ঢাকা কলেজের মূল ফটকের সামনে দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে ফুচকা বিক্রি করেন মনির হুসেন। তবে শিক্ষার্থীদের কাছে তিনি ‘মনা মামা’ হিসেবে পরিচিত। শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষা সবসময়ই তিনি ঢাকা কলেজের সামনেই বসেন। এমনকি করোনার কারণে দীর্ঘদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার সময়ও বসতেন কলেজের সামনেই।

দীর্ঘ সময়জুড়ে শিক্ষার্থীরা না থাকলেও নিউমার্কেটে আসা ক্রেতা-বিক্রেতাদের কাছে ফুচকা বিক্রি করেই সময় কেটেছে তার। এমনিতে কলেজের শিক্ষার্থীরাই তার ফুচকা এ ভেলপুরির মূল ক্রেতা। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত ফুচকা বিক্রির আয়েই চলে মনির হুসেনের সংসার।

দীর্ঘ সময় ধরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় খুব কষ্টে দিন পার করেছেন জানিয়ে মনির হুসেন বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে ফেরায় ফুচকা বিক্রির মন্দাভাব কেটেছে। ২৫ বছর ধরে ঢাকা কলেজে সামনে ফুচকা বিক্রি করি। এত দীর্ঘ ছুটি আর কখনও দেখিনি। খুব কষ্টে কেটেছে এ সময়টা। এখন আবার শিক্ষার্থীরা ফিরে আসায় বেচাকেনা আগের অবস্থায় ফিরেছে। বিক্রি জমে উঠেছে। স্কুল কলেজ যেন আর বন্ধ না হয়। পরিবার পরিজন নিয়ে আমাদের মতো নিম্ন আয়ের মানুষজনকে খুব কষ্টে সময় কাটাতে হয়।’

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পর থেকে দৈনিক আয়ের মন্দাভাব কেটেছে বলে জানালেন পাশের ঝালমুড়ি বিক্রেতা আব্দুর রশিদও। বললেন, ২০ বছর ধরে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সামনে ঘুরে ঘুরে ঝালমুড়ি বিক্রি করি। গ্রামের বাড়ি ফরিদপুর থেকে ২০০০ সালে জীবিকার টানে ঢাকা আসি। উপার্জনের কোনো পথ না পেয়ে সদরঘাটে বুট-মুড়ি বিক্রি শুরু করি। এরপর সেখানে জায়গা বেহাত হয়ে যাওয়ায় মাথায় নিয়ে ঝালমুড়ির বিক্রি শুরু করি। এই ঝাল মুড়ি বিক্রির টাকায় পরিবার পরিজন নিয়ে দিনাতিপাত করি। গত বছর খুব কষ্ট হয়েছে। বিশেষ করে প্রথম লকডাউনে খেয়ে না খেয়ে কোনো রকমে সময় কেটেছে। ঝালমুড়ির মূল ক্রেতাই হলো শিক্ষার্থী। তারা না থাকলে বেচা-বিক্রি একেবারে কমে যায়।

স্কুল ছুটির পরই ফুসকার দোকানে ভিড় করেন শিক্ষার্থীরা

এদিকে রাজধানীর বিভিন্ন প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুলের সামনে দেখা গেল ফুচকা, আইসক্রিম ও ঝালমুড়ি বিক্রেতাদের রমরমা ব্যবসা। স্বাস্থ্যবিধি ও সুরক্ষা বিবেচনায় দুই থেকে তিন শিফটে ক্লাস হওয়ায় কিছু সময় পরপরই একটি শিফটের শিক্ষার্থীরা ক্লাসে প্রবেশ করছে আবার অন্য শিফটের ছুটি হচ্ছে। ছুটি হওয়া মাত্রই শিক্ষার্থীরা হুমড়ি খেয়ে পড়ছে ঝালমুড়ি ও ফুসকার দোকানে।

সরেজমিনে রাজধানীর গভর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি স্কুলের মূল ফটক ঘুরে দেখা যায়, স্কুল ছুটির পর শিক্ষার্থীরা ফুচকা, ঝালমুড়ি, আইসক্রিম এবং ভাজাপোড়ার দোকানে ভিড় করছে।

রুবাইয়াত হোসেন নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, আমি ফুচকা অনেক পছন্দ করি। কিন্তু আম্মু সাথে আসলে এগুলো খেতে দেয় না। আজকে আম্মু আসেনি তাই খাচ্ছি।

সিয়াম আহমেদ নামে আরেক শিক্ষার্থী বলে, ঝালমুড়ি, ফুচকা এগুলো খাওয়া যদিও স্বাস্থ্যসম্মত নয়। তারপরও ভালো লাগে। সবাই খায় তাই আমিও খাচ্ছি।

ক্ষতিকর জেনেও আবদার রাখতে ফুসকা, ঝালমুড়ি কিনে দিচ্ছেন অভিভাবকরা

আবার স্কুল থেকে নিতে আসা অনেক অভিভাবককেও দেখা গেল দাঁড়িয়ে থেকে সন্তানদের ঝালমুড়ি, ফুচকা কিনে দিতে। রফিকুল ইসলাম নামে এক অভিভাবক বলেন, বাচ্চাদের তৈলাক্ত এবং বাইরের খাবার খাওয়া একেবারেই অনুচিত। কিন্তু তারপরও প্রায় তারা আবদার করে। প্রতিদিন কিনে না দিলেও আবদার রক্ষায় মাঝেমধ্যে এগুলো কিনে দিতে হয়।

এদিকে বেচা-বিক্রি জমজমাট হওয়ায় খুশি বিক্রেতারা। স্কুলের সামনের ফুচকা বিক্রেতার নূর হোসেন বলেন, করোনার আগে দৈনিক দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা বিক্রি হতো। করোনার সময় স্কুল কলেজ বন্ধ থাকায় সেটি নেমে এসেছিল মাত্র ৭০০ থেকে ৮০০ টাকায়। এখন আবার বিক্রির পরিমাণ বেড়েছে।

তবে বিক্রি নিয়ে এখনো সন্তুষ্ট নয় আইসক্রিম বিক্রেতা রিয়াজুল। ঠান্ডা অথবা জ্বরের ভয়ে অভিভাবকরা আইসক্রিম খেতে নিরুৎসাহিত করায় ক্রেতার সংখ্যা একেবারেই কম। কিন্তু দিন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বেচা-বিক্রি বাড়ার প্রত্যাশা তার।

আরএইচটি/এসকেডি