আবুল ফজল, হৈমন্তী শুক্লা কাবেরী ও শাকিলা আলম

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষককে চাকরি থেকে বরখাস্ত এবং দুই শিক্ষককে অপসারণের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। শনিবার (২৩ জানুয়ারি) বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটের ২১২তম সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।  

বরখাস্ত করা শিক্ষক হলেন- বাংলা ডিসিপ্লিনের সহকারী শিক্ষক মো. আবুল ফজল। অপসারণ করা দুই শিক্ষক হলেন- ইতিহাস ও সভ্যতা ডিসিপ্লিনের প্রভাষক হৈমন্তী শুক্লা কাবেরী এবং বাংলা ডিসিপ্লিনের প্রভাষক শাকিলা আলম।

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ ও প্রকাশনা বিভাগের পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) এস এম আতিয়ার রহমান স্বাক্ষরিত এক বার্তায় জানানো হয়, গত ১৮ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত পূর্ববর্তী ২১১তম সিন্ডিকেট সভায় অবাধ্যতা, গুরুতর অসদাচারণের দায়ে একজন শিক্ষককে চাকুরি থেকে বরখাস্ত এবং দুইজন শিক্ষককে চাকুরি থেকে অপসারণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সেটা আজ (২৩ জানুয়ারি) অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেটের ২১২তম সভায় বহাল রাখা হয়। আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ প্রদানে পত্র দেওয়া হলেও এই তিনজন শিক্ষক তাদের জবাবে ক্ষমা বা দুঃখ প্রকাশ করেননি।

এর আগে, গত ১৮ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটের ২১১তম সভার সিদ্ধান্তে ওই তিন শিক্ষকের বিরুদ্ধে শাস্তির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে নিয়ম অনুযায়ী রেজিস্ট্রার স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে তাদের স্ব স্ব নামে কেন তাদের বরখাস্ত এবং অপসারণ করা হবে না মর্মে আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য চিঠি দেওয়া হয়। অভিযুক্ত তিনজন নির্ধারিত ২১ জানুয়ারি দুপুরের মধ্যে ওই চিঠির জবাব দেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সূত্রে জানা গেছে, তারা জবাব দিলেও কোনো রকম দুঃখ প্রকাশ বা ক্ষমা চাননি। নিয়ম অনুযায়ী শনিবার (২৩ জানুয়ারি) অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেটের ২১২তম সভায় পূর্ববর্তী ২১১তম সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত এবং তিন শিক্ষককে দেওয়া আত্মপক্ষ সমর্থনে জবাব নিয়ে দীর্ঘ পর্যালোচনা করা হয়। শেষে সিন্ডিকেট তাদের চূড়ান্তভাবে বরখাস্ত এবং অপসারণের সিদ্ধান্তের চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়।

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মোহাম্মদ ফায়েক উজ্জামান বলেন, দীর্ঘ সময়ে কাজ করতে গিয়ে তিনি সব সময়ই সবার আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিয়েছেন। দলমত নির্বিশেষে সবাইকে নিয়ে কাজ করতে চেষ্টা করেছেন এবং বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি কোয়ালিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত করতে নিরন্তর চেষ্টা করেছেন।

তিনি বলেন, কাজ করতে গিয়ে তিনি কারও প্রতি ব্যক্তিগতভাবে বিরাগভাজন বা ব্যক্তিগত ঈর্শ্বাপরায়ণ হয়ে কোনো পদক্ষেপ নেননি। প্রতিষ্ঠানের স্বার্থে, প্রতিষ্ঠানের নিয়মকানুন সমুন্নত রাখতে বেশ কিছু বিষয় সামনে চলে আসে। অপ্রিয় হলেও প্রচলিত বিধিবিধানের কারণে সে বিষয় নিষ্পত্তি করতে গিয়ে কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এসব কিছু বিশ্ববিদ্যালয়কে সামনে এগিয়ে নেওয়ার স্বার্থে করা হয়েছে। 

তবে তিনি বলেন, মানুষ হিসেবে আমরা ভুল করতেই পারি। কিন্ত সেই ভুলের জন্য দুঃখবোধ বা অনুশোচনা থাকাটা জরুরি। ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে জীবনে সামনে এগোতে হয় এটাই জীবনের বাস্তবতা।

এছাড়া খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটের ২১২তম সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের নকশা অনুমোদনসহ গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এছাড়া দুইজন গবেষককে পিএইচডি ডিগ্রির প্রাপ্তির চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়। পিএইচডি ডিগ্রি প্রাপ্তরা হলেন- ফরেস্টি অ্যান্ড উড টেকনোলজি ডিসিপ্লিনের শিক্ষার্থী মো. নাছিম রানা এবং তানিয়া ইসলাম।

উপাচার্য প্রফেসর ড. মোহাম্মদ ফায়েক উজ্জামানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেট সভায় উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. মোসাম্মাৎ হোসনে আরা উপস্থিত ছিলেন। সভায় নতুন সদস্য প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব-২ ওয়াহিদা আক্তার, প্রফেসর ড. মো. মনিরুল ইসলাম, প্রফেসর এ কে ফজলুল হক, প্রফেসর ড. মোঃ আব্দুল জব্বার, ড. নিহার রঞ্জন সিংহকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানানো হয়। 

এছাড়া সিন্ডিকেট সদস্য প্রফেসর ড. মুনতাসীর মামুন, প্রফেসর ড. আনন্দ কুমার সাহা, প্রফেসর ড. মো. মাহবুবুর রহমানসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ক্যাটাগরির অন্যান্য সদস্য সভায় উপস্থিত ছিলেন। 

সিন্ডিকেটের অপর দুই সদস্য খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য বর্তমানে ইউজিসির সদস্য প্রফেসর ড. মুহাম্মদ আলমগীর ও খুলনা বিভাগীয় কমিশনার মো. ইসমাইল হোসেন এনডিসি অনলাইনে যুক্ত থেকে এ সভায় অংশগ্রহণ করেন।

সভায় ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে বক্তব্য রাখেন সিন্ডিকেট সদস্য ইউজিসির সদস্য ও কুয়েটের সাবেক উপাচার্য প্রফেসর ড. মুহাম্মদ আলমগীর, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. আনন্দ কুমার সাহা, প্রফেসর মুনতাসীর মামুন, খুলনা বিভাগীয় কমিশনার মো. ইসমাইল হোসেন এনডিসি, প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব-২ ওয়াহিদা আক্তার, প্রফেসর ড. মো. মাহবুবুর রহমান, প্রফেসর ড. মো. সারওয়ার জাহান, প্রফেসর ড. মাহমুদ হোসেন, প্রফেসর ড. ওয়ালিউল হাসানাত, প্রফেসর ড. মো. আব্দুল জব্বার এবং সিন্ডিকেটের সচিব প্রফেসর খান গোলাম কুদ্দুস।

সিন্ডিকেট সভা শেষে উপাচার্য জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর জন্মশতবার্ষিকী মুজিববর্ষ উপলক্ষে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় আর্কাইভের উদ্বোধন করেন। এ সময় উপ-উপাচার্য, ট্রেজারার এবং সিন্ডিকেট সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। 

এসপি