রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে আসা বিদেশি শিক্ষার্থী, এমফিল, পিএইচডি গবেষকদের আবাসনের ব্যবস্থা করা হয় শহীদ মীর আব্দুল কাইয়ুম ইন্টারন্যাশনাল ডরমিটরিতে। তবে নামে আন্তর্জাতিক ডরমেটরি হলেও নেই তেমন সুযোগ সুবিধা। ডরমেটরিতে অবস্থানকারীরা কার্যত বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ আবাসিক হলের সুবিধাও পান না বলে অভিযোগ রয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ডরমেটরিটিতে পিএইচডি আর এমফিল গবেষক আছেন ৩২ জন। আর ৯৬ জন বিদেশি শিক্ষার্থীর আবাসন বরাদ্দ থাকলেও থাকেন ৬০ জনের মতো। ডরমেটরিতে তাদের জন্য নেই বিনামূল্যে ইন্টারনেট সুবিধা। ফলে নিজ খরচে ডাটা কিনে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে হয়। তাদের ব্যবহারের জন্য নেই কোনো কম্পিউটার ল্যাব। নেই লাইব্রেরিও। দুয়েকটা রুমে ভালোমানের খাট আর টেবিল থাকলেও বেশিরভাগ রুমেই সেগুলো নেই। প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র রাখার জন্য নেই কোনো আলমারি যা সাধারণ হলগুলোতেও থাকে। বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা না থাকায় প্রতিদিন কেনা পানিতেই চাহিদা মেটাতে হয়।

ডরমেটরিতে অবস্থান করা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রুমের ফ্যান, লাইট, পানির ট্যাপ কোনো কিছু নষ্ট হলে নিজের টাকা খরচ করে মেরামত করতে হয়। বাবা-মা বা পরিবারের কেউ এলে দিন প্রতি হোটেলের মতো ভাড়া দিয়ে রাখতে হয়।

তবে ডরমেটরি প্রশাসনের দাবি, পুরো ডরমেটরি পরিষ্কার করার জন্য মাত্র একজন লোকবল আছে তাদের। আর বিশুদ্ধ পানির জন্য সাবমারসিবল পাম্প আছে আগে থেকেই। ওয়াশরুমগুলো ব্যক্তিগত রুমের সঙ্গে যুক্ত থাকায় রুমে রুমে গিয়ে পরিষ্কার করতে পারে না দায়িত্বরত ব্যক্তি।

ডরমেটরির আবাসিক শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের এমফিল গবেষক আব্দুল মজিদ অন্তর বলেন, ভবনের ভেতরে ঢুকে দেয়ালগুলোর দিকে তাকালে মনে হবে দীর্ঘদিন ধরে অযত্নে, অবহেলায় পড়ে থাকা কোনো পরিত্যক্ত ভবন। জায়গায় জায়গায় পলেস্তারা খসে পড়ছে, রঙ ফ্যাকাশে হয়ে গেছে, বেলকনিতে শ্যাওলা জমে গেছে, কোথাও কোথাও মাকড়শার জাল ঝুলছে এবং বারান্দাতেও ময়লা জমে আছে। চারপাশের পরিবেশ অপরিচ্ছন্ন থাকায় রুমগুলোতে মশার অত্যাচারে ঘুমানো যায় না।

তিনি আরও বলেন, এটা হওয়া উচিৎ ছিল অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্পন্ন আন্তর্জাতিক মানের মডেল ডরমেটরি। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেট ছাড়াও এখানে রুম ভাড়া থেকেই প্রতি মাসে আয় হয় প্রায় ৫০ হাজার টাকা। এই টাকাগুলো কোন খাতে ব্যয় হয় তা জানা নেই।

এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, এখানে যেহেতু বেশির ভাগ বিদেশি শিক্ষার্থী থাকেন, তাই তারা এগুলো নিয়ে তেমন প্রশ্ন তোলার সুযোগ পায় না।

ডরমিটরিতে অবস্থানকারী দেশি-বিদেশি শিক্ষার্থী ও গবেষকরা তাদের সমস্যাগুলো তুলে ধরে ৯ দফা দাবি জানিয়েছেন। রোববার (২৪ অক্টোবর) সকালে ডরমেটরির ওয়ার্ডেন অধ্যাপক আশাদুল ইসলামের কাছে তারা লিখিতভাবে এসব দাবি জানান। এতে বিদেশি শিক্ষার্থীদের পক্ষে স্বাক্ষর করেছেন নেপালী শিক্ষার্থী নবীন কার্লার দাশ, পিএইচডি গবেষক মো. মনিরুল ইসলাম ও এমফিল গবেষক আব্দুল মজিদ অন্তর।

তারা বলছেন, আমরা চাই ডরমেটরিকে আমূল সংস্কার করে আধুনিকায়ন করা হোক। বিদেশি শিক্ষার্থীদের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করে রাবির তথা দেশের সম্মান রক্ষা করা হোক। সাত দিনের মধ্যে যদি সমাধানের উদ্যোগ গ্রহণ না করা হয় তাহলে কঠোর অবস্থানে গিয়ে সমাধানের উদ্যোগ নিতে বাধ্য হবো।

ডরমেটরি ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে দেওয়া তাদের দাবিগুলো হলো- ডরমেটরিতে ফ্রি ইন্টারনেট সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে।প্রতিটি রুমে উন্নতমানের খাট, টেবিল ও আলমারির ব্যবস্থা করতে হবে এবং মেঝেতে টাইলস বসাতে হবে। ডরমেটরিতে উন্নত মানের লাইব্রেরি ও কম্পিউটার ল্যাব স্থাপন করতে হবে। বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের ব্যবস্থা করতে হবে। কর্মচারীদের জন্য নির্দিষ্ট ড্রেস কোড চালু বাধ্যতামূলক করতে হবে। আবাসিক শিক্ষার্থী ও গবেষকদের গেস্টের জন্য গেস্ট রুম ভাড়া ৫০ শতাংশ ছাড় দিতে হবে অথবা নিজরুমে গেস্ট রাখার সুযোগ দিতে হবে। প্রতি মাসে নিয়মিত সেমিনার ও মতবিনিময় সভার আয়োজন করতে হবে। প্রতিদিন ডরমেটরিকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। রুমের ফ্যান, লাইট, পানির ট্যাপ নষ্ট হলে ডরমেটরির উদ্যোগে ও খরচে মেরামত করতে হবে এবং সম্পূর্ণ ডরমেটরিকে সংস্কার করে আন্তর্জাতিকমানে উন্নীত করতে হবে।

এসব সংকট ও সমস্যা নিয়ে কথা হয় ডরমেটরির ওয়ার্ডেন অধ্যাপক আশাদুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, এসব ডরমেটরির নিজস্ব কোনো নিয়ম না। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নিয়ম। এসব নিয়ে প্রো-ভিসি স্যার ডেকেছেন। আমি যাচ্ছি। আন্তর্জাতিক মানের করে গড়ে তুলতে আমি আগেই চিঠি দিয়েছিলাম। পর্যায়ক্রমে কাজগুলো হবে।

এসপি