাট থাকবে। গণরুমে কোনো শিক্ষার্থী থাকবে না। মানসম্পন্ন রুমগুলোতে আমরা তাদের জন্য সিট বরাদ্দ দিয়ে রেখেছি। হল খোলার পর এ প্রক্রিয়া শুরু করা হবে।

এইচআর/এনএফ