রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ও আবাসিক হলের নির্মাণ কাজের জন্য ক্যাম্পাসে চলাচল করছে ভারী ভারী ট্রাক। মাত্র কয়েক দিনের ব্যবধানে পিচ-ঢালাই উঠে খানাখন্দে পরিণত হয়েছে ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরীণ সরু সড়কগুলো। এতে যানবাহন চলাচলের উপযোগিতা হারানোর পাশাপাশি হেঁটে চলাচলেও ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ছাত্রীদের জন্য তৈরি করা হচ্ছে ১০ তলাবিশিষ্ট দেশরত্ন শেখ হাসিনা হল। একইভাবে ছাত্রদের জন্য করা হচ্ছে শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামান হল। এ দুটোর বাইরে একাডেমিক ভবনের সংকট কাটাতে একটি ২০ তলাবিশিষ্ট একাডেমিক ভবনের কাজ চলছে। 

প্রকল্প এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, মাত্র একটি ভবনের পাইলিংয়ের কাজ শুরু হয়েছে। অন্য দুটিতে চলছে ভূমি উন্নয়নের কাজ। যদিও প্রশাসনের পরিকল্পনা অন্তত বেজমেন্টের কাজ শেষ করে রাস্তা সংস্কার করা হবে।

প্রশ্ন উঠেছে, সড়কগুলোতে এত ভারী ট্রাক চলাচলের উপযোগী কি না? মাত্র এক ইঞ্চি পিচ-ঢালাই দেওয়া রাস্তা দিয়ে কীভাবে মালামাল পরিবহন করা হবে সে সম্পর্কিত নির্দেশনা কী? 

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলোর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রকল্পের শুরুতে যে ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট প্রপোজাল বা ডিপিপি দেওয়া হয়েছিল তাতে প্রধান সড়ক থেকে প্রকল্প এলাকায় মালামাল নিয়ে যাওয়ার খরচের বিষয়টি উল্লেখ করা হয়নি। ফলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ভারী ট্রাকেই মালামাল ক্যাম্পাসের সড়ক ব্যবহার করে প্রকল্প এলাকায় নিয়ে যাচ্ছেন। প্রকল্পের মধ্যে এ সংক্রান্ত ব্যয় বরাদ্দ থাকলেও সংশ্লিষ্টদের দাবি ছোট গাড়িতে মালামাল আনতে ব্যয় বাড়তে পারে অনেক বেশি। ব্যয় বাড়ার অজুহাতে ১৫ টনের বেশি লোডের গাড়ি প্রবেশ করানো হচ্ছে ক্যাম্পাসে। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সড়কগুলো।

সরেজমিনে দেখা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের মাদার বক্স হলের মোড় থেকে শুরু করে জিয়া হলের সামনের সড়ক হয়ে হবিবুর রহমান হলের সড়কটি সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভারী ভারী ট্রাকে করে আনা হচ্ছে বিভিন্ন মালামাল। অথচ ক্যাম্পাস খোলার দিনও ঠিকঠাক ছিল সড়কগুলো। সপ্তাহ খানেকের ব্যবধানে সড়কের বিভিন্ন স্থানে বড়-বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। ভেঙে যাওয়া অংশের সামনে এসে গাড়ি থেকে যাত্রী নামিয়ে খালি গাড়ি পার করাও কঠিন হয়ে পড়েছে।

হাসান খান নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের এক শিক্ষার্থী বলেন, আগে রাস্তাটা ভালো ছিল। কিন্তু এখন এখানে আমাকে ৫-১০ মিনিট দাঁড়িয়ে থাকা লাগবে। দেখেন রাস্তার কী অবস্থা? ঘুরে যেতে হলে অনেক সময় লাগবে।

রসায়ন বিভাগের শিক্ষার্থী শাকিল হোসেন বলেন, ভারী ভারী গাড়ি চলার কারণে এমন বেহাল দশা হয়েছে। যতদিন কাজ চলবে ততদিন এই সমস্যা থাকবে। পাশাপাশি শীতের সময় ধুলার পরিমাণ এত বেড়ে যাবে, রাস্তা দিয়ে চলাচল করাই দুষ্কর হয়ে পড়বে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলী আবুল কালাম আজাদ বলেন, এ ভোগান্তির জন্য আমি নিজেও খুব মর্মাহত। কিন্তু আপাতত এভাবেই বেজমেন্টের কাজ শেষ করতে চাই। কিন্তু এভাবে কত দিন? ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে প্রকল্পের মেয়াদও। তিনি জানান, শিক্ষার্থীদের স্বার্থে এসব উন্নয়ন প্রকল্প। তাই কটা দিন একটু কষ্ট সহ্য করতে হবে।

কিন্তু কবে নাগাদ রাস্তা সংস্কার করা হবে? শিক্ষার্থী ও পথচারীদের উদ্বেগ লাগবে আপাতত কোনো সুখবর নেই তার কাছে। সময়ের বিষয়ে স্পষ্ট করে কিছু বলতে পারেননি তিনি। তিনি বলছেন, আপাতত তিনটি প্রকল্পেরই বেজমেন্টের কাজ শেষ করতে চান তারা। কিন্তু যেখানে প্রকল্পের মেয়াদই এর মধ্যে শেষ হয়ে গেছে সেখানে বেজমেন্টের কাজ শেষ করার সময়সীমা নিয়ে সংশয় থেকেই যায়।

এসপি