গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষায় ২৫ নম্বর পেলেই পোষ্য কোটায় ভর্তির সুযোগ পাচ্ছেন শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শেকৃবি) শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সন্তানরা। সাধারণ শিক্ষার্থীদের যেখানে ১০০ নম্বরের মধ্যে ৪০ নম্বরে পাশ ধরা হয় সেখানে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মরতদের সন্তানদের মাত্র ২৫ নম্বর পেলেই মেলে ভর্তির সুযোগ।

ভর্তি বিজ্ঞপ্তির তথ্য অনুসারে, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে চারটি অনুষদে সাধারণ আসনে ৬২০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি নেওয়া হবে। ২০ জন ভর্তি করা হবে পোষ্য কোটায়। পোষ্য কোটার জন্য পৃথক সার্কুলার হয়, নেওয়া হয় পৃথক ভর্তি পরীক্ষা। খুব কমসংখ্যক শিক্ষার্থী অংশ নেয় ভর্তি পরীক্ষায়, ফলে প্রায় সবার ভর্তিই নিশ্চিত হয়ে যায়।

অন্যান্য পাঁচ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাংলাদেশ কৃষি বিশ^বিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রামের ভেটেরিনারি ও অ্যানিমেল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয় ও খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়) পোষ্য কোটা নেই। পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে পোষ্য কোটা থাকলেও এ সংখ্যা এক শতাংশের সামান্য বেশি। অথচ শেকৃবিতে পোষ্য কোটা তিন শতাংশ। পাশাপাশি পোষ্য কোটায় ভর্তি পরীক্ষায় পাশের নম্বরও কম।

দেখা গেছে, যেখানে একজন সাধারণ শিক্ষার্থী ভর্তি পরীক্ষায় ৭০ নম্বর পেয়েও ভর্তির নিশ্চয়তা নেই, সেখানে প্রতিষ্ঠানের কর্মরতদের সন্তানদের ২৫ নম্বর পেলেই ভর্তি নিশ্চিত হয়ে যায়। পোষ্য কোটায় এভাবে অযাচিত সুবিধা দেওয়া নিয়ে আপত্তি করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এই পদ্ধতির সমালোচনা করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক।

শিক্ষার্থীরা জানান, ভর্তি পরীক্ষার মতো প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় এ ধরনের সুবিধা দেওয়া অনুচিত। শিক্ষকের সন্তানরা টেনেটুনে চান্স পায়, অনার্সে কম রেজাল্ট নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হয়ে যায়, মেধাবীদের এখানে যথাযথ মূল্যায়ন করা হয় না। আমরা চাই অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো এই বিশ্ববিদ্যালয়ের পোষ্য কোটা বাতিল করা হোক। 

বিশ্ববিদ্যালয় একাধিক শিক্ষক জানিয়েছেন, কয়েক বছর আগে পোষ্য কোটায় ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম এক শীর্ষ কর্মকর্তার সন্তান ফেল করে। তখন পাশ নম্বর ছিল ৪০। পরে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পোষ্যদের পাশ নম্বর ৪০ থেকে কমিয়ে ২৫ নম্বর নির্ধারণ করে। ফলে সন্তানদের ভর্তির অবারিত সুযোগ তৈরি হয়েছে।
ভর্তির পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নানা ধরনের সুবিধা পান তারা। পড়াশোনা শেষে বিশ্ববিদ্যালয়েই চাকরির সুযোগ মেলে সহজে। বাবা-মায়ের চাকরির সুবাদে চাকরি পাচ্ছেন তার ছেলেমেয়েরা। স্বামী চাকরি করেন, এই সুযোগে চাকরি পেয়ে যাচ্ছেন স্ত্রী।

একাধিক সিনিয়র অধ্যাপক জানান, কোটার মাধ্যমে শিক্ষার্থী ভর্তি করে সন্তানের জন্য চাকরিও নিশ্চিত করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কর্মকর্তা। বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থে পোষ্য কোটা বাতিল প্রয়োজন। কারণ কম নম্বর পেয়ে পোষ্য কোটায় ভর্তি হয়ে তারা আবার এক সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা হয়ে যায়, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবিষ্যতের জন্য হুমকি স্বরূপ।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শহীদুর রশীদ ভুঁইয়া বলেন, ‘আমি উপাচার্যের দায়িত্ব নেওয়ার আগে থেকেই কোটার বিষয়টি নির্ধারণ করা আছে। এখানে কর্মরত শিক্ষক-কর্মকর্তাদের দাবির মুখেই এটা করা হয়েছে। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, কোনো পোষ্য কোটার প্রয়োজন নেই।’

ওএফ